স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে দীর্ঘায়ু স্ত্রীরাই। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘায়ুর কারণও তাঁরা খুঁজে বার করেছেন। দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক পুরুষের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি বাঁচে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রীরা। যদিও পাখিদের ক্ষেত্রে হিসাব উল্টো। সে ক্ষেত্রে পুরুষেরা তুলনামূলক বেশি দিন বাঁচে।
জার্মানি, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি এবং বেলজিয়ামের প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা সম্মিলিত ভাবে স্তন্যপায়ী এবং পাখিদের আয়ু নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। মোট ৫২৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ৬৪৮ প্রজাতির পাখি, তাদের যৌনজীবনকে তাঁরা কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। চিড়িয়াখানায় রাখা প্রাণী তো বটেই, পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জঙ্গলে থাকা প্রাণীদেরও। এই সংক্রান্ত গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ নামক পত্রিকায়।
আরও পড়ুন:
দেখা গিয়েছে, স্তন্যপায়ীদের মধ্যে স্ত্রী প্রজাতির আয়ু পুরুষের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। কিন্তু পাখিদের মধ্যে পুরুষের আয়ু স্ত্রীর চেয়ে বেশি প্রায় পাঁচ শতাংশ। কিন্তু কেন? স্ত্রী এবং পুরুষের মধ্যে আয়ুর ফারাক নিয়ে একাধিক মত উঠে এসেছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। তবে ক্রোমোজ়োম সংক্রান্ত তত্ত্বে সমর্থন তুলনামূলক বেশি। একে বলা হচ্ছে ‘হেটারোগ্যামেটিক সেক্স হাইপোথিসিস’। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, যে হেতু স্ত্রী-র শরীরে দু’টি করে এক্স ক্রোমোজ়োম থাকে এবং পুরুষের শরীরে থাকে একটি এক্স ও একটি ওয়াই ক্রোমোজ়োম, সেই কারণেই স্ত্রীর আয়ু তুলনামূলক দীর্ঘ হয়। কী ভাবে? বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, যদি কখনও এক্স ক্রোমোজ়োমে মিউটেশন (পরিবর্তন) হয়, যাদের কাছে সেই ক্রোমোজ়োম একটির বেশি নেই, তাদের সঙ্কট বাড়ে। মিউটেশন সে ক্ষেত্রে দীর্ঘায়ুর পথেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জার্মানির বিশেষজ্ঞ ফার্নান্ডো কোলচেরো মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে এ কথা জানিয়েছেন।
একই যুক্তি পাখিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পাখিদের ক্ষেত্রে পুরুষের শরীরে থাকে দু’টি জ়েড ক্রোমোজ়োম। স্ত্রীর শরীরে থাকে একটি জ়েড এবং একটি ডব্লিউ ক্রোমোজ়োম। ফলে একই রকমের দু’টি ক্রোমোজ়োমধারী পুরুষের আয়ু স্ত্রীর চেয়ে বেশি হয়। তবে স্তন্যপায়ী হোক বা পাখি, উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে ব্যতিক্রম। তাই বিশেষজ্ঞেরা আরও সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। গবেষণা চলছে।
স্ত্রীর আয়ু বেশি হওয়ার কারণ হিসাবে দ্বিতীয় যে তত্ত্বটি উঠে আসছে, তার নাম ‘সেক্সুয়াল সিলেকশন হাইপোথিসিস’। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, পুরুষেরা বেশি আগ্রাসী হয়। তাই তাদের মধ্যে শত্রুতাও বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পুরুষ স্তন্যপায়ীরা নিজেদের মধ্যে মারপিট করে। এতে তাদের শক্তিক্ষয় হয়। ফলে আয়ুও কমে।
স্তন্যপায়ীদের নিয়ে এই গবেষণার ফল কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। মহিলাদের আয়ু পুরুষের চেয়ে বেশি। নেপথ্য কারণ হিসাবে লিঙ্গ নির্ধারক এক্স ক্রোমোজ়োমের কথাই বলা হয়। এ ছাড়া, অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপানও অধিকাংশ পুরুষের আয়ু কমিয়ে দেয় বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকার নজির রয়েছে এক মহিলার। ফ্রান্সের বাসিন্দা জিন ক্যালমেন্ট ১২২ বছর (১৮৭৫ থেকে ১৯৯৭) জীবিত ছিলেন। এ ছাড়া আর কোনও মানুষের জীবৎকাল ১২০ বছরের গণ্ডি পেরোয়নি। পুরুষদের মধ্যে দীর্ঘতম আয়ুর অধিকারী এখনও পর্যন্ত জিরোয়েমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর (১৮৯৭ থেকে ২০১৩) বেঁচে ছিলেন।