Advertisement
E-Paper

স্ট্রেসে ভুগছেন? ট্রাই করতে পারেন এই নতুন উপায়

ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতায় সামিল হয়েছিলেন এ শহরের বাসিন্দা অনিতা লালা। স্কুল পড়ুয়া থেকে মধ্য পঞ্চাশের নানা পেশার মানুষেরা এক সাথে সৃজনশীল কাজে সময় কাটাচ্ছেন।

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৬

সামনে সাদা ক্যানভাস নিয়ে তৈরি অনেকে। নিজের ইচ্ছেমতো সেখানে পড়তে শুরু করল নানা রঙের পোঁচ। নির্দিষ্ট কিছু সৃষ্টি করার কোনও চাপ, প্রত্যাশা নেই। তাড়া করছে না ঘড়ির এগিয়ে চলা কাঁটা। এক জন মাস্টার পেন্টার আছেন বটে। তিনি মাঝে মাঝে কিছু উপদেশ দিচ্ছেন। একেবারে আনকোরা, অপটু হাতের ছোঁয়াতে ক্যানভাসে শেষমেশ যা ফুটে উঠল, তা কিন্তু বেশ দৃষ্টিনন্দন।

ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতায় সামিল হয়েছিলেন এ শহরের বাসিন্দা অনিতা লালা। স্কুল পড়ুয়া থেকে মধ্য পঞ্চাশের নানা পেশার মানুষেরা এক সাথে সৃজনশীল কাজে সময় কাটাচ্ছেন। ক্যানভাসে ফুটে উঠছে মনের ভাব। আর তার সঙ্গেই রোজকার ব্যস্ত জীবনে হাজির হচ্ছে আলো ঝলমলে কিছু মুহূর্ত। বাড়ছে কাজ করার উৎসাহ, নিজের প্রতি আস্থা। নিজের সেই অভিজ্ঞতা সম্বল করেই শহরের অন্যদের জন্য আগামী ২৬ তারিখ, সল্টলেকে এমনই এক কর্মশালার আয়োজন করতে চলেছেন অনিতাদেবী। কর্মশালার মাস্টার পেন্টার সুদীপ্তা রায় পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী হলেও নেশায় চিত্রশিল্পী। কর্মশালার যৌথ উদ্যোক্তা সৌরভ দত্ত জানান, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলেই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গেই যুক্ত। শুরু থেকেই তাঁর স্থির করে নিয়েছিলেন কোনওভাবেই ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্য নেবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ডিজিটাল মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার অনেকের মধ্যেই যে ক্লান্তি নিয়ে আসে, তা থেকে সাম়য়িক মুক্তি পাওয়াটাও এই কর্মশালার আর একটা লক্ষ্য। এতে অংশ নেওয়ার জন্য আগে থেকে ভাল আঁকতে জানার প্রয়োজন নেই। বরং না জানলেই ভাল। তাতে হঠাৎ কিছু সৃষ্টি করার মজাটা অনেক বেশি পাওয়া যাবে। কর্মশালার শেষে সকলেই ফিরবেন নিজের হাতে আঁকা ছবির ক্যানভাসটি নিয়ে।’’

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকা সার্বিক সুস্থতার অন্যতম অংশ। অথচ এই দিকটি অনেক সময়েই থেকে যায় অবহেলিত। ব্যস্ততার ইঁদুরদৌড়ে মনের কোণে উঁকি দেওয়ার সময় কই আমাদের! নিজেকে সময় না দিতে দিতে জমতে থাকে মনখারাপের মেঘ। আর তা থেকেই দেখা দেয় নানা শারীরিক সমস্যা। বহু ক্ষেত্রেই এই সমস্যার মূলে যে রয়েছে মানসিক চাপ, ধরা পড়ে না সেটাই। এমনকী, কর্মব্যস্ত জীবনে যে নানা চাপ, দুশ্চিন্তা থাকবে সেটা এক রকম স্বাভাবিক বলে মেনেই নেওয়া হয়। আর তাই সেই জাল কাটিয়ে বেরোনোর চেষ্টাই করেন না অনেকে। এমন ক্ষেত্রে মুশকিল আসান হয়ে দেখা দিতে পারে নিজের ইচ্ছে মতো আঁকিবুকি করে কিছুটা সময় কাটানো।

শিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে এই রকম কাজ খুব ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সব মানুষের মধ্যেই স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধ কাজ করে। সকলের কাছে তা প্রকাশ করার মতো মাধ্যম থাকে না। কিন্তু যখন তাঁরা মনের না বলা কথা পেন্টিংয়ের মতো কোনও মাধ্যমে প্রকাশ করেন, তখন তা নানা রকম চাপ থেকে উপশম দেয়। ধ্যানের মতো কাজ করে। এর জন্য আঁকার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা বা না থাকায় কিছু তফাৎ হয় না বলে মনে করেন সুব্রতবাবু। তিনি আরও জানাচ্ছেন, মার্কিন দেশে এমন কিছু সংগঠন তিনি দেখেছেন যেখানে বহু মানুষ আসেন শুধুই নিজের ইচ্ছে মতো আঁকতে। উপার্জনের জন্য বা পারিবারিক দায়িত্বপালনের জন্য যে কাজগুলি তাঁরা নিত্য করে থাকেন, তার বাইরে কিছু করার তাগিদ থেকে।

মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, যে কোনও সৃজনশীল কাজই স্ট্রেসমুক্তির ভালো উপায়। তাঁর কথায়, ‘‘রোজকার জীবনে নানা রকম গ্লানি জমে। এমন কোনও উপায়ে কিছু ক্ষণের জন্য তা থেকে দূরে থাকতে পারলে তো খুবই ভাল।’’

এই আঁকাজোকা শুরু করলে এক দিকে যেমন বাড়তে থাকবে রঙিন ক্যানভাসের সংখ্যা, তেমনই অন্য দিকে মন থেকে মুছে যাবে প্রতিদিনের জীবনের ধুলো। ঠিক যেমনটা বলেছিলেন পাবলো পিকাসো।

Mental health Canvas Health paintings
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy