গরম পড়লেই উচ্ছে দিয়ে তেতোর ডাল চড়ত উনুনে। টাটকা উচ্ছে সরু সরু চাকতির মতো করে কেটে সর্ষের তেলে ভেজে নেওয়া হত। তার পরে শুকনো লঙ্কা ফোড়নের সঙ্গে পড়ত ডালে। গ্রীষ্মের দুপুরে সেই তেতোর ডাল আর ভাতের সঙ্গে সামান্য আলুভাতেও ছিল অমৃতসমান। অন্য সময়ে উচ্ছে দেখে নাক সিঁটকানো ছেলেটি বা মেয়েটি খাবার দেখে একটুও আপত্তি তুলত না। কারণ রান্নার গুণে উচ্ছেও হয়ে উঠত সুস্বাদু। একই কথা খাটে শুক্তোর ক্ষেত্রেও। তেতো যতই খারাপ লাগুক, সোনামুখ করে উচ্ছে বা করলা দিয়ে রাঁধা শুক্তো সাপটে খান খাদ্যরসিক। উচ্ছেকে স্বাদু করে তোলার তেমনই আর এক লোভনীয় রান্না হল উচ্ছে দিয়ে মাছের ডিমের ঝুরো।
রান্নাটি ও পার বাংলার। তবে বঙ্গরসনাকেও তৃপ্ত করতে বাধ্য। কারণ মাছপ্রেমী বাঙালি মাছের ডিমেরও ভক্ত। মাছের ডিমের বড়া, সেই বড়ার টক, সবই বঙ্গজদের কানে মধুর ধ্বনি হয়ে প্রবেশ করে। অন্য দিকে, তেতোর প্রতি একটা স্বাভাবিক বিরাগ কাজ করে যে কোনও খাদ্যরসিকের মনে। শরীরের জন্য উপকারী, গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে পারে জেনেও সাধ করে তেতো খেতে মন চায় না। উচ্ছে দিয়ে মাছের ডিমের রান্নাটি সেই ভাল লাগা আর বিরাগের মধ্যে একটা ভারসম্য তৈরি করে। আর সেই প্রক্রিয়ার পরে শেষ পর্যন্ত ফল যা দাঁড়ায়, তাতে আর বিরাগের চিহ্নমাত্র থাকে না। শুধুই থাকে একরাশ ভাল লাগা।
কী ভাবে বানাবেন?

উপকরণ:
২৫০ গ্রাম উচ্ছে বা করলা পাতলা গোল করে কেটে অর্ধেক করে নেওয়া
৩০০ গ্রাম মাছের ডিম
৩টি বড় পেঁয়াজ মিহি করে কাটা
১ চা চামচ গোটা জিরে
৪-৫টি কাঁচালঙ্কা কুচি
১/৪ কাপ ধনেপাতা কুচি
১ চা চামচ হলুদগুঁড়ো
১ চা চামচ লাল লঙ্কাগুঁড়ো
১/৪ কাপ সর্ষের তেল
১ চা চামচ লেবুর রস
স্বাদমতো নুন
আরও পড়ুন:
প্রণালী:
মাছের ডিম ভাল করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নুন এবং ১/২ চা চামচ হলুদ দিয়ে মেখে নিন। খেয়াল রাখবেন, ডিম যেন কোথাও দলা পাকিয়ে না থাকে।
কড়াই বা প্যানে তেল গরম হলে গোটা জিরে ফোড়ন দিন। সুগন্ধ বেরোলে ওর মধ্যে প্রথমে দিন উচ্ছে (বা করলা, যা আপনি রান্নায় ব্যবহার করছেন) সামান্য নুন এবং বাকি আধ চামচ হলুদগুঁড়ো। আঁচ বাড়িয়ে ৪-৫ মিনিট ভাজার পরে তাতে দিন গুঁড়ো লঙ্কা, পেঁয়াজ কুচি এবং কাঁচালঙ্কা কুচি। কিছু ক্ষণ নাড়াচাড়া করে মাঝারি আঁচে রান্না হতে দিন। উচ্ছেয় হালকা বাদামি রঙ এলে আঁচ কমিয়ে দিন।
এ বার উচ্ছেয় মাছের ডিম দিতে হবে। কড়াইয়ে মাছের ডিম দেওয়ার সময়ে ক্রমাগত খুন্তি নাড়তে থাকুন। চেষ্টা করুন রান্না করা উচ্ছে প্রায় পুরোটাই ডিম দিয়ে মাখিয়ে নিতে। কম আঁচেই রান্না করতে থাকুন। প্রয়োজনমতো জল দিন। উচ্ছে এবং মাছের ডিম পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে গেলে নুন পরখ করে নিন।
তার পরে লেবুর রস এবং ধনেপাতা দিয়ে সামান্য নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিন। ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।