Advertisement
E-Paper

ক্লিওপেট্রার মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে নেমে সমুদ্রগর্ভে মিলল নতুন রহস্য! লুকিয়ে ছিল প্রায় ২০০০ বছর ধরে

মিশরের আলেকজ়ান্দ্রিয়া থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে বোর্গ এল আরব শহর। প্রত্নতাত্ত্বিক দলের অনুমান, এখানেই সমাধিস্থ রয়েছেন রানি ক্লিওপেট্রা। সমুদ্রগর্ভে সেই সমাধিরই খোঁজ চলছিল। তবে মিলল নতুন এক রহস্য।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৭
সমুদ্রগর্ভে খোঁজ মিলল ডুবে যাওয়া বন্দর নগরের।

সমুদ্রগর্ভে খোঁজ মিলল ডুবে যাওয়া বন্দর নগরের। ছবি: সংগৃহীত।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার রানি ক্লিওপেট্রার মৃত্যু এখনও রহস্যময়। টলেমীয় সাম্রাজ্যের শেষ রানি ছিলেন তিনি। প্রেম, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার জন্য তিনি যতটা আলোচিত, সমধিক আলোচিত তাঁর মৃত্যুরহস্যের জন্য। বহু বছর ধরে খোঁজাখুঁজি চলছে। কিন্তু ক্লিওপেট্রার সমাধি কোথায়, তা এখনও অজানা। সেই খোঁজ করতে গিয়েই এ বার সন্ধান মিলল সমুদ্র গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এক নতুন ‘রহস্যে’র। মিলল এক প্রাচীন বন্দরনগরী। প্রত্নতাত্ত্বিক দলের অনুমান, এই বন্দরটি ক্লিওপেট্রার আমলেরই।

প্রচলিত ধারণা অনুসারে, খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ সালে মৃত্যু হয়েছিল মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা সপ্তম থিয়ার। তাঁর মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন ধারণা প্রচলিত রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে। কথিত আছে, প্রাচীন রোমান সেনাপতি মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। কেউ বলেন, যুদ্ধে প্রেমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন ক্লিওপেট্রা। আবার কেউ বলেন, সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। তাঁকে কোথায় সমাধিস্থ করা হয়েছিল, তা নিয়েও ভিন্ন মত রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের। অধিকাংশই মনে করেন, আলেকজ়ান্দ্রিয়ার রাজপ্রাসাদেই সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে। তবে অপর একাংশের মতে, প্রাসাদে নয়, অন্য কোথাও সমাধিস্থ করা হয়েছে রানিকে।

দ্বিতীয় মতেই বিশ্বাসী প্রত্নতাত্ত্বিক ক্যাথলিন মার্টিনেজ় এবং তাঁর গবেষক দল। ২০০৫ সাল থেকে এই নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্টিনেজ়। সেই সূত্র ধরেই আলেকজ়ান্দ্রিয়া থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পশ্চিমে মিশরের বোর্গ এল আরব শহরে সমাধির খোঁজ শুরু করেন তিনি। এই শহরেই নীল নদ এসে মিশেছে ভূমধ্যসাগরে। ২০২২ সালে এই শহরের তাপোসিরিস ম্যাগনা মন্দির থেকেই শুরু হয় খোঁজ। প্রাচীন এই মন্দিরের গভীরে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গের খোঁজ পান মার্টিনেজ়রা। ওই সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সোনা, বেশ কিছু আবক্ষ মূর্তি, ক্লিওপেট্রা এবং টলেমিদের ছবি খোদাই করা মুদ্রার সন্ধান পেয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। মন্দিরের ভিতর দিয়ে এই সুড়ঙ্গ গিয়ে মিশেছে সমুদ্রে।

সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়ার পর থেকে ওই শহরে প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁজের পরিধি আরও বিস্তার করেন মার্টিনেজ়রা। স্থল ভাগের পাশাপাশি সমুদ্রের গভীরেও খোঁজ চালান তাঁরা। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন সমুদ্রগর্ভ থেকে ‘টাইটানিক’ জাহাজকে খুঁজে বার করা প্রত্নতাত্ত্বিক বব ব্যালার্ড। খোঁজ চলাকালীন সমুদ্রের গভীরে মানুষের তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্যের সন্ধান পান তাঁরা। পাওয়া যায় পাথরের মেঝে, নোঙর এবং গ্রিক-রোমান যুগের পণ্য পরিবহণের পাত্র ‘অ্যামফোরা’র খোঁজ। সম্প্রতি মিশরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রক থেকে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষক দলের অনুমান, এই প্রাচীন মন্দিরশহর শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কেন্দ্রই ছিল না, এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্রও।

নতুন এই খোঁজ পাওয়ার পরে মার্টিনে়জ় জানান, প্রায় দু’হাজার বছর ধরে এটি সমুদ্রগর্ভে ডুবে রয়েছে। তাঁর কথায়, “২০০০ বছর পর আমরা প্রথম এখানে পা রাখলাম।” সমুদ্রগর্ভ থেকে যে সব প্রাচীন সামগ্রীর খোঁজ মিলেছে, তা থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক দলের অনুমান, সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য এই নৌবন্দর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী বিশ্লেষণ করে মার্টিনেজ়ের অনুমান, এই বন্দরনগরীতেই ক্লিওপেট্রাকে সমাধিস্থ করার সম্ভাবনা প্রবল। মার্টিনেজ়ের অনুমান, ক্লিওপেট্রার মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়েছিল তাপোসিরিস ম্যাগনা মন্দিরে। তার পরে ওই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে নিয়ে গিয়েই তাঁকে কোথাও সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

তবে সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাওয়া এই বন্দরনগরীর সঙ্গে ক্লিওপেট্রার যোগ রয়েছে বলে সরাসরি কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে মন্দিরের সুড়ঙ্গপথে পাওয়া সামগ্রী এবং এই ডুবে যাওয়া বন্দর থেকে খুঁজে পাওয়া সামগ্রী বিশ্লেষণ করে মার্টিনেজ়দের অনুমান, এটি ক্লিওপেট্রার আমলেরই বন্দর। এই বন্দরে আশপাশে কোথাও রানিকে সমাধিস্থ করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন তাঁরা। নতুন এই সন্ধানের পরে আরও বিশদে সন্ধান চালাতে চান মার্টিনেজ়রা।

থিয়ার আগে আরও ছ’জন ক্লিওপেট্রা থাকলেও, তাঁরা ইতিহাসের পাতায় সে ভাবে নাম করতে পারেননি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে মিশরের টলেমীয় সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন তিনি। তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার জন্য ইতিহাসবিদেরা অনেক বলে থাকেন, তিনি যেমন সুন্দরী, একই সঙ্গে ততটাই বিপজ্জনক ছিলেন। ইতিহাসের বিভিন্ন নথিতে বলা হয়েছে, রোমান প্রেমিক অ্যান্টনির সঙ্গেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল ক্লিওপেট্রাকে। কিন্তু তাঁর সেই সমাধি কোথায় রয়েছে, তা কারও জানা নেই। মৃত্যুর পর এতগুলি বছর পেরিয়ে গেলেও ক্লিওপেট্রার মৃত্যু এখনও রহস্যঘেরাই রয়ে গিয়েছে।

Egypt Queen Cleopatra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy