E-Paper

আত্মবিশ্বাসে ভর করে দৌড়তে হবে

ভারতের আর্থিক অবস্থা আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের মতো শক্তিশালী নয়। মহাকাশ গবেষণায় বরাদ্দ তুলনায় কম। কিন্তু কম বরাদ্দ নিয়ে তো বড় প্রকল্পে নামা যাবে না। বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

সন্দীপ চক্রবর্তী, ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্স-এর অধিকর্তা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০৬
scientist

চাঁদের মাটিতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার দূত ‘বিক্রম’ (ইনসেটে সন্দীপ চক্রবর্তী)। —ফাইল চিত্র।

চাঁদের মাটিতে সাবধানে পা ফেলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) দূত ‘বিক্রম’। ‘চন্দ্রযান ৩’-এর ল্যান্ডারের অবতরণের পরে দেশ জুড়ে নানা মহলে উন্মাদনাও আছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই কৃতিত্ব ‘ঐতিহাসিক’ তকমা পাবে। বাড়িয়ে দেবে ইসরোর বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ারদের আত্মবিশ্বাসও। তাঁরাও যে নিজেদের চেষ্টায় চাঁদে বা মঙ্গলে যন্ত্র নামাতে পারেন, তা এ বার মনে গেঁথে যাবে। বস্তুত, বিক্রমের অবতরণের সাফল্যে ভর করেই ভারত বুধ-সন্ধ্যায় এক সন্ধিক্ষণ পেরিয়ে এল। চন্দ্রাভিযানের নিরিখে রাশিয়া, আমেরিকা, চিনের সঙ্গে এ বার আমরাও কার্যত এক সারিতে বসলাম।

তবে, এ কথাও ঠিক যে, অনেক সময় লেগে গেল! কেরলের থুম্বা থেকে ভারত প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ করেছিল ১৯৬৩ সালে। তার পরে কেটে গিয়েছে ছ’দশক। এ বার চাঁদে যন্ত্র অবতরণ করালাম আমরা। এত দিন কেন লাগল, আনন্দের মধ্যেও সেই প্রশ্ন মনের মধ্যে খচখচ করছে। তবে, সেই অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। বরং সামনে দেখতে হবে, কী ভাবে আরও দ্রুত এগিয়ে চলা যায়। সেটা ভাবতে হবে।

গোড়াতেই একটু আত্মসমালোচনা করি। আমরা, ভারতীয়েরা ঐতিহ্যকে সম্মান করি। সেই সম্মান করতে গিয়ে কোথাও যেন অতীতের সাফল্যকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। তাই নতুনত্বের ঝুঁকি নিতে পারি না। ইসরোর চরিত্রেও সেই বৈশিষ্ট আছে। পিএসএলভি রকেট সাফল্য এনে দিয়েছে, তাই দীর্ঘদিন ধরে সেই রকেটেই আবদ্ধ আছে ইসরো। কিন্তু ভিন্ গ্রহে বা দূর মহাকাশে এ বার মানুষ পাঠাতে হলে কমজোরি রকেটে তা সম্ভব নয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে এত সময় পাওয়া যাবে না। দ্রুত গিয়ে আবার ফিরেও আসতে হবে। সে জন্য শক্তিশালী রকেট তৈরি করতে হবে। ক্রায়োজেনিক জ্বালানির সঙ্গে রকেটের ইঞ্জিনে ব্যবহার করতে হবে নিউক্লিয়ার জ্বালানি। উন্নত মহাকাশযান তৈরিতে জোর দিতে হবে নতুন ধরনের প্রযুক্তির আবিষ্কারে। বড় মাপের অভিযানে ভিন্ গ্রহে আরও উন্নত যন্ত্র পাঠিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে। ‘জোড়াতালি’ প্রযুক্তি দিয়ে আরও বড় সাফল্য আসবে না।

অনেকেই বলতে পারেন যে, ভারতের আর্থিক অবস্থা আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের মতো শক্তিশালী নয়। মহাকাশ গবেষণায় বরাদ্দ তুলনায় কম। কিন্তু কম বরাদ্দ নিয়ে তো বড় প্রকল্পে নামা যাবে না। বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তার পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন করে মহাকাশ প্রযুক্তির বাজারে নামতে হবে। তাতে ভারতের নিজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন তৈরি হবে, তেমনই অন্য দেশকে যন্ত্র বিক্রি করে আয়ও বাড়ানো যাবে। এর ফলে বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রও প্রস্তুত হবে। সেই পদক্ষেপ কিন্তু গবেষণার কাজেই আসবে।

শুরুতেই বলেছিলাম, ভারত এক সন্ধিক্ষণ পেরিয়ে এসেছে। এ বার তার সামনে এক পর্বান্তরের সময়। মহাকাশ অভিযানের ইতিহাস যদি দেখি, তা হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকে কয়েকটি পর্ব পেরিয়েছে। বিভিন্ন দেশ ভিন্ গ্রহে বসতির পরিকল্পনা করছে। অভিযানের ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করছে। আমার হিসাবে, আগামী ছ’-সাত দশক তো বটেই, এক শতাব্দী ধরেও এই পর্ব চলতে পারে। সেই পর্বান্তরের শরিক হতে গেলে ভারতকে এ বার বড় আকারে ভাবতে হবে। দূরদর্শী হিসাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। তা না হলে অন্য দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সাফল্যের দূরত্ব ক্রমশ বাড়বে। বুধবার সন্ধ্যার পরে তা কাম্য নয়। বরং ক্রমশ দূরত্ব কমিয়ে আনাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ কথা বলব না যে, ইসরো আগামী পাঁচ বছরেই নাসাকে ছুঁয়ে ফেলবে। তবে চেষ্টা করে দূরত্ব কমাতেই পারে। সে পথেই হাঁটা উচিত।

থুড়ি, হাঁটা নয়। এ দিনের সাফল্য ইসরোকে যে আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে, তাতে ভর করেই এ বার দৌড়নোর পালা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chandrayaan-3 Mission Moon Vikram Lander Sandip Chakraborty

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy