সময়ের সঙ্গে ফ্যাশনের সংজ্ঞা বদলাতে থাকে। ফ্যাশন কখনও ফিরেও আসে। যেমন এই মুহূর্তে চর্চায় রয়েছে ‘ওভার সাইজ়ড’ বা ‘অ্যান্টি ফিট’ ফ্যাশন। অর্থাৎ, দেহের মাপের তুলনায় বড় আকারের পোশাক। অনলাইনে নামী সংস্থা থেকে শুরু করে শহরের পরিচিত পোশাক বিপণিতেও ওভার সাইজ়ড পোশাকের বাড়বাড়ন্ত। আসন্ন দুর্গাপুজোতেও পশ্চিমি পোশাকের এই ট্রেন্ড নতুন পথের দিশারি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
আমেরিকায় হিপ হপ সংস্কৃতি এবং স্ট্রিট ফ্যাশনের অঙ্গ হিসাবে আশির দশকে অল্পবয়সিদের মধ্যে দেহের মাপের চেয়ে বড় আকারের পোশাকের চল শুরু হয়। নেপথ্যে একটাই ভাবনা, বড় আকারের টি-শার্ট বা ঢোলাঢালা জিন্স পরলে তা আরামদায়ক হয়। পাশাপাশি, রং এবং ডিজ়াইনের চমকে নিজেকে মৌলিক ভাবে মেলে ধরা যায়। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয়েরা বিভিন্ন ভাবে কোরিয়ান সংস্কৃতিকে অনুকরণ করতে শুরু করেছে। কোরিয়ান খাবারের মতো তাদের ফ্যাশনও এ দেশের বাজার দখল করতে শুরু করেছে। শুরুটা হয়েছিল ওভার সাইজ়ড টি-শার্টের মাধ্যমে। তার পর ট্রাউজ়ার্স ঢিলেঢালা হতে শুরু করে। শার্ট থেকে শুরু করে হুডি বা সোয়েড শার্টও এখন ওভার সাইজ়ড। তার পাশাপাশি, অন্য রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলছে।
স্টাইলিস্ট এবং ফ্যাশন সচেতন বৃত্তের একাংশ মনে করে, ওভার সাইজ় ফ্যাশনের নেপথ্যে বলিউড তারকারাও অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছেন। এখন সমাজমাধ্যমে তারকাদের ‘এয়ারপোর্ট লুক’ চর্চিত। একটা সময়ে তারকারা নিজেদের প্রকাশ্যে মেলে ধরতে নিখুঁত সাজে বিশ্বাস করতেন। সেখানে স্যুট-টাই থেকে শুরু করে ব্লেজ়ার বা শার্ট ছিল অন্যতম। কিন্তু আঁটসাঁট পোশাকের ঘেরাটোপের তুলনায় এখন তাঁদের কাছে কমফোর্ট ফ্যাশন গুরুত্বপূর্ণ। তাই জিম থেকে শুরু করে কেনাকাটা এবং বিমানবন্দরে ক্যাজ়ুয়াল লুকেই তাঁরা বিদ্যমান। রণবীর সিংহের রংচঙে পোশাক থেকে শুরু করে দিলজিৎ দোসাঞ্জের অতিরিক্ত ঘের দেওয়া জিন্স এখন অল্পবয়সিদের আকর্ষণ করে। তালিকায় দীপিকা পাড়ুকোন, আলিয়া ভট্টরাও রয়েছেন। বাংলার টলিপাড়ায় অভিনেতা দেবকেও মাঝেমধ্যে ওভার সাইজ়ড পোশাকে দেখা যায়।
ওভার সাইজ়ড পোশাকে পুষ্পক সেন। পোশাক: অনুপম চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
ওভার সাইজ়ড পোশাক নিয়ে চর্চা কেন? স্টাইলিস্ট সন্দীপ জয়সওয়ালের মতে, কোরিয়ান ফ্যাশন থেকে এই ধারা কয়েক বছর আগে ভারতীয় ফ্যাশনে প্রবেশ করেছে। সন্দীপের কথায়, ‘‘আসলে এগুলো স্কোয়ার সাইজ়, যেখানে ব্যক্তির কাঁধ থেকে পোশাকের কাঁধের ঝুল একটু বেশি থাকে। আমরা সেটাকে ওভার সাইজ়ড নাম দিয়েছি।’’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষদের চেহারা ছোটখাটো। চৌকো আকারের পোশাকে তা আড়াল করা যায়। পাশাপাশি, এই ধরনের পোশাক ভারতের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে আরামদায়কও বটে। সন্দীপের যুক্তি, ‘‘আগেকার দিনে বাবু পাজামার চল ছিল। সেখান থেকে ক্রমান্বয়ে আলিগড়ি পাজামা এবং চুড়ি পাজামা আসে।’’ অনেক সময়ে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে কোনও ফ্যাশন ট্রেন্ড তৈরি হয়। তবে ওভার সাইজ়ড পোশাক পুজোর পরেও বাজারে প্রাসঙ্গিক থাকবে বলেই মনে করছেন সন্দীপ।
ওভার সাইজ়ড পোশাক পরতে পছন্দ করেন অভিনেতা শন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
টলিপাড়ার তরুণ প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে শন বন্দ্যোপাধ্যায় ওভার সাইজ়ড পোশাক পরতে পছন্দ করেন। অভিনেতার সমাজমাধ্যমের পাতায় মাঝেমধ্যেই তার ঝলক মেলে। শন বলছিলেন, ‘‘গরমের সময়ে পাতলা কাপড়ের ঢিলেঢালা পোশাক পরলে সেটা খুবই আরামদায়ক হয়।’’ স্কুলজীবন থেকেই শন নিজে আমেরিকার হিপ-হপ সংস্কৃতির ভক্ত। তাই তাঁর আলমারিতে ব্যাগি ফিট টি-শার্ট এবং হাফ প্যান্ট থাকেই। বাড়িতে এই ধরনের পোশাকে আরামদায়ক অনুভব করেন তিনি। পুজোর সময়েও শনের ওভার সাইজ়ড পোশাক পরার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্থূলত্ব বা শীর্ণকায় চেহারাকে বড় আকারের পোশাকে সহজেই আড়াল করা যায়। তাই ওভার সাইজ়ড ফ্যাশন ব্যক্তির মনোবল বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করেন পোশাকশিল্পী ও স্টাইলিস্ট অনুপম চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘অতিমারির পর থেকেই দেখছি মানুষ বুঝে টাকা খরচ করছেন। আগে কেউ পুজোয় ৫টা পাঞ্জাবি কিনলে এখন ৩টে কিনছেন এবং চেষ্টা করছেন তা যেন দীর্ঘদিন বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায়।’’ সে ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা বড় আকারের পোশাক প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে বলে মনে করেন অনুপম।
এক সময়ে ওভার সাইজ়ড পোশাক প্রথম সারির পোশাকশিল্পীরা তৈরি করতেন। তবে ফ্যাশন ট্রেন্ড এখন তা মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে বলে জানালেন অনুপম। ফলে পুজোর ফ্যাশনেও তা সহজেই জায়গা করে নিয়েছে। মেয়েদের ঢিলেঢালা জিন্স এখন ফ্যাশন দুনিয়ায় ‘বয়ফ্রেন্ড ডেনিম’ নামে পরিচিত। তার সঙ্গে অনেকেই ওভারসাইজ়ড ক্রপ টপ পরছেন বলে জানালেন অনুপম। পুরুষদের ক্ষেত্রে ‘ম্যাক্সি জোব্বা’ও এখন জনপ্রিয় বলে মত তাঁর। অনুপম বললেন, ‘‘‘বডি শেমিং’ বা কাকে কেমন দেখতে, তা নিয়ে ওভারসাইজ়ড ফ্যাশন বিব্রত নয়। দিনের শেষে আরামদায়ক এবং দেখতে ভাল লাগছে বলেই মানুষ এই ধরনের পোশাক আরও বেশি করে পরছেন।’’ এখন পুজোর ফ্যাশনে ওভার সাইজ়ড পোশাকের দাপট কেমন থাকে, সেটাই দেখার।