সাম্প্রতিক প্রজন্মের শাকসব্জি খাওয়ায় অনীহার কারণে বাংলার পুরনো দিনের বহু নিরামিষ রান্নাই হারিয়ে যেতে বসেছে। শহরের বহু বাড়িতেই ইদানীং আর আলু-পটল-কুমড়ো-এঁচোড়ের বাইরে তেমন কোনও সব্জি ঢোকে না। থোড়-মোচা কাটাকুটির সমস্যা। চিচিঙ্গে, কাঁকরোল, ঝিঙেও আসে কালেদিনে। অথচ গরমকালে শরীর ভাল রাখার জন্য মরসুমি শাকসব্জি খেতে বলছেন চিকিৎসকেরাও। ঝিঙে তেমনই এক গ্রীষ্মকালীন উপকারী সব্জি, যা দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন পুরনো দিনের বাঙালি রান্না ঝিঙের জলবড়া!
পুরনো বাংলার নিরামিষ রান্নাগুলিতে অনেক সময় আয়োজনের বাহুল্য থাকে। ব্যস্ত জীবনে সেই আয়োজন করার সুযোগ বা সময় হয়ে ওঠে না। ফলে সাধারণত বাঙালি বাড়িতে ঝিঙে দিয়ে ঝিঙেপোস্তই রান্না করা হয়। কেউ কেউ আবার চচ্চড়িতে দিয়ে দেন ঝিঙে। কিন্তু এই রান্নাটি দৈনন্দিন রান্নার থেকে স্বাদে আলাদা হলেও এটি বানাতে বিশেষ ঝক্কি পোহাতে হয় না। ঝিঙের জলবড়া বানানো যায় অতি সহজে এবং কম সময়ে।
কী ভাবে বানাবেন?
উপকরণ:
৫০০ গ্রাম (৪টি) ঝিঙে
১ কাপ মটর ডাল
৩ চা চামচ সর্ষের তেল
১ চা চামচ কালোজিরে
১ টেবিল চামচ কালো সর্ষের দানা
১ টেবিল চামচ সাদা সর্ষে দানা
১/২ কাপ নারকেল কোরা
৫-৬টি কাঁচালঙ্কা
১/২ চা চামচ লঙ্কাগুঁড়ো
স্বাদমতো নুন
সামান্য চিনি
প্রণালী:
মটর ডাল সারা রাত ভিজিয়ে জল পাল্টে পাল্টে বেশ কয়েক বার ধুয়ে নিন। তার পর মিক্সির জারে ঢেলে ২ চা চামচ জল দিয়ে মিহি ভাবে বেটে নিন। এই বাটা খুব বেশি তরল হবে না। তাই জল বেশি না দেওয়াই ভাল। বেটে নেওয়া ডাল একটি পাত্রে ঢেলে তার মধ্যে স্বাদমতো নুন এবং গুঁড়ো লঙ্কা মিশিয়ে একটি কাঁটাচামচ দিয়ে ফেটাতে থাকুন। ডালের মিশ্রণ ফুলে উঠে নরম হয়ে এলে বুঝবেন, ফেটানো হয়ে গিয়েছে। বড়া বানানোর জন্য মিশ্রণটি প্রস্তুত।
এ বার ঝিঙে ভাল ভাবে ধুয়ে, তার খোসা ছাড়িয়ে মাঝারি মাপের টুকরোয় কেটে নিন।
কড়াইয়ে দুই চা চামচ সর্ষের তেল গরম হতে দিন। গরম হলে তাতে দিন কালোজিরে ফোড়ন। সামান্য নাড়াচাড়া করে আঁচ বাড়িয়েই ঝিঙের টুকরোগুলো দিয়ে ভাজুন। তার পরে নুন দিয়ে কড়াইয়ে ঢাকা দিয়ে আঁচ কমিয়ে দিন। ২-৩ মিনিট ওই ভাবেই রাখলে ঝিঙে থেকে জল বেরোতে শুরু করবে।
এই সময়ে ঝিঙের উপরে চামচে করে ডালের মিশ্রণটি ছোট ছোট গোল বড়ার আকারে দিয়ে দিন। ঝিঙের জলেই সেদ্ধ হবে ওই বড়া। সেই জন্যই নাম ঝিঙের জলবড়া।
বড়াগুলো দিয়ে আঁচ কমিয়েই চাপা দিয়ে ৪-৫ মিনিট রেখে দিন। একটা দিক সেদ্ধ হয়ে গেলে চামচে করে উল্টে দিয়ে আবার চাপা দিয়ে রাখুন ৩ মিনিট মতো। এই সময়ে একটি মশলা বানিয়ে নিন।
মিক্সিতে নারকেল কোরা, সর্ষের দানা, পোস্ত, সামান্য নুন, দু’টি কাঁচা লঙ্কা আর অল্প জল দিয়ে ভাল ভাবে বেটে নিন। তার পরে কড়াইয়ের ঢাকনা খুলে ওই মশলাটি দিয়ে ভাল ভাবে মিশিয়ে নিন।
শেষে নুন দেখে নিয়ে, প্রয়োজনমতো নুন দিয়ে, সামান্য চিনি দিয়ে, উপরে কাঁচালঙ্কা চেরা এবং এক চা চামচ সর্ষের তেল ছড়িয়ে আঁচ বন্ধ করে চাপা দিয়ে রেখে দিন মিনিট পাঁচেক। তার পরে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।