সন্তান খুব জেদি-একগুঁয়ে হয়ে যাচ্ছে, কোনও কথাই শুনতে চায় না, এমন অভিযোগ অনেক মা-বাবারই। তবে সন্তান কেন জেদি হচ্ছে, তার নেপথ্যের কারণ খোঁজা সবচেয়ে আগে জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ের নানা গবেষণা দেখিয়েছে, যে সব বাবা-মা খুব বেশি কড়া, সারা ক্ষণ সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাঁদের সন্তানেরাই সবচেয়ে দ্রুত ইন্টারনেেট আসক্ত হয়ে পড়ে। তাদের বেশির ভাগ মিশতে শেখে না, খেলতে শেখে না, এমনকি তাদের আচার-আচরণেও বদল আসে। তাই সন্তানকে সহবত শেখাতে হলে, সবচেয়ে আগে অভিভাবকদের সংযত হতে শিখতে হবে। তাঁদের আচরণ ও অভ্যাসে এমন কিছু বদল আনতে হবে, যা দেখে সন্তানও তা অনুসরণ করতে পারে।
মা-বাবার কোন কোন অভ্যাস সন্তানের মনে ছাপ ফেলে?
সন্তানের কথা শুনতে হবে
সন্তান স্কুল থেকে এসেই উত্তেজনায় সারা দিন কী কী হল বলার চেষ্টা করছে, অথচ আপনি ফোনে স্ক্রল করছেন বা হোয়াট্সঅ্যাপে চ্যাট করে যাচ্ছেন, অথবা টিভি দেখতে মগ্ন। এই উদাসীনতাকেই সন্তান অবহেলা বলে ভেবে নেবে। আপনার মনোযোগ না পেলে, পরবর্তী কালে আপনার কথাও সে শুনতে চাইবে না।
পক্ষপাত নয়
পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পারমিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, দুই সন্তান থাকলে এক জনের প্রতি অতিরিক্ত পক্ষপাত অন্য জনের মনে আঘাত দিতে পারে। অথবা সবসময়েই বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে তুলনা টানতে থাকলে, সন্তান হীনম্মন্যতায় ভুগবে। এর থেকে আরও বেশি জেদি হয়ে উঠবে, নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করবে।
আরও পড়ুন:
লক্ষ্য বেঁধে দেবেন না
ছোট থেকে ওর সামনে জীবনের লক্ষ্য বেঁধে দেবেন না। বড় হয়ে কী হতে চাও— এই প্রশ্নের উত্তরটা ওকেই দিতে দিন। নিজেরা শিখিয়ে দেবেন না। প্রথমে উত্তরগুলো আপনার কাছে অদ্ভুত লাগতে পারে। এ নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। বরং ওকে বোঝান, ও যা-ই করুক, সেটা যেন মন দিয়ে করে। এতে দুটো জিনিস হবে। প্রথমত, ও জানবে কোনও কাজই ছোট নয়। মন দিয়ে করা প্রত্যেক কাজই গুরুত্বপূর্ণ। এবং দ্বিতীয়ত, ওর স্বাধীন ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি হবে, যা পরে ওকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।
আলস্য নয়
আপনি যদি সারা ক্ষণ শুয়েবসে টিভি দেখেন বা ফেসবুক-হোয়াট্সঅ্যাপে সময় কাটান, তা হলে সন্তানও সেই অভ্যাসেই বড় হবে। অন্যের সঙ্গে মেলামেশার অভ্যাস তৈরিই হবে না। সুস্থ জীবনযাপন করতে যা যা করা প্রয়োজন, ছোট থেকে তেমন অভ্যাস করাতে না পারলে ভবিষ্যতে তাদেরই সমস্যায় পড়তে হবে।
সব সময়ে খুঁত ধরবেন না
সব কাজেই খুঁত ধরা, সমালোচনা করার অভ্যাস শিশুর মনোজগতে গভীর প্রভাব ফেলে। পারমিতার মতে, ছোটখাটো কাজেরও প্রশংসা করুন। ভুল-ঠিক বলে দিন স্নেহের সঙ্গে। বার বার সমালোচনা করলে ছোট থেকেই আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে।