Advertisement
E-Paper

বয়সে মিশরের পিরামিডের সমসাময়িক! পেরুতে ৩,৫০০ বছরের পুরনো শহর খুঁজে পেলেন পুরাতাত্ত্বিকেরা

পেনিকোর ভগ্নস্তূপগুলির সঙ্গে কারাল শহরের ধ্বংসাবশেষের মিল রয়েছে! পৃথিবীর এক প্রান্তে যে সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মিশরের পিরামিড, ঠিক সেই সময় দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠছিল কারাল-সুপে সভ্যতা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫ ০৯:০২
প্রাচীন শহর পেনিকোর ছবি।

প্রাচীন শহর পেনিকোর ছবি। ছবি: রয়টার্স।

পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় ৩,৫০০ বছর। সিন্ধু সভ্যতার যুগ শেষ হয়ে এসেছে। ভারতে তখন বৈদিক যুগের সূচনাকাল। মিশরে রাজত্ব করছেন রানি হাটশেপসুট। ঠিক তখনই, সুমের, মিশর, ভারত থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, শিল্প-বাণিজ্যের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল লাতিন আমেরিকাও। গড়ে উঠেছিল একের পর এক প্রাচীন সভ্যতা।

সম্প্রতি পেরুর উত্তর বারাঙ্কা প্রদেশে খননকার্য চালিয়ে সেই সময়ের এক শহর খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। ৩,৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো শহরটির নাম পেনিকো। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সে সময় প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল, আন্দীয় এবং আমাজনীয় সভ্যতার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছিল এই শহর। পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পেনিকো। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে এই শহর গড়ে উঠেছিল।

ড্রোন ক্যামেরায় ধরা পড়া পেনিকোর চিত্র।

ড্রোন ক্যামেরায় ধরা পড়া পেনিকোর চিত্র। ছবি: রয়টার্স।

৫০০০ বছর আগে ওই এলাকাতেই বিকশিত হয়েছিল আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা কারাল-সুপে। সে সময় পশ্চিম এশিয়া জুড়ে একে একে বিভিন্ন সভ্যতার বিকাশ ঘটলেও, কারাল সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে— প্রাচীন ভারত, মিশর কিংবা সুমেরীয় সভ্যতার সঙ্গে কোনও সংযোগ ছাড়াই। পেনিকোর খোঁজ পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক দলের নেতা রুথ শ্যাডির মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারাল সভ্যতার অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি হওয়ার পরে গড়ে উঠেছিল পেনিকো। আট বছর ধরে ওই এলাকায় খনন চালিয়ে পাহাড়ি ঢালের উপর ১৮টি কাঠামোর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে উপাসনাস্থল এবং বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন রয়েছে।

পেনিকোর পাথর ও মাটির কাঠামো।

পেনিকোর পাথর ও মাটির কাঠামো। ছবি: রয়টার্স।

রুথের কথায়, ‘‘পেনিকো ছিল মূলত প্রাচীন পেরুর বাণিজ্যকেন্দ্র। এখান থেকে উপকূলীয় অঞ্চল, আন্দিজ এবং আমাজনের বাসিন্দাদের সঙ্গে বাণিজ্য চলত।’’ অবস্থানগত কারণেই উপকূলের অদূরে বনভূমি ঘেরা পাহাড়ের ঢালকে বাণিজ্যশহর গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিল সে সময়ের মানুষ। এলাকার ড্রোন ফুটেজে দেখা গিয়েছে, পাহাড়ি ঢালের উপর রয়েছে একটি গোলাকার ভগ্নস্তূপ। এর দেওয়ালে দেওয়ালে খোদাই করা রয়েছে নানা ভাস্কর্য। দেওয়ালে ‘পুতুতু’র ছবিও খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। এটি আদতে শাঁখের তৈরি এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র। যার শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যেত। ফলে মনে করা হচ্ছে, এটিই ছিল শহরের কেন্দ্র। তার চারপাশে এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাথর এবং মাটির তৈরি বেশ কয়েকটি বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। প্রতিটি ঘর থেকে ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, মাটির তৈরি মানুষ কিংবা পশুর মূর্তি, পুঁতি ও শামুকের খোল দিয়ে তৈরি গয়নার মতো নানা জিনিস মিলেছে।

সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো শহরের ভগ্নাবশেষ।

সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো শহরের ভগ্নাবশেষ। ছবি: রয়টার্স।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, পেনিকোর এই ভগ্নস্তূপগুলির সঙ্গে কারাল শহরের ধ্বংসাবশেষের মিল রয়েছে! পৃথিবীর এক প্রান্তে যে সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মিশরের পিরামিড, ঠিক সেই সময় দক্ষিণ আমেরিকার বুকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠছিল কারাল-সুপে বা নর্তে চিকো সভ্যতা। পেরুর সুপে উপত্যকায় অবস্থিত কারালে আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে (খ্রিস্টপূর্ব ৩,৭০০ অব্দ) এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। কারাল-সুপেই ছিল সবচেয়ে প্রাচীন আন্দীয় তথা আমেরিকান সভ্যতা। ক্রমে এক সময় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় কারালরা। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশক থেকে কারালে একাধিক বার খননের কাজ চালিয়ে ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ পাওয়া গিয়েছে। সেই খননেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রুথ। তাঁর কথায়, ‘‘কারাল শহর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর কারাল সভ্যতার কী পরিণতি হয়েছিল, তা বুঝতে সাহায্য করবে পেনিকো।’’ পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রকের গবেষক তথা প্রত্নতাত্ত্বিক মার্কো মাচাকুয়ে বলছেন, ‘‘দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা কারালের পর পরই এর উত্তরসূরি হিসাবে গড়ে উঠেছিল পেনিকো। আর সে কারণেই দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাসকে জানতে গেলে এই শহরের আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের নানা প্রান্তে প্রাচীন মায়া, আজটেক, ইনকা সভ্যতার নানা নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। সেগুলিকে ঘিরে গল্পকথাও কম নেই। পেরুর মাচু পিচু, পিসাক, কসকো, নাজকা লাইন্‌সের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে সেই ইতিহাসের নির্দশন চাক্ষুষ করতে ভিড় জমান পর্যটকেরা। দীর্ঘ সেই তালিকায় এ বার জুড়ল নতুন শহর পেনিকোর নাম।

peru Archaeology archaeological excavation New Town penico
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy