Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
rota virus

আপনার অসাবধানতায় রোটা ভাইরাসের হানায় প্রাণ যেতে পারে শিশুর, গরমে সতর্ক থাকুন

শিশুর শরীরে রোটা হানা ঠেকাতে এই শহরেও শুরু হতে চলেছে রোটা ভাইরাসের টীকাকরণ। ইউনিসেফ-এর আয়োজনে সম্প্রতি একটি সেমিনারও শহরের বুকে অনুষ্ঠিত হল। কী এই রোটা ভাইরাস? আপনার কতখানি সচেতনতা শিশুকে রক্ষা করতে পারে এই ভয়ানক অসুখ থেকে? রোটার খুঁটিনাটি জানালেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। শুনলেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।আমাদের দেশে পাঁচ বছরের কমবয়সিপ্রায় নয় লক্ষ শিশু প্রতিবছর হাসপাতালে ভর্তি হয় শুধু এই সংক্রমণের কারণে।যার মধ্যে প্রায় আশি হাজার শিশু মারাও যায়।

রোটার হানায় স্তব্ধ হয়ে যাতে পারে শৈশব। ছবি: শাটারস্টক।

রোটার হানায় স্তব্ধ হয়ে যাতে পারে শৈশব। ছবি: শাটারস্টক।

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ১২:০৯
Share: Save:

গরমে বা বর্ষায় সামান্য নিয়মের অদলবদল বা খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম যে সব অসুখ ডেকে আনে, তার মধ্যে ডায়রিয়া অন্যতম। শুধু কলকাতা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই এই সময় ডায়রিয়া দাপিয়ে বেড়ায়। আবহাওয়া পরিবর্তনের হাত ধরে এই অসুখ গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ে কিছু অসাবধানতাকে সঙ্গী করে। তাই একে ঠেকিয়ে রাখাই তখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় চিকিৎসকদের কাছে। বিশেষ করে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি।

শিশুদের শরীরে এই ভাইরাসের হানা ঠেকাতে দেশের অন্যান্য অনেক রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও এ বার শিশুদের জন্য শুরু হতে চলেছে রোটা ভাইরাস টীকাকরণ। পাঁচ বছরের নিচে বয়স, এমন শিশুদের ডায়রিয়ায় মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী এই রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ। ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, আমাদের দেশে পাঁচ বছরের কমবয়সিপ্রায় নয় লক্ষ শিশু প্রতিবছর হাসপাতালে ভর্তি হয় শুধু এই সংক্রমণের কারণে।যার মধ্যে প্রায় আশি হাজার শিশু মারাও যায়। এদের মধ্যে প্রায় ষাট হাজার শিশুর মৃত্যু হয় জন্মের দু’বছরের মধ্যেই।

পাঁচ বছরের কমবয়সিদের মধ্যে ডায়রিয়ার যত সংক্রমণ হয়, তার চল্লিশ শতাংশই রোটা ভাইরাসঘটিত। তাই এই টীকাকরণ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে দিনকে দিন। রোটা ভাইরাসের হানা ঠেকাতে গেলে সচেতন থাকতে হবে অভিভাবকদেরও। চিনতে হবে রোগের লক্ষণও।

আরও পড়ুন: মারাত্মক শ্রম ছাড়াই মেদ এড়িয়ে ফিট থাকুন এ সব উপায়ে

রোটা ঠেকাতে টীকাকরণে অবহেলা নয়।

কী ভাবে সংক্রামিত হয় রোটাভাইরাস? উপসর্গই বা কী?

এক শিশুর মল থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ভাইরাস অন্য শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং প্রবেশ করার এক থেকে তিনদিনের মধ্যে শিশুটির বারবার পাতলা পায়খানা, বমি, জ্বর, পেটব্যথা ইত্যাদি শুরু হয়।

রোগ নির্ণয় কী ভাবে?

অন্যান্য কোনও কারণে হওয়া রোগীকে দেখেসাধারণ ডায়রিয়া ও রোটাভাইরাসের আক্রমণে হওয়া ডায়রিয়ার মধ্যে কোনও পার্থক্য করতে পারেন না চিকিৎসকরা। মলের নমুনা সংগ্রহ করে এলাইজা বা পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা যায় এই ভাইরাস। তবে তা খরচসাপেক্ষ। সঙ্গে দ্রুততাও প্রয়োজন। সময় নষ্ট করা চলবে না একেবারেই।

চিকিৎসা কী?

যদি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে জানাও যায় যে রোটাভাইরাস থেকেই ডায়রিয়া হয়েছে, তবুও এর কোনও সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরালের কোনও ভূমিকা নেই এক্ষেত্রে। মূলত ওআরএস বা প্রয়োজনে স্যালাইন দিয়েই চিকিৎসা করা হয়। তাই এই টীকাকরণ আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়ছে।

তা হলে প্রতিরোধের উপায় কী?

রোটাভাইরাস টীকাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

কখন, ক’বার দিতে হবে টীকা?

শিশুর দেড় মাস, আড়াই মাস ও সাড়ে তিন মাস বয়সে অন্যান্য টীকার (ওরাল ও ইঞ্জেক্টেবল পোলিও টীকা, পেন্টাভ্যালেন্ট টীকা) সঙ্গে এই টীকা খাওয়াতে হবে।

আরও পড়ুন: টেনশন হলেই পেট গুড়গুড়? অবহেলা করলে বিপদ ডেকে আনছেন কিন্তু!

জন্মের ছ’মাস পর্যন্ত শিশুকে দিন কেবলই মাতৃদুগ্ধ।

কোথায় কী ভাবে খাওয়ানো হবে?

গ্রাম ও শহরের সমস্ত সরকারি টীকাকরণ কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা ফ্রিজ-ড্রায়েড এই ভ্যাকসিনটি ওর সঙ্গেই সরবরাহকৃত অ্যান্টাসিড ডাইলুয়েন্টে মিশিয়ে একটি সূচবিহীন সিরিঞ্জে আড়াই মিলিলিটার টেনে তা ফোঁটা ফোঁটা করে শিশুর মুখের ভিতর গালের দিকে ঢেলে দেবেন। তবে এই টীকার জোগান দেশে কম, সেটাও একটি চিন্তার বিষয় বইকি।

কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

তেমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এই টীকার। অন্যান্য অনেক টীকার তুলনায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নগন্যই বলা যেতে পারে, তাও সামান্য জ্বরজ্বালা হলেতা চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য।

কতখানি সুরক্ষা দেবে এই টীকা?

রোটাভাইরাল ডায়রিয়ার অধিকাংশ বিপজ্জনক সেরোটাইপ বা স্ট্রেনের বিরুদ্ধে নব্বই শতাংশ বা তারও বেশি সুরক্ষা দেবে এই টীকা। অবশ্য অন্য যেসব কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে, সেগুলোর প্রতিরোধও নানা ভাবে করা যায়। তার জন্য কিছু মূল নিয়মনীতি মানলেই চলে।

• খোলা জায়গায় শৌচকর্ম না করা।

• খাবার ঢেকে রাখা।

• শিশুর জন্মের পর ছ’মাস অবধি মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু না খাওয়ানো।

• শৌচের পরে ও খাবার আগে এবং শিশুকে খাওয়ানোর আগে ঠিক পদ্ধতি মেনে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া ইত্যাদি ভীষণ জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE