Advertisement
০১ মে ২০২৪
mateor shower

রবি-সোমবার মধ্যরাতের পর দেখতে পাবেন উজ্জ্বলতম উল্কাবৃষ্টি

‘বৃষ্টিপাত’-এর পরিমাণ সর্বাধিক হবে ১৩ এবং ১৪ ডিসেম্বর। উত্তর গোলার্ধে দেখা যাবে রাত ২টোর পর। দক্ষিণ গোলার্ধে দৃশ্যমান হবে মধ্যরাতের পর থেকে।

এই সেই উল্কাবৃষ্টি। -ফাইল ছবি।

এই সেই উল্কাবৃষ্টি। -ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৪৮
Share: Save:

আকাশের এক প্রান্ত থেকে ছিটকে আর এক প্রান্তে পৌঁছবে উল্কা। একটা নয় অসংখ্য। ঘণ্টায় অন্তত ৬০টি। আর সেই অসম্ভব সুন্দর উল্কাবৃষ্টি শুরু হবে রবি ও সোমবার মধ্যরাতের পরেই। চলবে পরের দিনের ভোর পর্যন্ত। উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে আকাশের পূর্ব থেকে উত্তর-পূর্ব অংশে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই উল্কাবৃষ্টির নাম ‘জেমিনিড মেটিওর শাওয়ার’। বছরে যত রকমের উল্কাবৃষ্টি হয়, তার মধ্যে উজ্জ্বলতম এই জেমিনিড মেটিওর শাওয়ার।

ডিসেম্বরের ৪ তারিখ থেকেই এই উল্কাবৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে উত্তর গোলার্ধে। সেই ‘বৃষ্টিপাত’-এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হবে আগামী ১৩ এবং ১৪ ডিসেম্বর। উত্তর গোলার্ধে তা দেখা যাবে রাত ২টোর পর থেকে ভোর পর্যন্ত। আর আমাদের দক্ষিণ গোলার্ধে তা দৃশ্যমান হবে মধ্যরাতের পর। রাত যত গড়াবে ততই তার দৃশ্যমানতা বাড়বে।

আকাশ মেঘ বা কুয়াশা না থাকলেও রাতের আলোর জন্য কলকাতা বা শহরগুলিতে এই উল্কাবৃষ্টি কতটা দেখতে পাওয়া সম্ভব হবে তা নিয়ে যদিও কিছুটা সংশয় রয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের।

তবে কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলের অধিকর্তা দেবীপ্রসাদ দুয়ারি বলছেন, ‘‘শহর থেকে অন্তত ৫০ কি ৬০ কিলোমিটার দূরের এলাকাগুলিতে মাঝরাতের পর আকাশের পূর্ব থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে এই উল্কাবৃষ্টি দেখতে পাওয়া যেতে পারে। যদিও তা নির্ভর করছে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকবে কি না বা কতটা কুয়াশা কতটা থাকবে তার উপর। তবে অমাবস্যা প্রায় এসে পড়েছে বলে আকাশ তুলনায় অনেকটাই অন্ধকার থাকবে রাতে। চাঁদ ততটা প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবে না এই উল্কাবৃষ্টি চাক্ষুষ করা ক্ষেত্রে।’’

আরও পড়ুন- হকিং, পেনরোজ কি উদ্ভাসিত অমল আলোয়? কী বলছে ইতিহাস

আরও পড়ুন- করোনা রুখতে এবার আগাম প্রস্তুতি? ব্রেকথ্রু গবেষণা বঙ্গতনয়ার

দেবীপ্রসাদ জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে এই উল্কাবৃষ্টি দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ডায়মন্ডহারবার, সুন্দরবনের কিছু এলাকা, দার্জিলিং, ডুয়ার্স-সহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি এলাকা ও পুরুলিয়ার কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০টি উল্কাখণ্ডকে ছিটকে এসে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটতে দেখা যেতে পারে।

জেমিনিড মেটিওর শাওয়ার। ছবি- শাটারস্টকের সৌজন্যে।

জেমিনিড মেটিওর শাওয়ার প্রতি বছরই হয়। এই ডিসেম্বরে। বছরের অন্যান্য সময় দেখা যায় আরও নানা ধরনের উল্কাবৃষ্টি। তবে পৃথিবীতে যত রকমের উল্কাবৃষ্টি দেখা যায় তার মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল এই জেমিনিড মেটিওর শাওয়ার।

সল্টলেকের ‘পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার’-এর অধিকর্তা সঞ্জীব সেন বলছেন, ‘‘এ বার এই উল্কাবৃষ্টির উজ্জ্বলতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রাতের আকাশেও প্রচুর আলো থাকে বলে কলকাতার মতো শহর এলাকা থেকে এই উল্কাবৃষ্টি দেখতে পাওয়া যাবে কি না বলতে পারছি না।’’

এই উল্কাবৃষ্টি হচ্ছে কোথা থেকে?

উৎস একটি মহাজাগতিক বস্তু। যার নাম- ‘৩২০০ ফায়েথন’। আকারে মাত্র ৫ কিলোমিটার। উল্কাখণ্ডগুলিকে আকাশের যে অংশ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় তার কাছাকাছি দু’টি তারা রয়েছে ‘জেমিনি’ নক্ষত্রপুঞ্জে। একটির নাম- ‘পোলাক্স’। অন্য়টির নাম- ‘ক্যাস্টর’। কলকাতার আকাশে সাধারণত এই জেমিনি নক্ষত্রপুঞ্জটিকে সন্ধ্যা ৭টা থেকে দেখা যায়। আকাশের কিছুটা উত্তর-পূর্ব দিকে। তাই এই উল্কাবৃষ্টিকে ‘জেমিনিড’ও বলা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কেউ বলেন, এটি একটি গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েড। সৌরমণ্ডলের জন্মের পর বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ তৈরির আগেই যাদের জন্ম হয়েছিল। যারা কোনও গ্রহ হতে পারেনি তারাই হয়েছিল গ্রহাণু। যাদের পাথুরে শরীর। বরফ থাকলেও রয়েছে খুবই সামান্য পরিমাণে। জ্যোতিবিজ্ঞানীদের আর একটি অংশ মনে করেন, ৩২০০ ফায়েথন কোনও গ্রহাণু নয়। সেটি আসলে একটি বিলুপ্তপ্রায় ধূমকেতুরই অংশ।

কেন হয় উল্কাবৃষ্টি

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ৩২০০ ফায়েথন-এর মধ্যে আর বরফ নেই একটুও। দেবীপ্রসাদের কথায়, ‘‘এর সঙ্গে অতীতে ‘পাল্লাস’ নামে একটি গ্রহাণুর ধাক্কা লেগে থাকতে পারে। তার ফলে তৈরি হয়েছে প্রচুর ধুলো। সেই ধুলোই ছড়িয়ে পড়ছে মহাকাশে। আবার কোনও বিজ্ঞানীর ধারণা, সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে কোনও ধূমকেতুর মাথার বরফের সবটা উবে যাওয়ার পর যে দেহাবশেষ পড়ে রয়েছে, সেটাই ৩২০০ ফায়েথন।’’

শুধুই পাথর আর সেখান থেকেই বেরিয়ে আসছে ধুলো। প্রদক্ষিণের সময় যখন সূর্যের কাছে এসে পড়ে তখনই আমাদের নক্ষত্রের জোরালো টানে তার বুক থেকে মহাকাশে উড়ে আসে ধুলো। ধুলোর স্রোত। যেমন প্রদক্ষিণের সময় ধূমকেতু কাছে এলে সূর্যের টানে তার বরফ ছিটকে বেরিয়ে এসে তৈরি করে বরফের পুচ্ছ বা লেজ তেমনই উল্কাপিণ্ডগুলি ধুলোর স্রোতের মতো বেরিয়ে আসে সূর্যের টানে গ্রহাণুগুলি থেকে। তার পর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে সেগুলি জ্বলে ওঠে। যে ভাবে জলে ওঠে দেশলাই কাঠি। এই ধুলোর স্রোতের যথেষ্টই গতিবেগ থাকে বলে উল্কাখন্ডগুলিকে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেতে দেখা যায়। একের পর এক। এটাই উল্কাবৃষ্টি।

জেমিনিড উল্কারা ছুটছে কতটা জোরে?

ঘণ্টায় ৭৮ হাজার মাইল বা সেকেন্ডে ৩৫ কিলোমিটার। চিতা সর্বাধিক যে গতিবেগে ছুটতে পারে তার ১ হাজার গুণ। পৃথিবীর দ্রুততম গাড়ির গতিবেগের চেয়ে ২৫০ গুণ জোরে। আর একটি বন্দুক থেকে ছিটকে বেরনো বুলেটের গতিবেগের ৪০ গুণেরও বেশি হয় এদের গতিবেগ।

উত্তর গোলার্ধ বেশি ভাগ্যবান

সাধারণত ঘণ্টায় ৬০টি করে দেখা যায় জেমিনিড উল্কাবৃষ্টি। মানে, প্রতি মিনিটে একটি করে। তবে দক্ষিণ গোলার্ধে এই পরিমাণে দেখা যায় না জেমিনিড উল্কাবৃষ্টি। উত্তর গোলার্ধে তা দেখা যায় ২৫ শতাংশ বেশি পরিমাণে। উত্তর গোলার্ধের ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য।

ছবি -নাসার সৌজন্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Geminid mateor shower mateor shower
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE