Advertisement
E-Paper

কোভিড ১৯-এর ধাক্কায় বদলাচ্ছে হাতের লেখার ধরনও

কারও লেখায় ফুটে উঠেছে উৎকণ্ঠা, কারও লেখা দিগ্‌ভ্রান্ত (ডিরেকশনলেস), কারও লেখায় আবার অত্যধিক সংবেদনশীলতা ধরা পড়েছে। করোনা-আবহে হাতের লেখা নিয়ে করা এক সমীক্ষায় এমনই তথ্য পেয়েছেন হস্তলেখা বিশেষজ্ঞেরা অর্থাৎ, গ্রাফোলজিস্টরা।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০৩:২৮

কোভিড ১৯-এর ছাপ এ বার হাতের লেখাতেও! যা পাল্টে দিয়েছে হাতের লেখার অভিমুখ।

কারও লেখায় ফুটে উঠেছে উৎকণ্ঠা, কারও লেখা দিগ্‌ভ্রান্ত (ডিরেকশনলেস), কারও লেখায় আবার অত্যধিক সংবেদনশীলতা ধরা পড়েছে। করোনা-আবহে হাতের লেখা নিয়ে করা এক সমীক্ষায় এমনই তথ্য পেয়েছেন হস্তলেখা বিশেষজ্ঞেরা অর্থাৎ, গ্রাফোলজিস্টরা। ২২-৬২ বছর বয়সি প্রায় দু’শো জনের করোনা-পূর্বের হাতের লেখা ও বর্তমান লেখার তুল্যমূল্য বিচার করে তাঁরা জানাচ্ছেন, বর্তমান সময়ে সামগ্রিক ভাবে হাতের লেখা পাল্টে গিয়েছে। সিংহভাগ মানুষের লেখায় ‘কোন দিকে যাব, কী করব’ এই চিন্তাটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। টাল খেয়েছে মানসিক স্থিতিও।

যাঁর নেতৃত্বে ওই সমীক্ষা করা হয়েছে সেই গ্রাফোলজিস্ট মোহন বসু জানাচ্ছেন, মানুষের ‘বায়োলজিক্যাল ইগো’ যখন বহির্জগতের সংস্পর্শে আসে, তখন তার মধ্যে একটি লক্ষ্য থাকে। সেই লক্ষ্য ছোট হতে পারে বা বড় হতে পারে। অর্থাৎ কেউ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে পারেন, কেউ আবার সাধারণ জীবনেই সন্তুষ্ট হতে পারেন। এমনকি, বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোনও গন্তব্যস্থানে যাওয়াটাও এই লক্ষ্যের মধ্যে পড়ে। কিন্তু করোনা সেই লক্ষ্যেই আঘাত হেনেছে। মোহনবাবুর কথায়, ‘‘হাতের লেখা যেমনই হোক না কেন, নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে মানুষের হাতের লেখার অভিমুখ সোজা হয়। কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে প্রভাবিত হলে হাতের লেখা আর সোজা থাকে না। তখন সেটা বক্র, জটিল আকার ধারণ করে। যেমনটা বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়েছে।’’

গ্রাফোলজিস্টদের একাংশ জানাচ্ছেন, আদতে ‘হ্যান্ড রাইটিং’ বলে কিছু হয় না। আসল হল ‘ব্রেন রাইটিং’। কারণ, মস্তিষ্কই ঠিক করে দেয় যে লেখার ধাঁচ, অক্ষরের ধরন কী হবে। এবং হাতের লেখা, সই নির্ভর করে মানসিক পরিস্থিতি, পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপরে। পরিস্থিতি বদলালে হাতের লেখাও পাল্টায়। কিন্তু সেই পাল্টানো এক, আর বর্তমানের পরিবর্তন আর এক বিষয় বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, বর্তমান সময়ে মানুষের হাতের লেখায় ‘সংবেদনশীলতা’ (সেনসিটিভিটি) ফুটে উঠেছে। যার প্রতিফলন ঘটছে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে, এমনকি একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও। মোহনবাবুর কথায়, ‘‘বয়স নির্বিশেষে মানুষের হাতের লেখায় অত্যধিক সংবেদনশীলতা ধরা পড়েছে। যেখান থেকে তাঁরা বেরোনোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হচ্ছেন।’’

আরও পড়ুন: অজান্তে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অংশীদার ছোটরাও

ক্লিনিক্যাল গ্রাফোলজি নিয়ে কাজ করেন স্বপনকুমার চন্দ্র। তিনিও বলছেন, ‘‘মুডের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই দিনে একই মানুষের হাতের লেখা অন্য রকম হতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে যে সার্বিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে এই পরিবর্তন বেশি করে ধরা পড়েছে।’’

শুধুমাত্র হাতে গোনা কয়েক জন মানুষের হাতের লেখায় করোনা-আবহ কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা। ঘটনাচক্রে তাঁরা প্রত্যেকেই অবসরপ্রাপ্ত। তাঁদের মধ্যে এক জন বলছেন, ‘‘বাইরে বেরোই না। ফলে সংক্রমিত হব, এই ভয়টা আমার নেই। তা ছাড়া দিনের বেশির ভাগ সময়টাতেই নিজস্ব লেখালেখি, পড়াশোনা নিয়ে থাকি।’’ আর এক জন পেশায় চিকিৎসক। ষাটোর্ধ্ব ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘একটা বিষয় জানি, এই পরিস্থিতি থাকবে না। এই দুঃসময় কেটে যাবেই।’’

পরিস্থিতি কবে কাটবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু করোনা হাতের লেখায় যে পরিবর্তন আনল, তা কি স্থায়ী হবে?

গ্রাফোলজিস্টরা বলছেন, সেটাও অনিশ্চিত। পরিস্থিতি ঠিক হলে পুরনো হাতের লেখা ফিরে আসতে পারে। তবে যাঁদের মধ্যে এই ‘ট্রমা’ কাজ করবে, তাঁদের হাতের লেখার আদলে এই পরিবর্তন আরও কিছু দিন থেকে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: অজান্তে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অংশীদার ছোটরাও

Covid-19 Coronavirus Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy