Advertisement
E-Paper

মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে? মৃত্যুভয় ও হতাশা কী ভাবে কাটাবেন?

কী ভাবে ধাপে ধাপে কাটে মারণ রোগের হতাশা, টেনশন তার হদিশ দিয়েছেন মনোচিকিৎসক সঞ্জয় রায়৷ 

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৪১
অসুখ সম্পর্কে রোগীকে বিস্তারিত জানান। ছবি: শাটারস্টক।

অসুখ সম্পর্কে রোগীকে বিস্তারিত জানান। ছবি: শাটারস্টক।

ডায়াবিটিস, হাইপ্রেশার সামান্য পরিমাণে দেখা দিলেই যেখানে মানুষ টেনশনে পড়ে যান, ক্যানসার, দূরারোগ্য নার্ভের অসুখ বা এইচআইভি–র মতো সমস্যা হলে তো টেনশন হবেই৷ যাকে বলে শক স্টেজ, হঠাৎ দুঃসংবাদ শুনে ভেঙে পড়া৷

এর পর আসে ডিনায়াল ফেজ৷ রোগটা যে হয়েছে তা প্রাণপণ অস্বীকার করা৷ তার পর ধীরে ধীরে বাস্তব বোধগম্য হয়, মানুষ বোঝেন যে, হ্যাঁ, তাঁরই হয়েছে এই মারাত্মক অসুখ, আর তার হাত ধরে গড়গড়িয়ে ছুটে চলা জীবনে এক বড়সড় ধাক্কা লেগেছে৷

সেই ধাক্কা কেউ মোটামুটি সহজে হজম করতে পারেন, কাউকে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ হতাশা ও অবসাদের পথ৷ এই সময় কাজে আসে চিকিৎসক, মনোবিদ ও কাছের মানুষের সহযোগিতা, আশ্বাস৷ কী ভাবে ধাপে ধাপে কাটে হতাশা, টেনশন তার হদিশ দিয়েছেন মনোচিকিৎসক সঞ্জয় রায়৷

আরও পড়ুন: শিশুর পাতে প্রায়ই নুডলস? অজান্তে কী ক্ষতি করছেন জানেন?

নিজে আগে শান্ত হোন, তার পর সাহায্যের হাত বাড়ান রোগীর দিকে।

কোন পথে সমাধান

রোগটা কী, কোন পর্যায়ে আছে, আপনার কী কী ক্ষতি হতে পারে এতে, চিকিৎসায় কতটা ক্ষতি সামলানো যাবে, কতটা যাবে না, যে ক্ষতির আর পূরণ হবে না তাকে কী ভাবে সামলাবেন, সব জেনে নিন বিশেষজ্ঞের কাছে৷ অনিশ্চয়তা কেটে গেলে উদ্বেগ কমবে৷ দুঃখের ঘোর কেটে গেলে পরিকল্পনা করতে সুবিধে হবে৷

দুঃখের ঘোর কাটা সহজ নয়৷ বহু মানুষ এই পর্যায়ে আত্মহত্যা করতে যান৷ তাঁদের কাউন্সেলিং করতে হয়৷ আজকাল ক্যান্সার, এডস, নিউরোলজিকাল ডিসর্ডার সব কিছুর জন্যই আলাদা কাউন্সিলার আছেন৷ রোগ নিয়েও কী ভাবে সুন্দর ভাবে জীবন কাটানো যায় তা তাঁরা শেখান৷ ধরুন, এমন অসুখ হয়েছে যে ভাল করে চিকিৎসা করালে আর মাত্র কয়েক বছর বেঁচে থাকবেন৷ ধরা যাক কেউ ভাবছেন, অসুখ না হলে ২০–২৫ বছর বাঁচতেন, আর হওয়ায় বাঁচবেন ৪–৫ বছর, কাউন্সিলারের কাজ এই ভাবনার মূলে কুঠারাঘাত করে নতুন ভাবনা ভাবতে শেখানো৷

কিন্তু কেমন সব ভাবনার জোরে কোনও মারণ রোগে আক্রান্ত মানুষের মনের জোর কী ভাবে বাড়াতে পারেন? মনোবিদরা রোগীর সামনে রাখেন এমন কিছু বক্তব্য, যা বেঁচে থাকার মানে অন্য ভাবে তুলে ধরে রোগীর কাছে। জানেন সে সব কী কী?

