Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
heart

হার্ট অ্যাটাকের হানা! কোন কোন লক্ষণে হতে হবে সতর্ক? অসুখ ঠেকাবেন কী উপায়ে

হার্টের কমজোরি হয়ে পড়ার ঘটনা রাতারাতি হয় না, বরং, বেশ আগে থেকেই সঙ্কেত দিতে থাকে হার্ট।

হার্টের যত্নে অবহেলা করলে দিতে হবে কড়া মাশুল। ছবি: শাটারস্টক।

হার্টের যত্নে অবহেলা করলে দিতে হবে কড়া মাশুল। ছবি: শাটারস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ১৩:৫২
Share: Save:

হৃদযন্ত্রের মেজাজমর্জি বোঝা কঠিন। সারা দিনের দৌড়ঝাঁপ, সংসারের ভারী কাজ, অফিস মিটিং থেকে শুরু করে টুকটাক আড্ডা, লোকলৌকিকতা বজায় রাখা— সবই দিব্য ছন্দে চলছে। প্রতি দিনের জগতে কোথাও কোনও গরমিল নেই। হঠাৎই এক দিন বুকে চিনচিনে ব্যথা দিয়ে শুরু। কিংবা শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ থেকে হার্ট অ্যাটাকের কবলে ঢলে পড়া। অনেক সময় দেখা যায়, চিনচিনে ব্যথার পরে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা জানান দিচ্ছে, হৃদযন্ত্র এ বার ছুটি নেওয়ার পথে।

তবে চিকিৎসকদের মতে, হার্টের কমজোরি হয়ে পড়ার ঘটনা রাতারাতি হয় না, বরং, বেশ আগে থেকেই সঙ্কেত দিতে থাকে হার্ট। অনেক সময় দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ভিড়ে হার্টের সেই সঙ্কেত আমরাই বুঝে উঠতে পারি না অথবা অবহেলা করে বসি।

তাই সমস্যা শুরুর অনেক আগে থেকেই হার্টের যত্ন বিশেষ প্রয়োজন।হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রকাশ হাজরা বলেন, ‘‘ওবেসিটি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, ধূমপানে আসক্তি, হাই কোলেস্টেরল, হাইপার টেনশন ইত্যাদি হার্টের রোগকে টেনে আনতে ওস্তাদ। এদের মধ্যে বেশির ভাগ লাইফস্টাইল ডিজিজ হলেও একমাত্র ধূমপান পুরোটাই নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই প্রথমেই ওটা বাদ দিতে হবে। তার পর লাইফস্টাইলের কারণে হওয়া অসুখগুলো ঠেকাতেও যত্নশীল হতে হবে। যাঁদের পরিবারে হার্টের অসুখের ইতিহাস আছে, তাঁদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’’

আরও পড়ুন: অনিদ্রা ঠেকাতে আর ঘুমের ওষুধ নয়, এ সব যোগাসনেই আসবে নিশ্চিন্তের গাঢ় ঘুম

যাঁদের পরিবারে হার্টের অসুখের ইতিহাস আছে, তাঁদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

হার্টের অসুখকে দূরে রাখলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা স্বাভাবিক ভাবেই থাকে না। তাই হার্টের কোনও প্রকার সমস্যাই অবহেলা করা উচিত নয় বলে জানান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবব্রত রায়। বেশ কিছু উপসর্গ দেখলেই তাই সচেতন হওয়া খুব প্রয়োজন। কোন কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে জানেন?

চিকিৎসক দেবব্রত রায়ের মতে, হাঁটাচলার সময় বুকে কোনও রকমের চাপ বা অস্বস্তি হচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন। অনেকের ক্ষেত্রে বুকে চিনচিনে ব্যথা থেকে জ্বালাও হয়। তেমনটা হলেও তাই সাবধান হতে হবে। হার্ট দুর্বল হলে ব্যথা কেবল হৃদযন্ত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না। হাঁটাহাঁটির সময় চোয়াল বা হাতেও ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত হাঁটাচলা করলে এই ব্যথা জানান দেয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে বিশ্রামের সময়েও ব্যথা টের পাওয়া যায়। তাঁদের বেলায় আবার হাঁটাচলায় এ ব্যথা আরও বাড়ে। মাঝে মাঝেই শরীর হালকা হয়ে পড়া বা ব্ল্যাক আউট হলে তা যে শুধুই মস্তিষ্কের কোনও অসুখ বা রক্তচাপজনিত সমস্যা তেমনটা নাও হতে পারে। তাই এমন প্রায়ই হলে অবশ্য হার্টেরও পরীক্ষা করান। হৃদস্পন্দনের দিকে খেয়াল রাখুন। অনিয়ন্ত্রিত গতি ও ঘন ঘন গতি বদলালে সচেতন হোন। সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে গেলে বা বুকে চাপ লাগলে হার্টের অবস্থা জেনে নিন।

আরও পড়ুন: গরমে চাঙ্গা থাকতে এনার্জি ড্রিঙ্ক? এই স্বভাব ডেকে আনছে মারাত্মক সব বিপদ

হাঁটাহাঁটি বা শরীরচর্চা— হার্ট ভাল রাখার অব্যর্থ দাওয়াই।

তবে কেবল লক্ষণ জানলেই তো হবে না, অসুখ ঠেকিয়ে রাখার পাঠ নিয়েও স্পষ্ট থাকা জরুরি। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুর হার্টের যত্ন নিন, সঙ্গে নিজেদেরও, সার্বিক ভাবে হার্ট ভাল রাখতে গেলে কয়েকটা নিয়ম মানতেই হয়। যেমন:

প্রথমেই পাত থেকে বাদ দিন তেল-মশলার খাবার। যখন-তখন তেলেভাজা, ফাস্ট ফুডও বন্ধ করতে হবে। রেড মিট খুব ভালবাসলে খান, তবে সপ্তাহে দু’পিসের বেশি নয়।কিন্তু হার্টের অসুখ থাকলে বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে থাকলে একেবারেই চলবে না। ফ্যাট জাতীয় খাবার শরীরের প্রয়োজন আছে। কিন্তু অসুখ ও ওজন বুঝে, তাই ঠিক কতটুকু ফ্যাট শরীরে লাগবে তা আগে জেনে নিন ডায়েটেশিয়ান ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে। তার চেয়ে বেশি ফ্যাট চলবে না। ধূমপানে না বলতে শিখুন আজ থেকেই। মনের জোর ছাড়া এই অভ্যাস ত্যাগ করা যায় না। তাই শরীরের জন্যই এটা বাদ দিতে হবে। হবেই। প্রতি দিন একটানা হাঁটুন অন্তত ২৫-৩০ মিনিট। যাঁদের হাঁটার নানা সমস্যা রয়েছে, তাঁরা অন্তত সপ্তাহে ১৫০ মিনিট শরীরচর্চা করুন। কোলেস্টেরল বেশি থাকলে সে সবে ইন্ধন দিতে পারে এমন খাবার কিন্তু চলবে না। রাতের ঘুম আর সবুজ শাকসব্জি খাওয়া, এই দুটোর সঙ্গে আপস করবেন না কখনও। রাত জেগে অফিস করতে হলে পেশা বদলান। একান্তই তা সম্ভব না হলে দিনের বেলা পর্যাপ্ত ঘুমোন। যদিও দিনের ঘুম কখনওই রাতের ঘুমের বিকল্প হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য নিয়মগুলো মেনে চলুন, বাদ দেবেন না শরীরচর্চা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE