Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Sattu

নিত্যসঙ্গী হোক ছাতু

ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীর সুস্থ রাখতে ছাতু কিন্তু নিত্য দিনের সঙ্গী হতে পারে। কী ভাবে খাবেন, কতটা খাবেন, জেনে নিন ডালের সব উপকারী গুণ যেমন এতে বিদ্যমান, তেমনই খাওয়ার আগে রান্নার জন্য সময়ও বেশি লাগে না।

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ০০:০১
Share: Save:

ছোটবেলায় ফিরে তাকালে ছাতুর শরবত, ছাতু মাখা কিন্তু প্রায়ই তৈরি হত বাড়িতে। বিকেলের মুড়িমাখায় একমুঠো ছাতুও মিশিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু দিনে-দিনে জাঙ্ক ফুডের বাহারে ছাতুর মতো উপকারী খাবারও এখন ব্যাকসিটে। রোজকার ডায়েটে ফিরিয়ে আনতে পারেন ছাতুকে। কারণ এর গুণ অনেক। ছোলার ডাল পেষাই করেই তৈরি হয় ছাতু। ডালের সব উপকারী গুণ যেমন এতে বিদ্যমান, তেমনই খাওয়ার আগে রান্নার জন্য সময়ও বেশি লাগে না। জলে গুলেও ছাতু খেতে পারেন রোজ। তার আগে জেনে নিন, কেন খাবেন ছাতু...

গুণের ভাঁড়ার

প্রোটিনের পরিমাণ যেমন বেশি, তেমনই ছাতুতে কার্বোহাইড্রেটও পাওয়া যায়। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘ছাতুকে এখন সুপারফুড বলা হয়। এক দিকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটের জোগান থাকে, আবার মিনারেলসও থাকে ভরপুর। যদিও ছাতুর প্রোটিনকে ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন বলা যায় না, কিন্তু এতে প্রোটিনের পরিমাণ অনেকটাই। ১০০ গ্রাম মাছে ১৬-২০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়, সেখানে ১০০ গ্রাম ছাতুতে ২০-২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। তাই প্রোটিনের উৎস হিসেবে ছাতু কিন্তু খুব উপকারী। বিশেষত যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা রোজকার খাবারে কিছুটা পরিমাণে ছাতু রাখলে তা প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে। অন্য দিকে, ১০০ গ্রাম ছাতুতে কার্বোহাইড্রেট থাকে প্রায় ৬০-৬৫ গ্রাম। ফলে শক্তির জোগানও দেয়। কিন্তু ছাতুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুব ভাল খাবার হতে পারে ছাতু। এক দিকে শক্তির জোগান দেয় আবার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় রক্তে গ্লুকোজ়ের পরিমাণও থাকে নিয়ন্ত্রণে।’’ এ ছাড়াও ছাতুতে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ়, জ়িঙ্ক ইত্যাদি খনিজের চাহিদাও পূরণ হয়ে যায়। তাই মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টসের জন্যও ভরসা রাখা যায় ছাতুর উপরে। ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরীর কথায়, ‘‘সকালে যাঁরা কাজে বেরিয়ে যান, তাড়াহুড়োয় খাওয়ার সময় পান না, তাঁরাও এক গ্লাস ছাতুর শরবত খেয়ে বেরোতে পারেন। এতে অনেকক্ষণ শক্তি পাবেন। ছাতু চটজলদি শক্তির জোগান দেয়। তা ছাড়া রক্ত সঞ্চালনও ভাল হয়।’’

কতটা ছাতু খাবেন?

ছাতুর গুণ অনেক। শরীর ভাল রাখতে, পেশির গঠনে, ত্বকে ঔজ্জ্বল্য আনতে, চুল পড়া কমাতেও ছাতু সহায়ক। ছাতুতে যে আয়রন থাকে, তা মহিলাদের জন্যও খুব জরুরি। তার উপরে ছাতুতে ফাইবার থাকে। কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে এর জুড়ি নেই। তাই রোজকার খাবারে ছাতু রাখা যায়। পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ রোজ ৩০-৪০ গ্রাম ছাতু খেতে পারেন। তবে কতটা পরিমাণে ছাতু খাবেন তা নির্ভর করে একজনের বয়স, কাজ ও খাদ্যতালিকার উপরে। শিশুদের যেমন রোজ এক-দু’চামচ করে ছাতু খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। একটু বেশি বয়সে ছাতু খেলে অনেকের পেট ভার করতে পারে। তাই রোজ এক চামচ করে ছাতু খাওয়া শুরু করে দেখতে পারেন। হজম করতে পারলে ধীরে-ধীরে পরিমাণ বাড়ান। ছাতু খাওয়ার অভ্যেস থাকলে হজমে সমস্যা নাও হতে পারে। মুড়ির ছাতুও তৈরি করা যায়। তার সঙ্গে অল্প ছোলার ছাতু মিশিয়ে খেলে পেট ভার করবে না। সুবর্ণার কথায়, ‘‘কিডনির সমস্যা বা গাউট থাকলে অবশ্য ছাতু খাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। ডায়ালিসিস শুরু হলে তা-ও খেতে পারেন।’’

কী ভাবে খাবেন?

ছোলার ছাতু অনেক ভাবেই খাওয়া যায়। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে জলে অল্প নুন, পাতিলেবুর রস দিয়ে শরবত করে খাওয়াই ভাল। ছাতুর পুর দিয়ে রুটি, পরোটা করেও খাওয়া যায়। তবে রাতের দিকে ছাতু খেলে হজম হতে সময় লাগবে। তাই দিনের বেলায় ছাতু খাওয়াই ভাল। ডায়াবিটিস বা ওবেসিটির সমস্যা না থাকলে দুধ, চিনি, কলা দিয়েও ছাতু মেখে খেতে পারেন। সন্তানের বয়স তিন-চার বছর হলে ওদের দুধেও অল্প করে মিশিয়ে দিতে পারেন ছাতু।

রোজকার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন ছাতু, তবে পরিমাণ বুঝে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sattu Diet Fitness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE