নক্ষত্রের আয়ু ফুরিয়ে এলে তা একসময় ঢলে পড়ে ‘মৃত্যুর কোলে’। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারদিক। মহাকাশে সেই সমস্ত নক্ষত্র বিস্ফোরণকে বলে ‘সুপারনোভা’। নক্ষত্রের মৃত্যুই এক-একটা কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) জন্ম দেয়। এত দূর পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের জানা। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণা সমস্ত হিসাব যেন পাল্টে দিতে চাইল। বিজ্ঞানীরা দেখলেন, আস্ত কৃষ্ণগহ্বরকেই গিলে নেওয়ার চেষ্টা করল ‘রাক্ষুসে’ এক নক্ষত্র!
পৃথিবী থেকে ৭৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে এক সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানীরা। ২০২৩ সালের সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে এত দিন ধরে চলেছে গবেষণা। অবশেষে বিজ্ঞানীরা এর ভিন্ন একটি ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। তাঁদের মতে, আদৌ ওই বিস্ফোরণ কোনও সাধারণ সুপারনোভা ছিল না। নক্ষত্র ধ্বংস হওয়ার ফলে আদৌ ওই বিস্ফোরণ হয়নি। বরং নক্ষত্রটি নিকটবর্তী কৃষ্ণগহ্বরকে গিলে ফেলার চেষ্টা করেছিল।
আরও পড়ুন:
ক্যালিফোর্নিয়ার মহাকাশ পর্যবেক্ষণকেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের ৭ জুলাই সুপারনোভাটি দেখা গিয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীরা একে সাধারণ সুপারনোভাই ভেবেছিলেন। মনে করা হয়েছিল, নক্ষত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে ওই সুপারনোভার সৃষ্টি হয়েছে, মহাকাশে যা হামেশাই হয়ে থাকে। এর নাম দেওয়া হয়েছিল এসএন ২০২৩ জ়েডকে়ডি। কিন্তু মাস ছয়েক পরের এক বিশ্লেষণে ধরা পড়ে, এটি সাধারণ সুপারনোভার চেয়ে আলাদা।
কোথায় আলাদা? বিজ্ঞানীরা জানান, সাধারণ সুপারনোভায় নক্ষত্র বিস্ফোরণে এক বারই জ্বলে ওঠে এবং ধ্বংস হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে একই নক্ষত্রকে দ্বিতীয় বার জ্বলে উঠতে দেখা গিয়েছে। এর পরেই বিজ্ঞানীদের একাংশ অনুমান করেন, নক্ষত্রটি নিকটবর্তী কৃষ্ণগহ্বরকে গিলে ফেলার চেষ্টা করেছিল। এনএসএফ ইনস্টিটিউট অফ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ফান্ডামেন্টাল ইন্টার্যাকশনের গবেষক আলেকজ়ান্ডার গ্যাগলিয়ানোর কথায়, ‘‘আমাদের বিশ্লেষণ বলছে, কৃষ্ণগহ্বরের কাছে কোনও বিপর্যয়মূলক সংঘর্ষ ঘটেছিল। তার ফলে নক্ষত্রটিও বিস্ফারিত হয়।’’
গবেষকেরা মনে করছেন, প্রকাণ্ড ওই মৃত্যুমুখী নক্ষত্র কৃষ্ণগহ্বরের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। একই কক্ষপথে আটকে পড়েছিল তারা। এই সময়ে নক্ষত্রটি বিপুল পরিমাণে ভর বিকিরণ করে। পরবর্তীতে সেটাই জ্বলতে শুরু করেছিল। যা প্রাথমিক ভাবে সুপারনোভা বলে ভুল করেন বিজ্ঞানীরা। মনে করা হচ্ছে, নক্ষত্র এবং কৃষ্ণগহ্বর এতটাই কাছাকাছি চলে এসেছিল যে, নক্ষত্র তার মহাকর্ষ বল প্রয়োগ করে কৃষ্ণগহ্বরটিকে গ্রাস করে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণ তার চেয়েও বেশি ছিল। ফলে নক্ষত্রটির উপর পাল্টা চাপ আসে এবং সুপারনোভা তৈরি হয়। নক্ষত্রের মৃত্যুতেই সুপারনোভার জন্ম— এত দিন এই ধারণা প্রচলিত ছিল। এ বার তার অন্য ব্যাখ্যাও পাওয়া গেল। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবেই সুপারনোভার রহস্য উন্মোচিত হবে।