আরও পড়ুন: ঘামাচির সমস্যায় জেরবার? এই সব ঘরোয়া উপায়েই করুন বাজিমাত

রোগীকে কখনওই ভেঙে পড়তে দেবেন না।

চিকিৎসকরা অনেক সময় প্রথমেই জানতে চান, রোগী কী করে জানলেন যে ২০–২৫ বছরই বাঁচতেন? বা জানলেও কী কী করতেন বেশি দিন বেঁচে? যে ভাবে ফেলে–ছড়িয়ে বাঁচছিলেন সে ভাবেই তো বাঁচতেন, না কি অন্য কোনও পরিকল্পনা ছিল। জানতে চাওয়া হয়, আগের এতগুলো বছর কী কী করেছেন? কত দিন মনের আনন্দে কাটিয়েছেন? কাজের কাজ কী কী করেছেন? আর কত সময় অকাজে, মন খারাপ করে, ঝগড়া–বিদ্বেষ করে নষ্ট করেছেন? বোঝানো হয়, গত বিশ বছরে যা যা কাজ করেছেন, আরও একটু ফোকাস্ড হলে তা ৫–৭ বছরেই করে ফেলা যায। কাজেই অসুবিধা নেই আরও পাঁচ-সাত বছর হাতে থাকলেও। প্রায়োরিটি লিস্ট বানিয়ে কী কী কাজ করবেন, সন্তানদের জন্য কী কী গুছিয়ে যাবেন, কী ভাবে গুছোবেন তা ঠিক করে নিয়ে পূরণ করতে উঠেপড়ে লাগার কথাও বলে থাকেন চিকিৎসকরা। বেশির ভাগ রোগী ভাবেন, কত কিছু পাওয়া হল না। তাঁকে বোঝান, যা পাননি তা নিয়ে ভেবে মানসিক রোগী হয়ে গিয়ে কোনও লাভ নেই৷ ভেবে দেখুন যা যা পেয়েছেন তা আরও কোটি কোটি মানুষ পাননি৷ ভাল থাকার জন্য সেটুকুই যথেষ্ট৷ সময় কতটুকু আছে তা আন্দাজ করে অপূর্ণ কাজগুলি সারতে সাহায্য করুন প্রিয়জনকে। চাওয়া–পাওয়ার হিসেব নিয়ে বসলে হয়তো দেখবেন এই দুঃখ রোগীর মনে এতই পরিবর্তন এনেছে যে বদলে গেছে চাহিদা৷ সেখানে রোগীকে করে তুলুন বাস্তববাদী, জীবনমুখী৷ অনেকেই ভাবেন শরীরের কষ্ট বাড়বে৷ সে ভয় থেকে মুক্ত করুন রোগীকে। আজকাল ব্যথা–বেদনা কমানোর এত ওষুধ, এত পদ্ধতি এসেছে যে মোটামুটি ভালই থাকতে পারবেন৷ কাউন্সেলিংয়ে পুরো কাজ না হলে মনোচিকিৎসকের পরামর্শমতো ডিপ্রেশন কমানোর ওষুধ খেতে হবে৷ মেনে চলতে হবে কিছু রিলাক্সেশন পদ্ধতিও৷ বন্ধু, আত্মীয়, শখ ও কারও কারও ক্ষেত্রে ঈশ্বর-বিশ্বাস অনেক সময় মনকে শান্ত করে৷ যে রোগী যে পথে আরাম পান, তাঁকে সে ভাবেই বাঁচতে দিন।

Life Hacks Diseases Cancer Health Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy