‘‘অভিনয়ের ক্ষেত্রেও আমি যেমন স্বতঃস্ফূর্ততায় বিশ্বাসী, রূপচর্চার বিষয়েও তাই। রূপ মানে স্বাস্থ্য, এ-ই বুঝি।’’ অভিনয় থেকে সৌন্দর্য, নতুন যুগের নায়িকাদেরও টেক্কা দিতে পারেন একা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
১৯৮৯ সালে প্রথম বার পর্দায় অভিনয় করেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তার পর কেটে গিয়েছে ৩৬টি বছর। তার মাঝে রূপচর্চা-ত্বকচর্চায় কত রকমের ধারা এল ও গেল। ঋতুপর্ণা আজও পর্দায় অভিনয় করছেন। তাঁর রূপে আজও মজে বাংলা। তা হলে কি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের রূপচর্চায় পরিবর্তন এনেছেন টলিউডের নায়িকা? না কি ভরসা করেন নিজের পুরনো ভিতকেই? দুর্গাপুজোর আগে ঋতুপর্ণার রূপরহস্য আপনার পথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে পারে। খুব সহজেই।
ত্বকচর্চা না করেই সুন্দর— এমন দাবি করেন না ঋতুপর্ণা। তবে তার মূলে রয়েছে স্বাস্থ্যের যত্ন, মনের যত্ন। খুব সম্প্রতি নিজের মাকে হারিয়েছেন অভিনেত্রী। তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে ২০১০ সালে। আজ নিজের যত্নের প্রসঙ্গ উঠলে এই দুই মানুষের কথাই মনে পড়ে নায়িকার। ছোট থেকে বাবার থেকে শুনে এসেছেন, ‘‘পেট পরিষ্কার রাখা সবার আগে জরুরি। সকালে উঠেই আগে শৌচালয়ের কাজ সারতে হবে। সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতে হবে, পেটের গন্ডগোল হলে ইসবগুলের ভুষি খেতে হবে।’’ মা নিয়ম করে তেতো খাওয়াতেন। কোনও দিন চিরতার জল, কোনও দিন থানকুনি পাতার রস, কখনও বা উচ্ছের রস। যদিও কালমেঘ নিয়ে এলে উল্টো দিকে দৌড় দিতেন খুদে ঋতুপর্ণা। তখন রাগ হত মায়ের উপর। আজ তিনি বুঝতে পারেন, মা-বাবার এই সমস্ত টোটকাই আজ তাঁকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। নয়তো এখন রাতে এত কম ঘুমিয়ে, এত পরিশ্রম করেও সুস্থ থাকেন কী ভাবে?
ছোটবেলায় ঋতুপর্ণার মা কমলালেবুর খোসা বেটে দুধের সর মিশিয়ে দিতেন। সেগুলি মাঝেমধ্যেই মুখে মাখতে হত তাঁকে। সপ্তাহে এক দিন মাথায় তেল মেখে শ্যাম্পু করতেন। হাওয়ায় চুল শুকিয়ে চুলের স্বাস্থ্য ভাল থাকত। ঋতুপর্ণার কথায়, ‘‘তখন তেল মাসাজ করাতে বা শ্যাম্পু করাতে গিয়ে মায়ের হাত ব্যথা হয়ে যেত। কারণ, এত ঘন ছিল চুল!’’ বাবাকে রোজ মুখে নারকেল তেল মেখে স্নান করতে যেতে দেখতেন। রাতের বেলায় শোয়ার আগে ময়েশ্চারাইজ়ার না মেখে ঘুমোতেন না তাঁর বাবা। এখন যখন সবাই সমাজমাধ্যমে ঘরোয়া উপাদানের প্রচার করেন, তখন অবাক হন ঋতুপর্ণা। ভাবেন, কত বছর আগে বাবা-মা তো এই কথাই বলতেন! এখন কানে বাজে সে সব।
রোজের রুটিন তাঁর খুবই সাদামাঠা। রোজ ঘণ্টা চারেক ঘুমিয়েও চোখের তলায় কালি পড়ে না ঋতুপর্ণার। তবে তার নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ এক কারণ। পাওয়ার ন্যাপ বা বিউটি স্লিপ-এর বিষয়ে বেশ পারদর্শী অভিনেত্রী। ঘুম পেলে বা ক্লান্ত বোধ করলে চট করে মিনিটখানেক ঘুমিয়ে নিতে পারেন। আর তাতেই অনেক উপকার পান ঋতুপর্ণা। অভিনয়জীবনের শুরুর দিকে যেমন সাদামাঠা রূপচর্চা করতেন, তারকা হওয়ার পরেও একই থেকে যায় তাঁর রুটিন। আগে কেবল একটি ময়েশ্চারাইজ়ার দিয়েই মেকআপ তুলে নিতেন, এখনও তাই। ময়েশ্চারাইজ়ারের পর মুখ ধুয়ে ফেলতেন তিনি। এ ছাড়া সকালে উঠে বা মেকআপ তোলার পর বরফের টুকরো গালে বুলিয়ে নিতেন। আগে সানস্ক্রিন না থাকায় রোদেপোড়া যেন রোজের গল্প। ত্বকের উপর বেশ অত্যাচার চলত। কিন্তু তা থেকে মুক্তি পেতেও টোটকা প্রয়োগ করা হত। রূপটানশিল্পীকে বলে মেকআপের পুরু স্তর ও প্যান কেক দিয়ে দেহের উন্মুক্ত অংশে মেখে নিতে হত, এর ফলে ট্যানের সমস্যা কমে যেত অনেকখানি। শুটিং সেরে দুধ, ময়দা, টম্যাটোর রস, লেবুর রস মেখে রাখতেন, যাতে রোদেপোড়ার সমস্যা কমে।
ত্বকচর্চা বললেই ঋতুপর্ণার মনে পড়ে মায়ের কথা, ‘‘আমার ছেলেমেয়েকেও ময়দার সঙ্গে দুধের সর মিশিয়ে মাখিয়ে দিতেন মা। ওরা তো ছুটে পালাত। কিন্তু মা বলতেন, তোমাদের মাকেও মাখিয়েছি, তোমাদেরও তা-ই অভ্যাস করাব।’’ মায়ের পাশাপাশি শর্মিলা ঠাকুরের রূপচর্চার টোটকা শুনতে ভালবাসেন ঋতুপর্ণা। তাঁর মা-বাবার মতোই প্রাকৃতিক উপাদানে বিশ্বাসী বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। একসঙ্গে অভিনয় করার সময়ে ঋতুপর্ণা জানতে পারেন, শর্মিলাও ত্বক ও রূপের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোনো, স্বাস্থ্য ভাল রাখায় বিশ্বাসী।
আজ ঋতুপর্ণাও মনে করেন, স্বাস্থ্যই সম্পদ। ধূমপান, মদ্যপান না করার ফলে ত্বক ভাল থাকে বলে বিশ্বাস অভিনেত্রীর। তা ছাড়া মন ভাল রাখার চেষ্টা করেন ঋতুপর্ণা। মন ভাল না থাকলে ত্বকে ছাপ পড়ে। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘ত্বকে অতিরিক্ত পণ্য ব্যবহার করলে আলগা শ্রী নষ্ট হয়ে যায়। মা বলতেন, এখন আমিও বিশ্বাস করি।’’