Advertisement
E-Paper

মাস্ক পরব নাকি পরব না? কখন কেমন মাস্ক দূরে রাখবে করোনা?

মাস্ক কি পরতে হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৫:০১
মাস্ক নিয়ে ধোঁয়াশা গোটা বিশ্বেই। ছবি: পিটিআই ও আইস্টক।

মাস্ক নিয়ে ধোঁয়াশা গোটা বিশ্বেই। ছবি: পিটিআই ও আইস্টক।

মাস্ক পরব, না কি পরব না? করোনা-হানায় ত্রস্ত বিশ্ব এখনও এই প্রশ্নের কাছে অসহায়। কারা পরবেন মাস্ক? কারা বাদ যাবেন এই তালিকা থেকে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনও পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলাচ্ছে। চিকিৎসকরাও মাস্ক পরা-না পরার বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চিকিৎসকরা ভারতে করোনা-হানার শুরুর দিকে জানান, সুস্থ মানুষদের মাস্ক প্রয়োজন নেই। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই মত নিয়েও তৈরি হয় সংশয়। ভাইরাসটির সংক্রমণের তীব্রতা ও ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা দেখে ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন বাইরে বেরলে সকলকেই মাস্ক পরে থাকার নিদান দেয়। তবে তার সঙ্গে এ-ও জানায় যে, শুধু মাস্ক পরলেই চলবে না, তার সঙ্গে কঠোর ভাবে মানতে হবে সোশ্যাল ডিসট্যান্স ও ঘন ঘন হাত ধোওয়ার বিষয়টিও। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থও অন্তত ছ’ফুট দূরে নেই ও সর্দি-কাশিতে ভুগছেন, এমন মানুষের সামনে থাকলে মাস্ক পরতে পরামর্শ দিয়েছে।

কিন্তু মাস্ক যে অপ্রতুল!

ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন অবশ্য জানিয়েছে, ঘরে কাপড় কেটে মাস্ক বানিয়ে নিতে। তাদের মতে, এতেই রোগ কম ছড়াবে৷ তাতে সায় দিলেন অধিকাংশ চিকিৎসকও। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ও মাস্কের প্রয়োজনীয়তার কথা শিকার করেন। তাঁর মতে, সম্ভব হলে নাগরিকদের বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা উচিত। নয়তো ঘরোয়া মাস্ক বানিয়ে নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: লকডাউনে হাতে সারা ক্ষণ মোবাইল? অজান্তেই কী ক্ষতি হচ্ছে জানেন?

এন৯৫ মাস্ক প্রয়োজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।

হাতে বানানো ঘরোয়া মাস্ক! জার্মান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জানায়, মোটেই কঠিন নয়। সাধারণ ফেব্রিক দিয়েই বানিয়ে নেওয়া যাবে এই মাস্ক। ইয়েল জ্যাকশন ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের লেকচারার শান-সোয়-লিনের মতে, মুখ, চিবুক ও নাক পুরোদস্তুর ঢেকে রাখুন, যাতে কোনও ভাবে কোনও ড্রপলেট বেরতে বা ঢুকতে না পারে। এমনকি, সারা বিশ্ব জুড়ে কেন চিকিৎসকরা মাস্ক পরার বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছেন না, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

ভারতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও নয়া নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যাঁরা সুস্থ আথবা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাঁরা বাইরে বেরনোর সময় ঘরে তৈরি অথবা পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাস্ক পরতে পারেন। এটা গোষ্ঠী সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করবে। একটা মাস্কই এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ অনেকটা সহজ করে দিতে পারে।

নিউ ইয়র্কে বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, সার্জিকাল মাস্কের পরিবর্তে জনসমক্ষে এলে কাপড়ের মাস্ক পরুন। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, যে সব দেশে মাস্ক পরার চল বেশি, সেখানে করোনার থাবাও অনেক কম৷ যেমন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাওয়াইন। তা হলে কি মাস্কই হয়ে উঠতে পারে ত্রাতা?

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর মতে, ‘‘মাস্ক পরা নিয়ে প্রথম থেকেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এই মুহূর্তে যে ভাবে অসুখ ছড়াচ্ছে, তাতে মাস্ক পরে যদি সেই অসুখ থেকে দূরে থাকা যায়, তা হলে তো ক্ষতি নেই। তবে চিকিৎসকরা যে ধরনের মাস্ক পরছেন, তা সাধারণের প্রয়োজন নেই। কারণ, তাঁরা চিকিৎসকের মতো রোগীর এক মিটারেরও কম দূরত্বে থেকে তাঁদের দেখভাল করছেন না। তাই তাঁদের জন্য এন ৯৫ বা এন ৮৭-এর প্রয়োজন নেই। বাইরে বেরলে সাধারণ সার্জিক্যাল বা কাপড়ের মাস্ক হলেও চলবে।’’

আরও পড়ুন: লকডাউনের জেরে ডায়ালিসিস বন্ধ করেছেন? এই ভুল ভুলেও নয়!

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কত রকম মাস্ক কার্যকর?

সর্বোচ্চ মানের মাস্ক মানেই এন ৯৫। তবে এই মাস্ক সাধারণের জন্য নয়। এই মাস্ক পরে বেশি ক্ষণ থাকাও যায় না। একমাত্র রোগীর চিকিৎসা ও দেখভালের সময় তাঁর কাছে যাওয়ার সময় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এই মাস্ক পরবেন। বরং এই ধরনের মাস্ক কিনে মজুত করলে প্রয়োজনে চিকিৎসকরা সেই মাস্ক পাবেন না। কাজেই এমন মাস্ক সংগ্রহে থাকলে তা নিকটবর্তী হাসপাতালে দান করা উচিত বলেই মত বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের।

নীল বা সবুজ রঙের সার্জিক্যাল মাস্ক: এই মাস্ক ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হবে। তিন স্তরযুক্ত এই মাস্ক বাইরে বেরলে আমজনতা পরতে পারেন। তবে এই মাস্ক এক দিনের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। তাই মাস্কের আকালে এই ধরনের মাস্ক প্রতি দিন জোগাড় করা কঠিন।

তা হলে উপায়?

টেরিলিন বা সুতির কাপড়ের মাস্ক হতে পারে ঘরোয়া মাস্ক হিসেবে সেরা বিকল্প। কাপড় ভাঁজ করে দু’পাশে দুটো ফিতে আলাদা করে সেলাই করে নিন।

তবে মাস্ক পরলেই তো হল না। পরার আগে ও পরেও মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম।

মাস্ক পরার আগে

ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নিন। অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ডওয়াশ বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মেশানো জল ও সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে নিন।

মাস্ক পরার পর

মাস্ক যেন নাক, মুখ ভাল ভাবে ঢাকে তা দেখতে হবে। পরার পর বার বার তাতে হাত দেবেন না। নইলে মাস্কে আটকে থাকা জীবাণুরা হাতে লেগে যাবে। সেই হাত থেকেই নাক-মুখের মাধ্যমে অসুখ ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে কাজের কাজ হবে না।

আরও পড়ুন: লকডাউনে দুধ, পাঁউরুটি ও শাকসব্জি, কী ভাবে সংরক্ষণ করবেন জেনে নিন

মাস্ক পরা ও খোলার সময় মেনে চলুন কিছু নিয়ম।

মাস্ক খোলার সময়

মাস্কের উপরের তলে হাত দিয়ে বা সামনের দিকে ধরে বা টেনে মাস্ক খুলবেন না। এতে মাস্কের জীবাণু হাতে লেগে যাবে। আবার হাতে থাকা জীবাণু পুরোটাই লেগে যাবে মাস্কে। পিছন দিক থেকে মাস্কের দড়ি বা ইলাস্টিক ব্যান্ড টেনে মাস্ক খুলুন। একে হাতের জীবাণু দড়িতে লাগলেও তা মুখের কাছাকাছি এসে সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না। মাস্ক খোলার পর অবশ্যই ভাল করে ফের সাবান ও হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত-মুখ ধোবেন।

কাচতে হবে মাস্কও। একই মাস্ক পর পর দু’দিন যেমন পরা যাবে না, তেমনই নিজের মাস্কও অন্যকে ধার দেওয়া যাবে না পরার জন্য। নিজেও অন্যের মাস্ক পরবেন না। সাবানজল বা কীটনাশক লোশন মেশানো জলে ভাল করে কেচে নিতে হবে মাস্ক। কড়া রোদে রেখে মাস্ক শুকিয়ে নিতে পারলে ভাল। একান্তই তা না পারলে ঘরের তাপমাত্রায় শুকিয়ে নিন মাস্ক। ভিজে মাস্ক কখনওই পরা যাবে না।

সুস্থ মানুষ কখন মাস্ক পরবেন

ঘরের মধ্যে থাকলে এবং সুস্থ মানুষদের সঙ্গে বসবাস করলে বাড়িতে মাস্ক পরে থাকার কোনও দরকার নেই। তবে বাড়িতেও বজায় রাখুন সোশ্যাল ডিসট্যান্স। এই ভাইরাস এখনও অবধি তিন মিটারের বেশি দূরত্বে ছড়াতে পারে না বলেই মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। কাজেই বাইরে থেকে ভাইরাসের ঘরে ঢোকার আশঙ্কা নেই। তবে বাড়িতে করোনা আক্রান্ত রোগী থাকলে এবং তার দেখভাল করতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরবেন। বাইরে বেরলে মাস্ক পরতে হবে সব সময়।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

Masks Novel Coronavirus coronavirus WHO
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy