এই পা জড়ো করে বসেছিল পোষ্য। দেখে মনে হচ্ছিল, পায়ে ব্যথা। পরক্ষণেই ছুটে খেলা শুরু করল গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে পড়ে আসা বাড়ির খুদে সদস্যের সঙ্গে? বাড়ির পোষ্যের এমন আচরণ কি চেনা ঠেকছে?
২০১৯ সালে সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। যেখানে দেখা গিয়েছিল, ব্যাংককের একটি পথকুকুর পাশ দিয়ে কেউ গেলেই খুঁড়িয়ে হাঁটত। তাকে এই অবস্থায় দেখে স্থানীয় এক পশুপ্রেমী সেই সারমেয়কে পশুরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা করে দেখা যায় ‘গি’নামে ওই সারমেয়র আসলে কোনও চোট লাগেনি। শুধুমাত্র মানুষের আকর্ষণ, সহানুভূতি আদায়ে এমন অভিনয় করছিল সে।
আপনার বাড়ির পোষ্য কুকুরও কি তেমন কিছু করতে পারে? কী ভাবে বুঝবেন তার আচরণ দেখে, কোনটা সঠিক কোনটা নয়? পশুরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, পোষ্য কুকুরেরা সচরাচর এমনটা না করলেও একেবারেই যে করতে পারে না, তা কিন্তু নয়। কখনও বাড়ির লোকের আকর্ষণ, সান্নিধ্য, সংস্পর্শটুকু পাওয়ার লোভে তারা এমনটা করতেও পারে।
কী ভাবে তফাত করা যাবে সেই আচরণ?
পোষ্যের ব্যথা হচ্ছে, না কি সে অভিনয় করছে, সেটা বোঝা কিন্তু মোটেও সহজসাধ্য বিষয় নয়। বরং তা এড়িয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু যদি পোষ্য সত্যি অভিনয় করে থাকে, তা হলে কোনও কোনও আচরণে তা প্রকাশ পেতে পারে। এই হয়তো সে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল বা উঠতে চাইছিল না। পছন্দের খাবার দেখে একলাফে খাবারের বাটির সামনে গেল। কিংবা তাকে দেখে মনে হচ্ছে পায়ে ব্যথা, হঠাৎ করে বল পেয়ে দৌড়ে সেটা নিয়ে খেলতে শুরু করল, তা হলে বুঝতে হবে ভান করছিল সে। অনেক সময় তারা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বিশেষ ভাবে ডাকাডাকিও করে। যদি দেখা যায় বাড়ির যে সদস্যকে সে পছন্দ করে, তিনি সামনে থাকলে সে এমন আচরণ করছে, তা হলে বুঝতে হবে কোথাও গন্ডগোল রয়েছে।
কখনও আবার দুঃখ হয়েছে, এমন মুখ করেও বসে থাকে। কিন্তু তাকে আদর বা তার সঙ্গে খেলা করার পর নিমেষে যদি সেই অভিব্যক্তি পাল্টে যায় তা হলে বুঝতে হবে, বিষয়টি অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
কেন এমন করতে পারে সারমেয়?
মানবশিশুকেও অনেক সময় দেখা যায়, চিৎকার করে কাঁদছে কিন্তু চোখে জল নেই। আবার মা যখন অন্য কাজে ব্যস্ত বা কারও সঙ্গে কথা বলছেন, তার দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। সারমেয়রও তার অভিভাবকের সঙ্গে এমন সুদৃঢ় মানসিক যোগ থাকে। কোনও কোনও কুকুর অতিরিক্ত অনুভূতিপ্রবণ হয়। প্রিয়জনের সঙ্গ বেশি করে চায়। অভিভাবকের সহানুভূতি, মনোযাগে আকর্ষণে এমনটা কোনও কোনও সারমেয় করতে পারে। একাকিত্বে ভুগলে সারমেয়র মানসিক চাপ হতে পারে। আবার হঠাৎ করে বাড়ি বদল করলে, বাড়ির মনিব কাজে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লে, বাড়িতে কোনও শিশু জন্মানোর ফলে পোষ্যের প্রতি মনোযোগে ঘাটতি হলে সারমেয় এমন ধরনের আচরণ করতে পারে।
কী ভাবে তাদের সামলাবেন?
প্রথমে নিশ্চিত হওয়া দরকার, সারমেয় সত্যি মনঃকষ্টে ভুগছে কি না, বা তার শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না। প্রয়োজনে পশুরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। যদি বোঝা যায় মনোযোগ, আদর পেতেই এমন আচরণ করছে, সে ক্ষেত্রে তার এমন আচরণে বাড়তি আহ্লাদ না দেওয়াই ভাল। বরং দৈনন্দিন রুটিন করে দেওয়া যেতে পারে তার জন্য। খেলা, ঘুম, খাওয়া, শরীরচর্চা, ঘোরার নির্দিষ্ট সময় থাকবে। ব্যস্ত থাকলে এমন আচরণ সে ধীরে ধীরে এড়িয়ে চলতে পারে। অবসরে পোষ্যের সঙ্গে একটু বাড়তি সময় কাটালে সে-ও কিন্তু খুশি থাকবে।