শারীরিক শ্রম, নির্দিষ্ট ডায়েট কিংবা প্রচুর হাঁটাহাঁটি— যা-ই করুন না কেন, যদি মূল কিছু বিষয়ে খেয়াল না রাখতে পারেন, তা হলে কিন্তু ওজন কমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন নিজেই। চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদদের পরামর্শ মেনে চললেই কেবল ওজন কমানোয় বাজিমাত করে ফেলবেন, এমনটা ভাববেন না কিন্তু।
বরং ডায়েটচার্ট বা অন্য নিয়ম-কানুন মেনে চলার সঙ্গে খেয়াল রাখুন জরুরি কিছু বিষয়ে। তা হলে সহজেই কমবে ওজন। নিয়মের ফাঁকে কোনও অনিয়ম করে ফেলছেন কি না তা বুঝে সামলে উঠতে পারবেন।
দেখে নিন ওজন কমানোর পথে কোন কোন টিপ্স কাজে লাগবে আপনার। সুস্থ থাকতে সব চেষ্টার সঙ্গে যোগ করে দিন সে সবও।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে সচেতন থাকুন, পুরুষদের পরামর্শ চিকিৎসকের
ওজন, বিপাক হার, উচ্চতা ইত্যাদির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জল খান নিয়মিত।
জল: খাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর জল খান। শরীরে জলের অভাব দেখা দিলে শরীর জল জমিয়ে রাখে। জল কখনও একা একা জমতে পারে না। নুনের সঙ্গে মিশে জমে যায় শরীরে। এতেও ফুলে যায় শরীর। তাই নুন কম খেলে আর প্রচুর জলের জোগান থাকলে শরীর কখনওই জল জমিয়ে রাখার প্রবণতায় ঝোঁকে না। আপনার ওজন, বিপাক হার, উচ্চতা ইত্যাদির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কতটা জল আপনার প্রয়োজন সেটা জেনে নিন চিকিৎসকের কাছ থেকে। সেই জল খান পর্যাপ্ত।
নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাওয়া: ওজন কমানো মানেই কিন্তু কম খাওয়া বা উপোস করে থাকা নয়। বরং এতে পিত্তরসের প্রভাবে ফ্যাট জমে শরীরে। অল্প অল্প করে খান। বার বার খান। সারা দিনে তিন-চার বারে যেটুকু খাবার খান, সেই পরিমাণ খাবারকেই অন্তত তিন ঘণ্টা অন্তর খান। এতে পাকস্থলী খালি থাকবে না। মেদ ঝরতে সুবিধা হবে বেশি।
প্রোটিনে জোর দিন: ওজন কমাতে গেলে শর্করা, ফ্যাট ও প্রোটিনের মধ্যে প্রোটিন জাতীয় খাবারে যোগ করুন বেশি করে। নো কার্বস, লো ফ্যাট ডায়েটে অভ্যস্ত হলে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন ঝরবে দ্রুত। শরীরে এনার্জির পরিমাণও এতে কমবে না।
আরও পড়ুন: টিকাকরণই রুখতে পারে হাম-পক্স
সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট নয়, ঠিক ডায়েটে আস্থা রাখুন।
তেল-মশলা বাদ: রাস্তার খাবার, মাঝে মাঝেই বিয়েবাড়িতে অনিয়ম— এ সব করলে কিন্তু ক্ষতি আপনারই। বাড়িতে না হয় তেল-মশলা কম দিয়ে রান্না করেন, কিন্তু বাইরে? অনেকেই ভাবেন মাঝে মাঝে খেলে কোনও ক্ষতি নেই। এই মিথ থেকে আগে বেরোন। দু’মাসে এক বার খাওয়া আর মাঝে মাঝেই খাওয়ার মধ্যে তফাত বুঝুন। প্রয়োজনে নিমন্ত্রণ বাড়ি এড়িয়ে চলুন। একান্তই তা না পারলে সেখানেও আমিষ পদে মন দিন বেশি। যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, পনির, ছানা, এ সবে মন দিন। তবে নিমন্ত্রণ বাড়ির রান্নায় তেল-মশলা প্রচুর থাকে। তাই অল্প কিছু খেয়ে নিয়মরক্ষা করুন।
খাদ্য-পিরামিড: সকালে ভরপেট খান, রাতে খান সবচেয়ে কম। খাদ্য-পিরামিডের এই নিয়ম মেনে চলুন। রাত বাড়লে একটা সময়ের পর শরীরে বিপাক হার সবচেয়ে কম থাকে। তাই ঘুমোনোর তিন-চার ঘণ্টা আগে খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। জলখাবার কখনওই বাদ দেবেন না।
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
শ্রম: হাঁটাহাঁটি, শারীরিক কসরত এগুলো নিয়ম মেনে করার পরেও কোনও না কোনও শারীরিক শ্রমে যুক্ত থাকুন। এতে শরীর সক্রিয় থাকে। বাইরে বেরোলেও হাঁটাহাঁটি করুন বেশি করে।
ঘুম আবশ্যক: ঘুম কম হলেও শরীরে চোরা ফ্যাট জমে। তাই কম ঘুমোনোর খথা ভুলেও ভাববেন না। পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে শরীরের ক্রিয়াগুলিকে সচল রাখার চেষ্টা করুন।
ধৈর্য: এত দিন ধরে জমিয়ে রাখা ওজন, চটজলদি কমবে এমনটা ভাববেন না। খুব নিয়ম মেনে চললে সুস্থ শরীরে চার কেজি পর্যন্ত কমে। থাইরয়েড, ডায়াবিটিস থাকলে মাসে আড়াই কেজি-তিন কেজি কমে। রোগা হওয়ার নেশায় পরে তাই অসুস্থ ডায়েট বা সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট খাবেন না। এতে শরীরে নানা জটিলতা দেখা যায়। তাই ধৈর্য ধরুন। ওজন ধীরে ধীরে কমলে তা ফিরেও আসে না সহজে।