শরীরকে সচল রাখতে শুধু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা পেশির ব্যায়াম যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, পেশিকে জুড়ে রাখা ফ্যাসিয়া টিসুকেও সচল রাখা। ত্বকের ঠিক নীচে সারা শরীরেই থাকে এই সংযোগকারী টিসু। শরীরের সচলতা, নমনীয়তা বজায় রাখতে, পেশির সঙ্কোচন-প্রসারণে, স্নায়ু এবং রক্তনালিকে আঘাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে ফ্যাসিয়া টিসু। ফিটনেস প্রশিক্ষক অরিজিৎ ঘোষাল বলছেন, “নিয়মিত হালকা কিছু ব্যায়ামে সচল থাকতে পারে এই টিসুগুলো।”
ফ্যাসিয়া টিসুর সমস্যা
বাহ্যিক আঘাত বা মাসল ক্র্যাম্পের কারণে হাড় বা পেশির পাশাপাশি ফ্যাসিয়া টিসুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই টিসুর প্রদাহে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, যন্ত্রণা হয়। দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকা-সহ আরও নানা কারণে ফ্যাসিয়া সংশ্লেষ শুকিয়ে গিয়ে ব্যথা ও স্টিফনেস বাড়তে পারে। ডিহাইড্রেশনের কারণেও ফ্যাসিয়া টিসু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
কী করবেন?
অরিজিৎ বলছেন, “মূলত ছয়টি ধাপ। প্রথমে ওয়ার্ম আপ, তার পরে বাউন্সিং মুভমেন্ট, ডায়নামিক স্ট্রেচিং, মায়োফ্যাসিয়াল রিলিজ়, প্রোপ্রিয়োসেপটিভ এক্সারসাইজ় এবং সবশেষে কুল ডাউন।” সব মিলিয়ে আধঘণ্টা সময় দেওয়াই যথেষ্ট।
- ওয়ার্ম আপের জন্য: মিনিট দুয়েক হাঁটতে বা দৌড়তে পারেন।
- বাউন্সিং মুভমেন্ট: স্কোয়াট, স্পট জগিং, জাম্পিং জ্যাক, মাউন্টেন ক্লাইম্বিং, বার্পি করতে পারেন।
- ডায়নামিক স্ট্রেচিং: পাঁচ-ছ’টা এক্সারসাইজ় একসঙ্গে করুন। আর্ম সার্কল, ওয়াকিং লাঞ্জেস, সুমো স্কোয়াট, সাইড লাঞ্জ, হাই নিজ়, পুশ আপ ইত্যাদি করতে পারেন।
- মায়োফ্যাসিয়াল রিলিজ়: এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে অন্য পায়ের তলায় সুইস স্টেবিলিটি বা মেডিসিন বল রেখে নাড়াচাড়া করুন এক-দু’মিনিট। প্ল্যাঙ্ক অবস্থানে থেকে থাইয়ের নীচে ফোম রোলার রেখে দুই কনুইয়ের উপরে ভর দিয়ে থাইয়ের সাহায্যে রোলারকে সামনে-পিছনে করুন। হাঁটুর পিছনে বা কাফ মাসলের নীচে ফোম রোলার রেখে মাসাজ, পিঠের নীচে রেখে তার উপরে গড়াতে পারেন। এই ফোম রোলারও বিভিন্ন ধরনের হয়। সমান, ঢেউ খেলানো... কেমন ফোম রোলার ব্যবহার করবেন, তা নির্ভর করে শরীরের কোন অংশে ব্যবহার করছেন, তার উপরে।
- প্রোপ্রিয়োসেপটিভ ব্যায়াম: চোখ বন্ধ করে ৩০ সেকেন্ড এক পায়ে দাঁড়ান। কুশনের উপরে স্কোয়াট করতে পারেন। রেজ়িস্ট্যান্স ব্যান্ড লেগ পুলস, হিল টু টো ওয়াক বা বসু বল বা হাফ-ব্যালান্স বল স্কোয়াটও করা যায়।
- কুল ডাউনে: ইনটেন্স স্ট্রেচ বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ়ও করতে পারেন।
—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সুবিধাসমূহ
ফ্যাসিয়া টিসু শক্ত হয়ে এলে চোট পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। অরিজিৎ বলছেন, “শারীরচর্চায় এই টিসু প্রসারিত ও নমনীয় হয়, ব্যথা কমে। শরীরের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে, ভারসাম্য বজায় থাকে। শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, স্ট্রেস কমে, ঘুম ভাল হয়।”
নরম মেঝে বা ম্যাটে এই ব্যায়াম করা জরুরি। ওয়ার্কআউটের সময়ে ব্যথা বা পেশিতে টান পড়লে তা বন্ধ করতে হবে। জল বেশি করে খেতে হবে। খালি পেটে এই ব্যায়াম করা চলবে না। প্রাথমিক ভাবে প্রশিক্ষকের নজরদারিতে বা পরামর্শ নিয়ে এই ব্যায়াম করুন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)