Advertisement
E-Paper

সিগারেটে আসক্তি? ক্যানসার বা হার্টের অসুখ ছাড়াও রয়েছে এ সব ভয়

পথ দুর্ঘটনায় অথবা ক্যানসারের থেকেও বেশি মানুষ মারা পড়েন শুধুমাত্র সিগারেট-বিড়ির নেশার কারণে।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ১২:২৫
এ কথা সকলেরই জানা যে সিগারেট স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ছবি: সংগৃহীত।

এ কথা সকলেরই জানা যে সিগারেট স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ছবি: সংগৃহীত।

কাজের চাপ পড়লেই অফিসের ক্যাবিনেট থেকে বেরিয়ে একটু স্মোকিং জোন খোঁজা। কিংবা সারা দিনের পর রাতের খাওয়া সেরে সুখটান। কারও বা দিনে চারটে-পাঁচটায় রাশ, কেউ বা প্যাকেট প্যাকেট উড়িয়ে ফেলেন সিগারেট।

তবে এ সব অভ্যাসে একেবারেই সায় নেই চিকিৎসক মহলের। ‘‘তামাকেরএকটাই মানে তাড়াতাড়ি মারণ রোগের কবলে’’, বললেন মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায়। বিশ্ব তামাক বর্জন দিবসে এই নেশা ত্যাগ করতে অনুরোধ করলেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায়ও।

পথ দুর্ঘটনায় অথবা ক্যানসারের থেকেও বেশি মানুষ মারা পড়েন শুধুমাত্র সিগারেট-বিড়ির নেশার কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানটা শুনলে আঁতকে উঠবেন! প্রত্যেক বছর ৭০লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় ধুমপান করে। এ দেশে প্রতি ৩ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে ১ জন ধুমপায়ী। ১৯৬০ সাল থেকে পৃথিবী জুড়ে তামাক বিরোধী প্রচার চলছে। ইউরোপ আমেরিকায় ধূমপায়ী সংখ্যা কমেছে ৫০ শতাংশেও বেশি। অন্যান্য ব্যাপারে বিদেশিদের অনুকরণ করলেও সিগারেট-বিড়ির নেশার ব্যাপারে আমরা তা মোটেই করি না।তাই সিগারেট, বিড়ি, হুক্কা, গুটখা, খৈনির নেশা কমার বদলে বেড়েই চলেছে। এমনকি ইদানীং কমবয়সি মেয়েদের তামাক আসক্তি ভয়ঙ্কর ভাবে বাড়ছে। আর এ কথা সকলেরই জানা যে সিগারেট স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।

আরও পড়ুন: আম খাচ্ছেন? ডায়াবিটিস বা ওবেসিটি থাকলে কতটা খাওয়া যায় জানেন?

সিগারেটের উপাদানে আছে সেঁকো বিষ আর্সেনিক, টয়লেট ক্লিনারে ব্যবহৃত অ্যামোনিয়া, কীটনাশক ডিডিটি, নেলপলিশ রিমুভার অ্যাসিটোন, ব্যাটারিতে ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম, নিকোটিন-সহ আরও প্রায় ৭ হাজার বিষ! এগুলোর মধ্যে আবার বেশ কয়েকটি ক্যানসার উদ্দীপক। সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ায় থাকা কার্বন মনোঅক্সাইড শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। মুখ, গলা, ফুসফুস, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ইউরিনারি ব্লাডার ইত্যাদি অংশে ক্যানসারের একটা বড় কারণ তামাক। সিগারেরটের ধোঁয়া তো আছেই। তার সঙ্গে চিউইং টোব্যাকো বা পেপারলেস টোব্যাকো অর্থাৎ গুটখা, নস্যি, খৈনি, পানপরাগ, গুড়াকু ইত্যাদির নেশাও নাক, কান, মুখ ও গলার ক্যানসারের এক অন্যতম কারণ।

হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী হল তামাক। প্রায় ৫ বছর আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে এক হাড় হিম করা তথ্য। আমাদের দেশে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১জন, দৈনিক ২২০০ জন এবং বছরে কমপক্ষে ৮ লক্ষ মানুষ মারা যান স্রেফ সিগারেট, বিড়ি আর গুটখা খেয়ে। প্যাসিভ স্মোকিং এর শিকার হয়েও বছরে ৬ লক্ষ মানুষ মারা যান। সিগারেট-বিড়িই হোক, অথবা চুরুট, পাইপ কিংবা হুক্কা অথবা চিবনোর তামাক— এদের কোনও ভাল দিকই নেই। পুরোটাই মারণ রোগের কারণ। একটি সিগারেট গড়ে সাড়ে সাত মিনিট আয়ু কেড়ে নেয়। দিনে দশটা সিগারেট টানার অর্থ জীবন থেকে দৈনিক ৭৫ মিনিট সময় কমে যাওয়া। ধুমপায়ীদের প্রতি দু’জনের এক জন তার নির্ধারিত আয়ুর প্রায় ১৪ বছর আগেই মারা যান। বিড়ি কম ক্ষতিকর ভেবে অনেকেই বিড়ি টানার পক্ষপাতী। কিন্তু জেনে রাখুন, অপেক্ষাকৃত কম দাম হওয়ায় অত্যন্ত নিম্নমানের তামাক পাতা ব্যবহার করা হয়। এর ক্ষতির মাত্রা আরও বেশি।

নিজের ইচ্ছে না থাকলে নেশার হাত এড়ানো সহজ নয়।

ক্যানসার ছাড়াও হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর অন্যতম কারণ ধূমপান। এ ছাড়া চোখের সমস্যা ও অকালে ছানি পড়া এবং রেটিনার অসুখের কারণ বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া। ধূমপায়ী মেয়েদের জানা উচিত, সিগারেট খেলে অকালে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ত্বকে কালচে ছোপ পড়ে। আমাদের দেশে তো বটেই বাংলাদেশ, পাকিস্থান ও শ্রীলঙ্কায় ৩৫–৬৯ বছর বয়সে ৩৫ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর অন্যতম কারণ ধুমপান। যারা দিনে ২০টি বা তারও বেশি সিগারেট টানেন, তাঁদের হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার ঝুঁকি এক জন নন স্মোকারের থেকে ৭০ শতাংশ বেশি। ধূমপানে বাড়ে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজের সম্ভাবনা। অর্থাৎ পা-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশের রক্তবাহী ধমণীতে চর্বির প্রলেপ জমে রক্ত চলাচল কমে যায়। সব থেকে বেশি সমস্যা হয় পায়ে। ধুমপায়ীদের এই অসুখের সম্ভাবনা অন্যদের থেকে প্রায় ১৬ গুণ বেশি। মধ্য বয়সে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজে আক্রান্ত হন, এমন রোগীদের ৯৫ শতাংশই ধূমপায়ী।

আমাদের দেশে তো বটেই বাংলাদেশ, পাকিস্থান ও শ্রীলঙ্কায় ৩৫–৬৯ বছর বয়সে ৩৫ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর অন্যতম কারণ ধুমপান। ছবি: সংগৃহীত।

তাই সিগারেটের সুখটানে রোগ বরণ না করে তাকে যত সত্তর সম্ভব জীবন থেকে বাদ দিন। বিশ্ব তামাক বর্জন দিবসে সব ধূমপায়ীর কাছে তামাক ছাড়ার আর্জি জানাই। নিজেদের জন্য তো বটেই, বাড়ির মানুষদের কথা ভেবে তামাককে জীবন থেকে ছুটি দিন।

‘‘সিগারেট ছাড়া খুব সহজ, আমি কত বারই ছেড়েছি...”

এমন অনেক মানুষই আছেন যাঁরা চেষ্টা করেন ধূমপান ছেড়ে দিতে, কিন্তু চেষ্টা করেও ধোঁয়ার বেষ্টন থেকে মুক্ত হতে পারেন না। বারে বারে ছাড়েন আর ধরেন। তাঁরা কী ভাবে ধোঁয়ার নাগপাশ থেকে মুক্ত হবেন জেনে নিন। তবে নিজের ইচ্ছে না থাকলে নেশার হাত এড়ানো সহজ নয়।

এক সঙ্গে প্যাকেট বোঝাই সিগারেট বা বিড়ির বান্ডিল কিনবেন না। বড়জোর ২টো কিনুন। প্যাকেট ভর্তি থাকলে মন বার বার খাই খাই করে আপনাকে উস্কানি দেবে। দু’টি সিগারেট টানার মধ্যে গ্যাপ বাড়াতে হবে। চা পানের পর বা সকালে বাথরুম দৌড়নোর আগে সিগারেটের অভ্যেস থাকলে তা ধীরে ধীরে কমানোর চেষ্টা করতে হবে। ধোঁয়া টানার ইচ্ছে হলে জোয়ান, চিকলেট, আমলকি জাতীয় কিছু মুখে রাখুন। সিগারেট ধরানোর পর পুরোটা না টেনে অর্ধেক ফেলে দেওয়ার অভ্যেস করুন। ক্রমশ তা বাড়িয়ে এক চতুর্থাংশ টেনে ফেলে দিন। সরকার কিছু আইন জারি করলে ধূমপান-সহ তামাকের নেশা কমানো যায় সহজেই। সিগারেটের সাইজ ছোট করে দিতে হবে। যে কোনও প্রকাশ্য স্থানে ধূমপান আইনত দণ্ডনীয় করা দরকার। সিগারেটের প্যাকেটে বেশির ভাগটাই রাখুন কিছু স্যাম সিগার। অর্থাৎ ১০ টা সিগারেটের মধ্যে ৭-৮টি নকল সিগারেট থাকুক। তাতে এক সময় সিগারেট খাওয়ার অভ্যাসে রাশ টানা যাবে। প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নিয়ে সিগারেট ছাড়ুন। সিগারেটের আকার :ছোট করে, পানের দোকানে সিগারেট-সহ যাবতীয় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করার ব্যবস্থা করলে তামাকের ব্যবহার কমতে বাধ্য। সহজলভ্য হওয়ায় চট করে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা নেশা শুরু করে। সিগারেট বিক্রি হোক ওষুধের দোকানে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের সিগারেট বিক্রি করলে বিক্রেতাকেও শাস্তি দেওয়া হোক। তবে সবার আগে দরকার নিজের সদিচ্ছা। সিগারেট ছাড়তে গেলে আগে আনুন মনের জোর।

Health Smoking Health Tips Cigarette
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy