গবেষকরা যে ভাবে পরীক্ষা চালিয়েছেন আর তার ফলে যা পেয়েছেন
সেই বাড়তি ছিদ্রগুলি তৈরি হল কী ভাবে?
ধরুন, একটি মাঠে পর পর খুব সুন্দর ভাবে সারি সারি চেয়ার সাজানো রয়েছে। তার ফলে, সেই চেয়ারের সারিগুলির মধ্যে দিয়ে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়াটা খুব সহজ হচ্ছে না। এটাই হল আদতে ক্রিস্টাল বা কেলাসের অবস্থা। চেয়ারগুলি যেমন খুব সুন্দর ভাবে সাজানো রয়েছে মাঠে, তেমনই ওই কেলাসের ভিতরের সজ্জাটাও সুকঠিন নিয়মশৃঙ্খলে বাঁধা। এ বার আপনি কিছু চেয়ারকে তুলে মাঠের এক দিকে একে অন্যের উপর সাজিয়ে রাখলেন। আবার মাঠের অন্য দিকে রাখলেন আরও কিছু চেয়ারকে। একই ভাবে। তাতে কী হল? মাঠে চেয়ারগুলি যে সুন্দর ভাবে সাজানো ছিল, তা আর রইল না। নিয়মের মধ্যে একটু বেনিয়ম, বিশৃঙ্খলা এসে গেল। কিন্তু তার ফলে, লাভও হল একটা। চেয়ারগুলির পাশ কাটিয়ে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার কাজটা খুব সহজ হয়ে গেল। চেয়ারের মধ্যেকার ফাঁকগুলি অনেকটাই বেড়ে গেল বলে।
আরও পড়ুন- থরথরিয়ে কেঁপে উঠল মঙ্গল, এই প্রথম শোনা গেল গোঙানিও!
আরও পড়ুন- ব্রহ্মাণ্ডে আলো ফোটার আগে প্রথম ‘ডেটিং’!
গবেষকরাও সেটাই করেছেন। কেলাসের সঙ্গে অ্যামরফাস জাতীয় পদার্থ মিশিয়ে স্পঞ্জের মতো নতুন একটি জৈব যৌগ তৈরি করে। যার মধ্যে ফাঁকফোকড় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু কেলাসটা ভেঙেও যায়নি। তাই সেই পদার্থের শোষণ ক্ষমতাও বেড়ে গিয়েছে অনেক গুণ।
জলের বিষ পুরোপুরি ঝাড়তে কী ভাবে কাজে লাগবে এই পদার্থ?
অন্যতম গবেষক কৌশিক দে জানাচ্ছেন, সব ধরনের জলে মিশে থাকে একটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক পদার্থ। ‘বিস ফেনল-এ’। যা ক্যানসারের জনক। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘কার্সিনোজেনিক মেটিরিয়াল’। এদের জল থেকে দ্রুত ও পুরোপুরি তাড়ানোর কোনও উপায় বিশ্বের কোথাওই এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
রাহুলের কথায়, ‘‘তার কারণ, দু’টি। এগুলি খুবই সামান্য পরিমাণে থাকে জলে। আর তাদের চেহারাটাও খুবই ছোট্ট। চোখেই পড়ে না। যাকে দেখাই সম্ভব হয় না, তাকে শুষে নেওয়ার জন্য শোষক খুঁজে বের করাটাও তো খুবই কঠিন কাজ! তাই এখনও পর্যন্ত কোনও ফিল্টার, তা সে ঘরেরই হোক বা কোনও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের, কোথাও জল থেকে সেই মারাত্মক বিষ শুষে নেওয়া সম্ভব হয়নি, কোনও প্রযুক্তিতেই। কিন্তু আমাদের বানানো পদার্থটিতে যেহেতু সুকৌশলে ছিদ্রগুলিকে আমরা বড় করে তুলতে পেরেছি, কেলাসের নিয়মের মধ্যে বেনিয়ম, বিশৃঙ্খলাকে ঢুকিয়ে, তাই তার শোষণ ক্ষমতাও বেড়ে গিয়েছে অনেক গুণ। সালফোনিক অ্যাসিড মেশানোর পর কঠিন মিশ্রণটি থেকে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বেরিয়ে আসে, আমারে দেখেছি, সেটাই ওই ছিদ্রগুলিকে বড় করে দিচ্ছে। বেরিয়ে আসার জন্য ওই গ্যাস তার জায়গা করে নিচ্ছে। মাঠের চেয়ারগুলিকে যেমন আপনি এক দিকে তুলে নিয়ে গিয়ে মাঠ পেরনোর কাজটাকে সহজ করে দিয়েছিলেন, ঠিক সেই ভাবেই।’’