গভীর রাতে চিজ় জাতীয় খাবার খেলেই বিপদ! তাতেই নাকি পাল্লা দিয়ে বাড়বে অদ্ভুতুড়ে কিংবা ভয়ানক স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা! এমনটাই দাবি করা হয়েছে মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়।
রাতে ঘুমোনোর আগে চিজ় কিংবা দুগ্ধজাত খাবার খেলে দুঃস্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা বাড়ে, এমন অভিযোগ এর আগেও শোনা গিয়েছে। তবে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবে এর আগে তা নিয়ে বিশেষ চর্চা হয়নি। তাই খাবার, ঘুম এবং স্বপ্নের মধ্যে সম্পর্ক নিয়েই এই নতুন গবেষণা, যাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ঘুমোনোর আগে আমরা যা খাই, তা ঘুম এবং স্বপ্নের উপর কতটা প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন:
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন স্নায়ুবিজ্ঞানী টোর নিলসেন। সম্প্রতি কানাডিয়ান ম্যাকইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১,০৮২ জন মনোবিজ্ঞানের পড়ুয়ার উপর একটি সমীক্ষা করেছিলেন নিলসেন ও তাঁর দল। গবেষণার অংশ হিসাবে একটি অনলাইন ফর্মে তাঁদের খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের সময় ও মান, স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্নের উপর বিশদে লিখতে বলা হয়েছিল। কোন কোন বিশেষ খাবার খেলে তা তাঁদের ঘুম এবং স্বপ্নের উপর প্রভাব ফেলে, সে সম্পর্কে তাঁদের ধারণাও জানতে চাওয়া হয়েছিল সমীক্ষায়। নিলসেন জানিয়েছেন, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৫.৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের বিশ্বাস, ঘুমোনোর আগে তাঁরা কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে তাঁরা কী ধরনের স্বপ্ন দেখবেন। আর এই দলের বেশিরভাগ পড়ুয়াই এর জন্য দায়ী করেছেন দুগ্ধজাত কিংবা মিষ্টি খাবারকেই। ওই দলের ৩১ শতাংশ পড়ুয়া জানিয়েছেন, রাতে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে তাঁরা দুঃস্বপ্ন দেখেন। ২২ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের বিশ্বাস, এ জন্য চিজ় জাতীয় খাবারই দায়ী। সীমিত সংখ্যক ছাত্রের উপর সমীক্ষাটি করা হলেও এই তথ্যগুলি থেকে গবেষকেরা শেষমেশ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, ল্যাকটোজ়-অসহিষ্ণুতা (ইনটলারেন্স), অ্যালার্জি, দুঃস্বপ্ন দেখা কিংবা ঘুম কম হওয়া— এ সবের মধ্যে শক্তিশালী পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। খাবারের কারণে গ্যাস বা পেটে ব্যথা হলেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ফলে দুঃস্বপ্ন দেখার সম্ভাবনাও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞেরা আরও বলছেন, এর থেকেই বোঝা যায় যে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হলে ঘুম ভাল হতে পারে।
আরও পড়ুন:
নিলসেন বলছেন, ‘‘যাঁরা বিশেষ কোনও খাবারে অ্যালার্জি কিংবা ল্যাকটোজ়-অসহিষ্ণুতায় ভুগছেন, দেখা গিয়েছে যে তাঁদের ঘুম বেশি ব্যাহত হয়। তাঁরা দুঃস্বপ্নও বেশি দেখেন।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা যুক্তিসঙ্গতও। কারণ এটা আগেই প্রমাণিত যে বিভিন্ন শারীরিক সংবেদন স্বপ্ন দেখার উপর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। একটানা দুঃস্বপ্ন দেখলে ঘুমোনোর প্রতি অনীহাও তৈরি হতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, যাঁরা স্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাঁরা ঘুম ভাঙার পরেও অনেক ক্ষণ স্বপ্ন মনে রাখতে পারেন। অন্য দিকে যাঁরা অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাঁরা দুঃস্বপ্নই দেখেন বেশি। আবার সকালে উঠে স্বপ্ন মনেও রাখতে পারেন না তাঁরা। নিলসেনের কথায়, ‘‘এই নতুন অনুসন্ধানগুলি থেকে বোঝা যায় যে, কিছু খাদ্যাভ্যাসে বদল আনলেই দুঃস্বপ্ন দেখা কমানো যেতে পারে!’’