Advertisement
E-Paper

রোজকার সঙ্গী মাইক্রোগ্রিন

ফাইন ডাইনিং হোক বা ঘরোয়া খাবার... মাইক্রোগ্রিনের বিচরণ অবাধ। কিন্তু কাকে বলে মাইক্রোগ্রিন? কেন বাড়ছে এর ব্যবহার?ফাইন ডাইনিং হোক বা ঘরোয়া খাবার... মাইক্রোগ্রিনের বিচরণ অবাধ। কিন্তু কাকে বলে মাইক্রোগ্রিন? কেন বাড়ছে এর ব্যবহার?

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০০:১৮

খাবারের চর্চায় বারবার নতুন কিছু উঠে আসে। কিন্তু এমন উপাদান খুব কমই আছে, যাতে একই সঙ্গে লুকিয়ে থাকে খাবারের সৌন্দর্যায়ন, ডায়েট এবং সুস্বাস্থ্যের মূলমন্ত্র। আর সেই সমস্ত রহস্যের চাবিকাঠিই রয়েছে মাইক্রোগ্রিনে। এক কথায় বলতে গেলে মাইক্রোগ্রিন হল বীজ থেকে সদ্য জন্মানো ছোট্ট ছোট্ট গাছ।

শুরুর কথা

’৮০-র দশকের শুরুর দিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় মাইক্রোগ্রিনের প্রচলন শুরু করেছিলেন রেস্তরাঁর শেফরা। মাটিতে বীজ পুঁতে বে়ড়ে ওঠা দশ-চোদ্দো দিন বয়সি গাছ তুলে শিকড় বাদ দিয়ে খাবারে পরিবেশন শুরু করেন তাঁরা। আরুগুলা, বেসিল, বিট, কেল আর সিলান্ত্রো— হাতে গোনা এই কয়েক ধরনের গাছ নিয়েই তৈরি হত মাইক্রোগ্রিন, যাকে বলা হত ‘রেনবো মিক্স’। প্রাথমিক ভাবে ফাইন ডাইনিংয়ের গার্নিশিংয়ে মাইক্রোগ্রিন প্রচলিত হলেও এখন সচেতনতা বেড়েছে। তাই শুধু মাত্র সাজানোর উপকরণ হিসেবেই আর আটকে নেই মাইক্রোগ্রিন। বরং চুলচেরা বিশ্লেষণে সামনে উঠে এসেছে এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা হাজারো গুণাগুণ। অনেকে আবার মাইক্রোগ্রিনকে তুলনা করেছেন মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে। সদ্য অঙ্কুরিত গাছটির মধ্যে লুকিয়ে থাকে নানা পুষ্টিগুণ। এগুলি সাধারণত এক-তিন ইঞ্চি লম্বা হয়। বীজ থেকে বার হওয়া দু’টি প্রথম ছোট্ট পাতা সম্বলিত গাছই হল মাইক্রোগ্রিন।

খাওয়ার পদ্ধতি

স্যালাড, সুপ, টোস্ট, স্টেক, স্মুদি, স্যান্ডউইচ... কিসে খাবেন না? আসলে মাইক্রোগ্রিন সব ধরনের রেসিপিতেই ব্যবহার করতে পারেন। সকালের জলখাবারে প্যানকেকের উপরে বা টোস্টের সঙ্গে যেমন মাইক্রোগ্রিন যায়, তেমনই স্যালাড বা স্মুদির সঙ্গেও পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে পারেন এগুলি। সুপ বা স্মুদির সঙ্গে খেতে চাইলে মাইক্রোগ্রিন রান্নার দরকার নেই। রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ ব্যাহত হয়। চারা কাটার পরে ভাল করে ধুয়ে পরিবেশন করলেই হল। তাই মাইক্রোগ্রিনের জন্য আলাদা কোনও রেসিপির প্রয়োজন নেই। দরকার শুধু মাত্র নিজের স্বাদ অনুযায়ী খাবারে তা মিশিয়ে দেওয়ার।

আসল রহস্য

• বীজ থেকে সদ্য অঙ্কুরিত মাইক্রোগ্রিনে সমস্ত পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। নানা ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য এটি উপকারী এবং দরকারিও।

• বহু ধরনের মাইক্রোগ্রিনে পলিফেনল পাওয়া যায়। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক কেমিক্যাল যা আদতে হৃৎপিণ্ডের নানা রোগ, ক্যানসার এবং অ্যালজ়াইমার্সের মতো সমস্যার মোকাবিলা করে।

• প্রাপ্তবয়স্ক গাছের ফল, বীজে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়, মাইক্রোগ্রিনে থাকে তার চার থেকে চল্লিশ গুণ পর্যন্ত বেশি পুষ্টি।

• চাষের জন্য বিশেষ ঋতুর প্রয়োজন নেই। বাড়িতে যে কোনও সময়ে সহজেই চাষ করতে পারেন। সামান্য যত্নেই হাতের কাছে পেয়ে যেতে পারেন পুষ্টির প্রাকৃতিক রসদ।

অপরিহার্য তালিকা

মাইক্রোগ্রিনের দুনিয়া জুড়ে এখন রয়েছে হাজারো নাম। তবে কিছু চাষ বাড়িতেই করতে পারেন।

• ব্রাহ্মী: ছোটবেলায় ঘিয়ে ভেজে ব্রাহ্মী শাকের পাতা খেয়েছেন অনেকেই। মাইক্রোগ্রিনের তালিকায় একদম গো়ড়ার দিকে রয়েছে ব্রাহ্মীর নাম। স্মৃতিশক্তি বাড়ানো ছাড়াও গ্যাসট্রিক আলসার, স্ট্রেস কমানো, শ্বাসযন্ত্রকে ভাল রাখে ব্রাহ্মী।

• কারি: রান্নায় শুধু ফোড়ন হিসেবেই নয়, কাঁচা খান কারি মাইক্রোগ্রিন। চুল মজবুত করতে, হজম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সার্বিক ভাবে শরীরের যত্ন নিতে সাহায্য করে কারি।

• লেমনগ্রাস: রান্নায় লেমনগ্রাসের গন্ধ ও স্বাদ অতুলনীয়। কিন্তু তা ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি ক্যানসার ক্ষমতা। পাশাপাশি ওজন কমাতে, রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে মিনারেল সমৃদ্ধ লেমনগ্রাস।

• হলুদ: কাঁচা হলুদের মতোই টারমারিক মাইক্রোগ্রিন অনবদ্য। নিউরোটক্সিন, ক্যানসার, বদহজম, কোলেস্টেরলের সমস্যা ছাড়াও হলুদ অ্যান্টি ফ্লেমেটারি। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় হলুদ। সামান্য গোলমরিচের সঙ্গে মিশিয়ে টারমারিক মাইক্রোগ্রিন খেলে তার উপকার বাড়ে বহু গুণ।

• পুদিনা: হজম ও মুখের সমস্যা মোকাবিলা করা ছাড়াও পুদিনা হতাশা দূর করার কাজে অনবদ্য।

• অ্যালো ভেরা: শুধুই সৌন্দর্য নয়, অ্যালোর মাইক্রোগ্রিন অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা, মধুমেহ মোকাবিলা করে। অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর অ্যালো ভেরা যন্ত্রণা উপশমেও সাহায্য করে।

• মোরিঙ্গা বা সজনে: এক কথায় সজনেকে সুপার মাইক্রোগ্রিন বলা হয়। মস্তিষ্ক, হৃৎযন্ত্র-সহ সার্বিক ভাবে শরীর ভাল রাখে সজনে।

বাড়িতেই চাষ

নানা ধরনের মাইক্রোগ্রিন অর্গ্যানিক পদ্ধতিতে চাষ করে বাজারে বিক্রি হয় দেদার। তবে সামান্য যত্নআত্তি করলে খুব সহজেই বাড়িতে চাষ করতে পারেন এর। তার জন্য দরকার সামান্য পরিকল্পনা।

কী কী লাগবে: গাছের বীজ, মাটি, চাষের ট্রে, জল দেওয়ার স্প্রেয়ার।

পদ্ধতি:

• মাটি দিয়ে ট্রে ভর্তি করুন।

• গাছের বীজ ছড়িয়ে দিন।

• বীজগুলি মাটির ভিতরে আলতো হাতে চেপে ঢুকিয়ে দিন। অথবা একটু মাটি নিয়ে বীজের উপরে ছড়িয়ে দিন।

• স্প্রেয়ারের সাহায্য জল ছেটাতে থাকুন। ট্রে ঘরের ভিতরেই রাখুন।

• চারা গাছ জন্মালে ট্রে সূর্যের আলোয় দিন।

• এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, মাইক্রোগ্রিনের ক্ষেত্রে দু’ধরনের বীজ হয়। এক ধরনের বীজ পোঁতার আগে জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। অন্যটার ক্ষেত্রে তা সরাসরি পুঁতলেই চলে।

• প্রি-সোকড বীজের ক্ষেত্রে এক গ্লাস জলে বীজ ভরে মসলিন কাপড় দিয়ে ঢাকা দিন। রাবার ব্যান্ডের সাহায্যে গ্লাসের মুখ আটকে দিন। সারারাত, নিদেন পক্ষে ৯-১০ ঘণ্টা এ ভাবে রাখুন। পরদিন বীজ ধুয়ে জল ফেলে গ্লাসেই রাখুন, যতক্ষণ না কল বার হচ্ছে। প্রতি ৪-৫ ঘণ্টা অন্তর এক বার করে বীজ ধুয়ে নিতে পারেন। এতে পচনের হাত থেকে বীজ রক্ষা করা যাবে। কল বার হওয়া মাত্র বীজ মাটিতে পুঁতে দেবেন। এ বার ট্রে সূর্যের আলোয় অর্থাৎ বারান্দা বা জানালার ধারে রাখতে পারেন। গোটা পদ্ধতিতে মাটিতে অন্তত ৪৫ শতাংশ ময়শ্চারাইজ়ার রক্ষা করা উচিত।

• অন্য বীজের ক্ষেত্রে ভিজিয়ে রাখার দরকার নেই। সরাসরি বীজ পুঁতে দিন। তবে চড়া সূর্যের আলোয় ট্রে রাখবেন না। স্প্রেয়ারের সাহায্যে দিনে দু’বার জল স্প্রে করবেন।

• একই মাটিতে অন্তত দু’বার মাইক্রোগ্রিন পুঁততে পারেন। এর জন্য এক বার বেবি গ্রিন কাটা হয়ে গেলে মাটির তলার শিকড় বার করে ফেলুন। তার পরে লাগাতে পারেন নতুন বীজ।

• জায়গা বাঁচাতে একই ট্রে ব্যবহার করুন একাধিক মাইক্রোগ্রিন চাষের জন্য। সে ক্ষেত্রে ট্রে ভাগ করে নিন কয়েক ভাগে। প্রতি ভাগের মাঝে একটি করে আইসক্রিমের চামচ পুঁতে তাতে বীজের নাম লিখে রাখতে পারেন।

ভিজিয়ে রাখা দরকার: জোয়ান, আলফাআলফা, বিট, ব্রকোলি, বাঁধাকপি, চানা ডাল, মেথি, মৌরি, রোজ়েলা, কচু, কড়াইশুঁটি, মুলো, রাজমা, পালং, সূর্যমুখী, শালগম, অমরান্থ ইত্যাদি।

সরাসরি পুঁতলে চলে: আরুগুলা, বেসিল, ধনে, তিসি, বেশির ভাগ সরষে, ওয়াটারক্রেস ইত্যাদি।

মাইক্রোগ্রিনের তালিকা দেখেই অনুমেয়, কত ধরনের সবুজ আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন। তাই বা়ড়িতে প্রাতরাশ থেকে রাতের খাবার... উপরে থাকুক সামান্য মাইক্রোগ্রিন।

মডেল: নয়নিকা, ছবি: অমিত দাস,

মেকআপ: বাবুসোনা পোশাক, লোকেশন,

মাইক্রোগ্রিন: লিভিং ফ্রি, বালিগঞ্জ

Diet Microgreen Fitness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy