Advertisement
E-Paper

মায়া সভ্যতার মানুষ কী ভাবে নিখুঁত মেলাতেন সূর্যগ্রহণের সময়? সেই পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা

ইউরোপীয়দের আক্রমণে আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতার বহু মূল্যবান নিদর্শন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। নিখুঁত নিশ্চয়তায় সে যুগে সূর্যগ্রহণের দিন-ক্ষণ বাতলে দেওয়া হত। কখনও ভুলচুক হত না।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯
প্রাচীন আমেরিকার মায়া সভ্যতায় নিখুঁত ছিল সূর্যগ্রহণের পূর্বাভাস!

প্রাচীন আমেরিকার মায়া সভ্যতায় নিখুঁত ছিল সূর্যগ্রহণের পূর্বাভাস! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বছরের কোন কোন সময় সূর্যগ্রহণ হবে, চাঁদ ঠিক কখন ঘুরতে ঘুরতে এসে দাঁড়াবে সূর্য আর পৃথিবীর মাঝে, একেবারে নিখুঁত মিলিয়ে দিতে পারতেন প্রাচীন মায়া সভ্যতার নাগরিকেরা। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই সভ্যতার ব্যাপ্তি। এই সময়কালে মেক্সিকো সংলগ্ন উত্তর ও মধ্য আমেরিকার প্রাচীন মানুষ কী ভাবে মহাকাশের হিসাবে এমন নিখুঁত হলেন? কী দেখে তাঁরা ভবিষ্যদ্বাণী করতেন? মায়া-রহস্য বহু দিন ভাবিয়েছে আধুনিক সময়ের বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি আমেরিকার দুই গবেষক মায়া সভ্যতার সেই ‘নিঁখুত ভবিষ্যদ্বাণী’র রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন। হিসাব কষে নতুন করে দেখিয়েছেন, কী ভাবে মায়ার সময়ে চলত আকাশ-গণনা।

ইউরোপীয়দের আক্রমণে আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতার বহু মূল্যবান নিদর্শন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সামান্য যা কিছু এখনও বাঁচিয়ে রাখা গিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ‘ড্রেসডেন কোডেক্স’। ৭৮ পৃষ্ঠার এই প্রাচীন পুঁথিতে জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিষশাস্ত্র, ঋতু, চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে মায়া-নাগরিকদের ধারণা লিপিবদ্ধ রয়েছে। সেখান থেকেই দেখা গিয়েছে, নিখুঁত নিশ্চয়তায় সে যুগে সূর্যগ্রহণের দিন-ক্ষণ বাতলে দেওয়া হত। কখনও ভুলচুক হত না। নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডারেই গ্রহণের খুঁটিনাটি বর্ণনা করা থাকত!

গ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণীতে বিজ্ঞানের চমক থাকলেও তার ‘উদ্‌যাপনে’ অবশ্য ছিল না। চাঁদের কারণে স্বয়ং সূর্য ‘দুর্বল’ হয়ে পড়ছে ভেবে মায়া-নাগরিকেরা ওই সময়ে নানা সামাজিক আচার পালন করতেন। সূর্যদেবতাকে শক্তিশালী করে তুলতে রক্ত উৎসর্গ করার নিয়মও প্রচলিত ছিল। সমাজের উচ্চস্তরের মানুষেরা, বিশেষত পুরোহিত এবং শাসকেরা ঠিক করে দিতেন, কোন গ্রহণে কী ভাবে কী উৎসর্গ করা হবে। কী ভবিষ্যদ্বাণী হত কী ভাবে? আধুনিক বিজ্ঞানের নিয়মেই কি?

‘ড্রেসডেন কোডেক্স’ অনুযায়ী, মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডারে ৭০০ বছরের গ্রহণের পূর্বাভাস থাকত। যে ছক দেখে এই পূর্বাভাস দেওয়া হত, তাতে ১ থেকে ৪০৫ চন্দ্রমাস (এক চন্দ্রমাস সাড়ে ২৯ দিনের সমান) পর্যন্ত হিসাব ছিল। এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এই ৪০৫ চন্দ্রমাস সম্পূর্ণ হলে আবার এক থেকে নতুন করে শুরু হত মাস-গণনা। সূর্যগ্রহণের হিসাবও সে ভাবেই করতেন মায়া-নাগরিকেরা। কিন্তু আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালব্যানির ভাষাবিদ জন জাস্টসন এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কের প্রত্নতত্ত্ববিদ জাস্টিন লোরি নতুন গবেষণায় নিখুঁত হিসাবের অন্য একটি পদ্ধতি দেখিয়েছেন।

গবেষকদের মতে, ৪০৫ চন্দ্রমাসের হিসাবে গণনা চললে সূর্যগ্রহণের পূর্বাভাস কখনওই মেলানো যেত না। একটি ছক সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই পরবর্তী গ্রহণের দিন চলে আসত। ফলে এ ক্ষেত্রে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন মায়ার বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা ৪০৫ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে একটি ছকের ৩৫৮তম মাসেই নতুন ছক শুরু করে দিতেন। এতে সূর্য এবং চাঁদের একই সরলরেখায় অবস্থানের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সঙ্গে মায়ার পূর্বাভাসের বিচ্যুতি হত মাত্র ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের। অর্থাৎ, পূর্বাভাসে যে সময় বলা থাকত, মূল গ্রহণ হত তার ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট পরে।

এ ভাবে গণনা এগোতে এগোতে গ্রহণের হিসাব মেলানোর জন্য কখনও কখনও নতুন ছক শুরু করে দেওয়া হত ২২৩তম চন্দ্রমাসেও। মূল গ্রহণের সঙ্গে তখন সময়ের বিচ্যুতি পৌঁছোত ১০ ঘণ্টা ১০ মিনিটে। ৩৫৮তম মাসে নতুন ছক শুরু করায় যে বিচ্যুতি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে এ ভাবে পুষিয়ে দিতেন বিশেষজ্ঞেরা। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা যে পদ্ধতিতে গ্রহণের দিনক্ষণ স্থির করেন, তার সঙ্গে মায়ার এই পদ্ধতি তুলনা করে দেখা হয়েছে। এর মাধ্যমেই ৩৫০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১১৫০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত টানা আমেরিকা থেকে দৃশ্যমান প্রতিটি সূর্যগ্রহণের পূর্বাভাস মিলিয়ে দিয়েছিল মায়া সভ্যতা। বিচ্যুতি এতটাই কমে এসেছিল যে, ১৩৪ বছরে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৫১ মিনিটে! মায়া গণকদের এই গুণে চমকিত আধুনিক বিজ্ঞানও। অনেকের মতে, প্রাচীন এই সভ্যতার মানুষ মহাকাশের সঙ্গে আধ্যাত্মিক যোগ খুঁজে পেতেন। তাই এ ক্ষেত্রে তাঁদের আগ্রহ, উৎসাহও ছিল বেশি।

Maya Civilization Solar Eclipse
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy