Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শরীরের আগে মনকে নিয়মে বাঁধুন

চল্লিশের পরেও কী ভাবে ফিট থাকবেন, তার টিপ্‌স দিলেন মিলিন্দ সোমন স্ট্রেস কাটাতে যোগব্যায়ামের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। মেডিটেশন ক্লাসেও অনেকে ভর্তি হন।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

পঞ্চাশোর্ধ্ব মিলিন্দ সোমনের শারীরিক ক্ষমতা দেখে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভেবে কূল পান না, এই বয়সেও কী করে এত ফিট থাকা যায়! স্বাভাবিক ভাবেই মনে হয়, হয়তো জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান। অথবা খুব কড়া ডায়েটের অনুশাসনের মধ্যে থাকেন। তবে ‘আয়রনম্যান’-এর কথা শুনলে মোহভঙ্গ হবে অনেকেরই। মিলিন্দের কথায়, ‘‘আমি কখনও জিমে যাইনি। চার দেওয়ালের মধ্যে বদ্ধ থাকতে পছন্দ করি না। খোলামেলা জায়গায় ব্যায়াম করি।’’

ডেস্কে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে অভ্যস্ত বাঙালির চল্লিশ পেরোতে না পেরোতেই এখন রোগভোগ বাসা বাঁধে শরীরে। সুস্থ থাকার জন্য তাঁরা হয় জিমে যান, নয়তো বা ডায়েট শুরু করেন। তবে গোড়ার কথা মনে করিয়ে দিলেন মিলিন্দ, ‘‘শরীর সচল রাখার জন্য যে ব্যায়াম করা হয়, আসলে সেটাও মেন্টাল এক্সারসাইজ়। শরীরকে চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত করার জন্য মনকে আগে ডিসিপ্লিন্‌ড করতে হবে। সেটাই ফিট থাকার আসল মন্ত্র।’’

বসে বসে কাজের ফলে শহুরে মানুষেরা অলস হয়ে পড়ছেন। আলসেমি এতটাই বেশি, যা শরীরের ক্ষতি করছে। তাঁদের জন্য মিলিন্দের টিপ্‌স, অফিসে লিফ্‌ট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করার। যে সময়ে ডেস্কে কাজ নেই, তখন একটু হাঁটাচলা করা যেতে পারে। আর এমন কোনও অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে যুক্ত থাকা, যেটা সে উপভোগ করবে। সেটা কারও জন্য সাঁতার হতে পারে, কারও জন্য স্কিপিং, কারও জন্য হাঁটা, কারও জন্য জগিং... টাস্ক নয়, বরং প্রসেসকে উপভোগ করাই আসল কথা।

দিগ্‌বিদিক না ভেবে অনেকে ডায়েট করতে শুরু করেন। মিলিন্দের মতে, যাঁর যাঁর পরিবার যে ধরনের খাবারে অভ্যস্ত, সেই খাবার উপযুক্ত পরিমাণে খেলেই আলাদা করে ডায়েট করার দরকার নেই। কারও যদি গুরুতর শারীরিক সমস্যা থাকে, তাঁর বিশেষ ডায়েটের প্রয়োজন হলেও হতে পারে। আর উচ্চতা অনুযায়ী যে ওজন হওয়া উচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি ওজন হলে তবেই ডায়েটের প্রয়োজন। ওবেসিটি ইদানীং কালে এক বড় সমস্যা। সেই প্রসঙ্গে মিলিন্দের মত, ‘‘শরীরের ওজন ততটাই হওয়া উচিত, যে ওজন শরীর ক্যারি করতে পারে। অর্থাৎ হাঁটা, চলা, দৌড়নো, স্কিপিং সব ধরনের অ্যাক্টিভিটি করা যায়।’’

চল্লিশের পরে ডায়েটে কোনটা রাখবেন, আর কোনটা বাদ দেবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন বিস্তর। এমনিতেই অনেক বাবা-মা ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাকে আমন্ড খাওয়ার অভ্যেস করান। যে কোনও ধরনের শস্যজাতীয় খাবার শরীরের জন্য ভাল। আমন্ডে উৎকৃষ্ট মানের ভিটামিন, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস থাকে। তাই মিলিন্দের মতে, চল্লিশোর্ধ্বদের রোজের ডায়েটে গুটিকয়েক আমন্ড থাকলে ভালই হয়। ডায়াবিটিসের সমস্যাও উঁকি দেয় চল্লিশের দোরগোড়ায়। ডায়েটে কি চিনি তবে বর্জনীয়? শরীরে যে কোনও খাবারের আত্তীকরণ ঘটে গ্লুকোজ় আকারে। কিন্তু অভিনেতার মতে, যে কোনও ধরনের পরিশোধিত চিনি বা চিনিজাতীয় দ্রব্যে মিষ্টত্বের পরিমাণ এতটাই বেশি, যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আখের রস, গুড়, তালমিছরি অর্থাৎ অপরিশোধিত চিনি ব্যবহার করাই শ্রেয়।

অনেকেরই আধুনিক লাইফস্টাইলের দোসর ধূমপান এবং মদ্যপান। মধ্য কুড়ি থেকে এই দু’টির প্রতি আসক্তি বাড়তে থাকে। মিলিন্দের মতে, শরীরকে গুরুত্ব দিলে কখনও এই দু’টি মাত্রাতিরিক্ত করা উচিত নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি স্মোক করি না। ড্রিংক করি, তবে খুব কম।’’

নেশার নেপথ্যে যে যুক্তিটা সকলের ঠোঁটস্থ... কাজের চাপ, পরিবারের চাপ। প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের সঙ্গে ‘স্ট্রেস’ কথাটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। মিলিন্দ বলছেন, ‘‘স্ট্রেস ভাল। সেটা কী ভাবে সামলানো হচ্ছে, তার উপরে সেই ব্যক্তির শরীর ও মনের সুস্থতা নির্ভর করে। খিদে পাওয়াও তো স্ট্রেস। কিন্তু যে মানসিক স্ট্রেসের কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে সব সময়ে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতে হবে। চাপের মধ্য দিয়ে কী শিখছেন, সেটা জরুরি।’’

স্ট্রেস কাটাতে যোগব্যায়ামের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। মেডিটেশন ক্লাসেও অনেকে ভর্তি হন। ফিট থাকার জন্য তা জরুরি? মিলিন্দ বললেন, ‘‘পা মুড়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যান আমি করি না। কিন্তু যেটা প্র্যাকটিস করি, সেটা হল মনঃসংযোগ বাড়ানো। ছোট কাজ হলেও, একাগ্রতার সঙ্গে করতে হবে।’’

ফিট থাকার হাজারো উপায় আছে। কে কোনটা ফলো করবেন, সেটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে মিলিন্দ মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘শরীরকে ফিট রাখার জন্য তার ধরন বোঝা জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Fitness Milind Soman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE