পুজো আসতে আর হাতে গোনা দিন বাকি। সারা বছর অনলাইনে কেনাকাটা সারলেও, সশরীরে দশটা দোকান ঘুরে জিনিসপত্র বাছাই করতে না পারলে পুজোর বাজার যেন সম্পূর্ণ হয় না! কলকাতার বাজারগুলিতে একেবারে সাজসাজ রব। পরিবারের লোকজনকে নিয়ে কেনাকাটা করতে গড়িয়াহাট, এসপ্ল্যানেড, কলেজ স্ট্রিট, হাতিবাগানের বিভিন্ন দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন। নিজের পোশাক থেকে শুরু করে শিশুদের জন্য কেনাকাটা, এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনের জন্যও কিনতে হবে পুজোর উপহার। শহরের বাজারগুলিতে এ বছর নতুন কী? যদি গড়িয়াহাট থেকে পুজোর কেনাকাটা করার পরিকল্পনা থাকে, তা হলে আনন্দবাজার ডট কমের চোখে ঘুরে দেখতে পারেন বাজারের অলিগলি। এ বছর নতুনের তালিকায় কী কী থাকছে, রইল হদিস।
নীনা গুপ্তর মতো ‘মাসাবা কাট’ ব্লাউজ়ের নকশা পেয়ে যাবেন গড়িয়াহাটে। ছবি: সংগৃহীত।
ব্লাউজ়: যদি এখনও শাড়ির সঙ্গে মানানসই ব্লাউজ় কেনা না হয়ে থাকে, তা হলে গড়িয়াহাটে এক বার ঢুঁ মারতে পারেন। অল্প দামে ডিজ়াইনার ব্লাউজ়ের সম্ভার পেয়ে যাবেন সেখানে। এ বছরের ফ্যাশনে ‘মাসাবা কাট’ ব্লাউজ় ভীষণ ‘ইন’। সিল্ক থেকে সুতি, বিভিন্ন কাপড়ের উপর বিভিন্ন নকশার ‘মাসাবা কাট’ ব্লাউজ় পেতে এক বার গড়িয়াহাট ঘুরে আসতেই পারেন। এ ছাড়া এ বার কলারযুক্ত ব্লাউজ়ের চাহিদা বেশি, সে রকম ব্লাউজ়েরও অজস্র কালেকশন গড়িয়াহাটে পেয়ে যাবেন। ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যেই এই সব ব্লাউজ় পেয়ে যাবেন।
একটা ক্রপ টপ কিনে সোহীনি সরকারের মতো স্টাইল করে ফেলতেই পারেন।
ক্রপ টপ: এ বছর পুজোর ফ্যাশনে ক্রপ টপের চাহিদা তুঙ্গে। শাড়ি, স্কার্ট, জিন্স কিংবা স্ট্রেট ট্রাউজ়ার— সঙ্গে একটা ভাল ক্রপ টপ পরে নিলেই ষষ্ঠী কিংবা সপ্তমীর সাজ একেবারে তৈরি। গড়িয়াহাটে এ বছর ক্রপ টপের সম্ভার বেশ চোখে পড়ার মতো। ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে সুতির কাপড়ের ক্রপ টপ পেয়ে যাবেন বাজারে। নুড্লস স্ট্র্যাপের ক্রপ টপ থেকে কলারযুক্ত ক্রপ টপ— বিকল্প আছে অনেক।
বোহো স্টাইল পোশাকের খোঁজ করলে এ বছর কিন্তু গড়িয়াহাটে ঢুঁ মারতেই পারেন, হতাশ হবেন না। — নিজস্ব চিত্র।
বোহো স্টাইল পোশাক: জমকালো শাড়ি-গয়নার ভিড়েও ইদানীং রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে বোহেমিয়ান সাজ। এ নিয়ে চর্চা এতটাই যে, শাড়ি-সালোয়ার, কুর্তি, স্কার্ট, জিন্স-টপের মাহাত্ম্যে ভাগ বসিয়ে এ প্রজন্মের আলমারি ছেয়ে যাচ্ছে লুজ় ফিটের টপ, শার্ট, কুর্তি, স্কার্ট, পালাজ়ো, ধোতি প্যান্টে। সে রকম পোশাকের খোঁজ করলে এ বছর কিন্তু গড়িয়াহাটে ঢুঁ মারতেই পারেন, হতাশ হবেন না। ভিন্টেজ ফ্লোরাল প্রিন্ট, চেক্স বা কোয়ার্কি প্রিন্টের স্কার্ট, টপ, ধোতি প্যান্ট, কুর্তি— গড়িয়াহাটের বাজারে অল্প দামেই পেয়ে যাবেন রকমারি সম্ভার।
সাদা-লাল শাড়ির সম্ভার পেতে গড়িয়াহাটে এক বার ঢুঁ মারতে পারেন। — নিজস্ব চিত্র।
সাদা-লাল শাড়ি: অষ্টমীর অঞ্জলি হোক বা দশমীর দিন মাকে বরণ, পুজোয় একটা সাদা-লাল শাড়ি তো কিনতেই হবে। গড়িয়াহাটের বাজারে এ বছর সাদা লাল শাড়ির সম্ভার চোখে পড়ার মতো। দুর্গার মুখ আঁখা থেকে শিউলি ফুলের নকশা— সুতির শাড়িতে এমন ছাপ আপনার নজর কাড়বেই। ৪০০ থেকে ৬০০ টাকাতেই এমন শাড়ি কিনে ফেলতে পারবেন। শাড়ি কেনাকাটার জন্য গড়িয়াহাট বাজারের কোনও তুলনা নেই। সিল্ক থেকে তাঁত, শিফন থেকে জামদানি, পাবেন নানা ধরনের শাড়ির সম্ভার। গড়িয়াহাটে ঘুরতে ঘুরতে রাস্তার ধারে চোখে পড়বে একাধিক দোকান। ঢাকাই জামদানি থেকে তসর, কী নেই সেই দোকানগুলিতে! দাম জিজ্ঞাসা করতেই চক্ষু চড়কগাছ! সফ্ট ঢাকাই শাড়ি যা বড় দোকানে ১,১০০-১,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এখানে তার দাম ৮০০ টাকা! দরদাম করলে ৬০০-তেও মিলে যেতে পারে সফ্ট ঢাকাই। ভাবছেন, শাড়ির গুণমান আদৌ ভাল হবে কি না? দাম অনুযায়ী শাড়িগুলির গুণমান বেশ ভাল। উপহার হিসাবে হোক কিংবা নিজের সপ্তমীর সাজ— স্বল্প দামে গড়িয়াহাটে পেয়ে যাবেন নানা ধরনের শাড়ি। খাদি থেকে ভাগলপুরি, তসর থেকে বেনারসি, গড়িয়াহাটের ফুটের দোকানগুলিতেও পাবেন হাজার রকমের শাড়ির সম্ভার!
গড়িয়াহাটের বাজারে এ বছর মা দুর্গার মেটালিক অবয়ব দেখলে আপনার চোখ আটকে যাবে। —নিজস্ব চিত্র।
অন্দরসজ্জার সামগ্রী: প্রিয়জনকে উপহার দেওয়াই হোক কিংবা পুজোর আগে বাড়ির ভোল বদল করতে অন্দরসজ্জার টুকটাক সামগ্রী কিনতেই হয়। গড়িয়াহাটে বাসন্তী দেবী কলেজের ঠিক উল্টো ফুটপাতে একাধিক দোকানে আপনি পেয়ে যাবেন ঘর সাজানোর নানা উপকরণ। সেই সব দোকানে এ বছর মা দুর্গার মেটালিক অবয়ব দেখলে আপনার চোখ আটকে যাবে। ৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে দেবী দুর্গার নানা আকৃতির অবয়ব পেয়ে যাবেন। এ ছাড়াও থাকছে নানা রকমের ফোটোফ্রেম। দেবী দুর্গার ছবি হোক বা পুরনো কলকাতার দৃশ্য আঁকা ফ্রেমগুলি দেখলে চোখ সরাতে পারবেন না।