গৃহসজ্জার পাশাপাশি ভ্যানিটি ভ্যান-সজ্জাও এখন তারকাদের জীবনের অঙ্গ। আগে যা ছিল প্রয়োজন, সাম্প্রতিক কালে তা হয়েছে বিলাসিতা। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ভ্যানের প্রয়োজনীয়তা কেবল ঘুম, বিশ্রাম, পোশাক পরিবর্তন, শৌচালয় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। এখন কোন তারকার কতগুলি ভ্যান, কোনটির সজ্জা কেমন, কোনটি কত দামের, সেগুলি মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বিলাসিতা, পরিশ্রম আর স্বাচ্ছন্দ্য মিলে তৈরি হয় চলমান এক জীবন। আর তাই তারকাযাপন নিয়ে কৌতূহল বাড়ির সজ্জার পাশাপাশি গাড়ির সজ্জা পর্যন্তও পৌঁছে গিয়েছে। চারটি চাকার উপর যেন বিলাসবহুল প্রাসাদ। এখন ভ্যানিটি ভ্যানই যেন শিল্পীকে তারকা বানায়।
সম্প্রতি তারকাদের চলমান প্রাসাদ নিয়ে কথা বলেছেন মুম্বইয়ের ভ্যানিটি ভ্যান ব্যবসায়ী কেতন রাওল। তিনি এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন ২০০৫ সালে। ফলে ইন্ডাস্ট্রির বিলাসবহুল যাপনের বিবর্তন কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। কেতনের কথায় তারকাদের ভ্যানের অন্দরসজ্জা সম্পর্কে দু’চার টুকরো ঝলক পাওয়া যায়। ঠিক যেমন রণবীর সিংহের জন্য একটি মাত্র ভ্যান যথেষ্ট নয়। তাঁর শুটিংয়ে প্রয়োজন তিনটি ভ্যনিটি ভ্যান— একটি নিজের বিশ্রামের জন্য, একটি জিম হিসেবে, আর একটি ব্যক্তিগত হেঁশেল। তাঁর বিশ্বাস, যত ব্যস্তই দিন হোক না কেন, আরাম আর প্রাত্যহিক রুটিন অব্যাহত থাকা দরকার। সে ভাবেই তিনি নিজের চলমান ঘর সাজিয়ে নিয়েছেন। যদিও তাঁর ভ্যানগুলির অন্দরসজ্জা নিয়ে কিছু বলেননি কেতন।
শাহরুখের ভ্যানিটির অন্দরমহলের ছবি। ছবি: সংগৃহীত।
অন্য দিকে, শাহরুখ খানের ভ্যান যেন চলন্ত প্রাসাদ। আকারে তা এতই বিশাল যে ছোটখাটো রাস্তায় তা পৌঁছোতে পারে না। তখন কেতনকে আলাদা একটি ছোট ভ্যান পাঠাতে হয় শুধু তাঁর জন্য। যে অভিনেতা তাঁর দিনের বেশির ভাগ সময় এই ভ্যানেই কাটান, তাঁর এই বাসস্থান যে বিশেষ যত্নে বানানো হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শাহরুখের ভ্যান সাজানো হয়েছে ভবিষ্যৎধর্মী অন্দরসজ্জার কথা মাথায় রেখে। কল্পবিজ্ঞানের থিমে বানানো হয়েছে বাদশার ভ্যান। গাড়ির একটি অংশ প্রয়োজনে বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে, আবার প্রয়োজন ফুরোলে তা গুটিয়ে নিয়ে ছোট করা যেতে পারে। এমনই নানা ধরনের প্রযুক্তির খেলা নজরে পড়বে তাঁর ভ্যানে। গাড়িচালকের কেবিন ছাড়া এতে রয়েছে একটি শোয়ার ঘর, মেকআপ করার কোণ, চারটি স্ক্রিন, আরামকেদারা এবং অবশ্যই বাথরুম। খাওয়াদাওয়া করার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
শাহরুখের ভ্যানিটির অন্দরমহলের ছবি। ছবি: সংগৃহীত।
জন আব্রাহামের পছন্দ আবার বাহুল্যবর্জিত এবং মার্জিত। তাঁর ভ্যানিটির রং আপাদমস্তক কালো। এমনকি শৌচালয়ও কালোয় মোড়া। ভ্যানে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত কাচে মোড়া, যাতে বাইরের আলোয় ভরে ওঠে গোটা ভ্যান। যার ফলে গাঢ় রঙের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় থাকে।
শাহরুখের ভ্যানিটির অন্দরমহলের ছবি। ছবি: সংগৃহীত।
কঙ্গনা রানাউত চেয়েছিলেন ভ্যান আর বাড়ির মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে। তাই যে অন্দরসজ্জাশিল্পী তাঁর বাড়ি ডিজ়াইন করেছিলেন, তাঁকেই নিজের ভ্যান সাজানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলিউডের ‘কুইন’। কঙ্গনার ভ্যান রাজকীয়তার প্রতিচ্ছবি যেন। সম্পূর্ণ শিশু কাঠে তৈরি ভ্যানের অন্দরমহল। হালকা আলো আর নিখুঁত হাতে খোদাই করা আসবাবপত্র— সব মিলিয়ে যেন ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের মেলবন্ধন। এই ভ্যান বানাতে খরচ হয়েছে ৬৫ লক্ষ টাকা।
এমন বিলাসের খরচ অবশ্যই কম নয়। একটি ভ্যানের রক্ষণাবেক্ষণেই বছরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়। আর সম্পূর্ণ বিলাসবহুল ভ্যানের দাম ছুঁয়ে যায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা।