রোজের জীবনে বেশ কিছু অনিয়ম আর বদভ্যাস ডায়াবিটিসের প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ছবি: শাটারস্টক।
৯৫ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী ভোগেন ‘টাইপ ২ ডায়াবিটিস, অর্থাৎ একটু বেশি বয়সে যে ধরনের ডায়াবেটিস হয়৷ এ রোগের প্রবণতা থাকলে শুয়ে–বসে থাকা, বেশি ওজন, বেশি খাওয়া, মানসিক চাপ ইত্যাদি যে ক্ষতিকর, তা আমরা জানি৷ কিন্তু টিভি দেখা, নরম পানীয় খাওয়া বা মাঝেমধ্যে না খেয়ে থাকাও যে কম–বেশি একই দোষে দুষ্ট তা জানা গেল সম্প্রতি৷
সতর্ক করলেন হরমোন বিশেষজ্ঞ সুজয় ঘোষ। তাঁর মতে, ‘ডায়াবেটিসের প্রবণতা যদি থাকে, এই সব অভ্যাস চালিয়ে গেলে রোগ হতে পারে যখনতখন৷ কাজেই সাবধান৷’
রোজের জীবনে বেশ কিছু অনিয়ম আর বদভ্যাস কিন্তু ডায়াবিটিসের প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রতি দিনের স্বভাব থেকে বাদ দিন সে সব। এমন নিয়ম মানা খুব কঠিন নয় মোটেই, বরং একটু সচেতন হলেই এ সব নিয়ম মানা যায়।
আরও পড়ুন: ব্যায়াম বা ডায়েটের পরেও শরীরের বাড়তি চর্বি ঝরতে সময় নিচ্ছে? তা হলে এই পানীয় খান রোজ
কোন কোন বদভ্যাস রাশ
অনেক ক্ষণ না খেয়ে থাকলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ে৷ নিয়মিত এমন হলে বাড়াবাড়ি হতে পারে৷ কাজেই সময়ে খাওয়াদাওয়া করুন৷ দুপুরে ১০–১৫ মিনিট একটু ঘুমিয়ে নিলে যেখানে ক্লান্তি কমে, বিকেলে কাজের উৎসাহ বাড়ে, সেটাই দু’-এক ঘণ্টা পার করে দিলে বিপদ হয়৷ বাড়ে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা৷ সুস্থ জীবনের শত্রু হল নাইট ডিউটি৷ মাত্র বছর খানেক টানা করলে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বাড়ে ১৭ শতাংশ, ৩–৯ বছর করলে ২৩ শতাংশ ও ১০ বছর পেরিয়ে গেলে ৪২ শতাংশের মতো৷ এর প্রধান কারণ মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যাওয়া, যার প্রভাবে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না বলে সমস্যা হয়৷ এ বিপদ এড়াতে ঘুমোনোর আধ ঘণ্টা আগে ডাক্তারের পরামর্শ মতো মেলাটোনিন খান৷ নরম পানীয়তে থাকে কর্ন সিরাপ, যা নিয়মিত খেলে রক্তে ফ্রুকটোজের পরিমাণ বাড়ে৷ তার হাত ধরে ওজন বেড়ে সূচনা করতে পারে বিপদের৷ প্যাকেটের ফলের রসেও থাকে চিনি৷ নিয়মিত খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে৷ কমতে পারে ইনসুলিনের কার্যকারিতা৷ ব্রাউন সুগার, মধু বা গুড়ের ক্যালোরি চিনির চেয়ে কম৷ কাজেই মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে চিনির বদলে মাঝেমধ্যে খেতে পারেন৷ খুব ইচ্ছে হলে চিনিও খেতে পারেন এক–আধ সময়৷ আলুর যত বদনাম, ততটা খারাপ সে নয়৷ ১০০ গ্রাম আলুতে যেখানে আছে ১০০ ক্যালোরি।১০০ গ্রাম চাল–আটায় আছে ৩৪০ ক্যালোরি আছে৷ তার উপর আলুতে আছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা সুগার কমাতে সাহায্য করে৷ কিন্তু এর আবার গ্লাইসিমিক ইনডেক্স বেশি, অর্থাৎ খেলে চট করে সুগার বেড়ে যায়৷ কাজেই খেতে হয় অল্প করে, খোসাসমেত বা অন্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে৷ ভেজে তো একেবারেই নয়৷ গাদা খানেক আলুসেদ্ধ খাওয়াও ঠিক নয়৷ রক্তচাপ বেশি থাকলে কফি কম খান৷ কারণ রক্তচাপ বেশি হলে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা এমনিই বাড়ে, তার উপর কফি খাওয়ার ফলে গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়ায় গোলমাল হলে তা আরও বাড়বে৷ রক্তচাপ বাড়ানোর মূলে ধূমপানের বিরাট অবদান৷ তার হাত ধরে ডায়াবেটিস হওয়ার ও তার জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে৷ কাজেই এই অভ্যাসটি ত্যাগ করুন৷ নিয়মিত এক ঘণ্টা টানা টিভি দেখলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে প্রায় ৩.৪ শতাংশ৷ সারাদিন এতে মশগুল থাকলে ওজন ও ভুঁড়ি বাড়ার হাত ধরে আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়৷
আরও পড়ুন: চিকেন পক্সের সময় কী ভাবে সুস্থ রাখবেন নিজেকে? রোগীর যত্নই বা নেবেন কী ভাবে?
তা হলে কী করণীয়
সকালে ভাল করে খেলে শরীর তৃপ্ত হয়, খিদে কমে। সারা দিনে খাওয়ার পরিমাণ বাড়ে না। খাওয়ার পর ঘণ্টা খানেক হাঁটতে না পারলে রাতে কম করে খান৷ সন্ধে ৭–৮টার মধ্যে খেয়ে শোওয়ার আগে খিদে পেলে এক কাপ দুধ ও দুটো ফাইবার বিস্কুট খান৷ খাওয়াদাওয়ায় ক্যালোরির পরিমাপের বিষয়ে সচেতন থাকুন। ফলের রসের বদলে খান গোটা ফল৷ মিষ্টি পানীয় খান যথাসম্ভব কম৷
অনেকেই চিনি ছাড়তে হয় বলে চিনির বদলে আর্টিফিসিয়াল সুইইনার খান। সেটা আর খাবেন না৷ এটি আরও বেশি ক্ষতিকর। তেমন হলে চা খান অল্প চিনি দিয়েই৷ দিনভর তাহলে সন্দেশ–রসগোল্লার মধ্যে তৃপ্তি খুঁজে বেড়াতে হবে না৷ টিভি দেখুন কাজ করতে করতে৷ বিজ্ঞাপন বিরতিতে, সম্ভব হলে একটু ঘুরে নিন৷ দুপুরে খাওয়ার পর ১০–১৫ মিনিটের বেশি ঘুমোবেন না৷
প্রতি দিন ৩০–৪০ মিনিট জোর কদমে হাঁটুন, দৌড়ান বা সাঁতার কাটুন, সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন৷ এতে মানসিক চাপ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দুই–ই কমে৷ রক্তচাপ বেশি থাকলে ধূমপান ও ওজনের ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকুন৷
(শুরু হয়েছে আমাদের নতুন বিভাগ 'HELLO DOCTOR'। এ বারের বিষয় ‘ব্রণর সমস্যা’। এ বিষয়ে আপনার প্রশ্ন পাঠান query@abpdigital.in এই মেল আইডি তে। উত্তর দেবেন ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy