E-Paper

‘মিরা’র ঔজ্জ্বল্যে ধরা ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপ্তির রহস্য

হাব্‌ল ধ্রুবক নির্ণয়ের প্রচলিত পদ্ধতিগুলি নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:২৯
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

লাতিন শব্দ ‘মিরা’-র অর্থ অসাধারণ। ৩০০ আলোকবর্ষ দূরের ‘সিটাস’ নক্ষত্রপুঞ্জের সদস্য ‘ওমিক্রন সেটি’-র ‘মিরা’ নামকরণও তার এক বিশেষত্বের জন্য।

কী তা? এটি হল প্রথম খুঁজে পাওয়া কোনও ‘ভেরিয়েবল স্টার’ বা নক্ষত্র। এমন নক্ষত্র সর্বদা একই উজ্জ্বলতায় মিটমিট করে না। সময়ের সঙ্গে সেই উজ্জ্বলতায় নির্দিষ্ট পরিবর্তন দেখা যায়। সতেরোশো শতাব্দীতে প্রথম তার উজ্জ্বলতার পরিবর্তনশীলতা মাপা হয়েছিল। তার পরে একই বৈশিষ্ট্যের আরও নক্ষত্র ‘মিরা’-র গোত্রভুক্ত হয়েছে।

‘মিরা’ নক্ষত্রদের প্রসঙ্গ অবতারণার কারণ, পুণের ‘ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ (আইইউসিএএ)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা। যেখানে ‘মিরা’ নক্ষত্রদের সাহায্য়ে অনেক সূক্ষ্মতার সঙ্গে ‘হাব্‌ল ধ্রুবকের’ মান নির্ণয়ের দাবি করা হয়েছে। আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড প্রতিনিয়ত প্রসারিত হয়ে চলেছে। যে হারে ওই ব্যাপ্তি ঘটছে, তা-ই নির্দেশ করে হাব্‌ল ধ্রুবক। ‘কসমোলজি’ বা সৃষ্টিতত্ত্বে এর অপরিসীম গুরুত্ব। কারণ, ব্রহ্মাণ্ডের আকার তথা বয়স নির্ণয়ে সাহায্য করে এই ধ্রুবক।

হাব্‌ল ধ্রুবক নির্ণয়ের প্রচলিত পদ্ধতিগুলি নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তার বড় কারণ, বিভিন্ন পদ্ধতিতে পাওয়া ওই ধ্রুবকের মান একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের সদস্য, ৪০টি অক্সিজেন-সমৃদ্ধ ‘মিরা’ নক্ষত্রের সাহায্যে ওই ধ্রুবকের মান নির্ণয়ে নতুন পথ দেখাচ্ছে এই গবেষণা।

গবেষক দলের প্রধানঅনুপম ভরদ্বাজ জানাচ্ছিলেন, দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের মূল কাজ ছিল পৃথিবী থেকে ১৩-৫৫ হাজার আলোকবর্ষের মধ্যে থাকা ওই ‘মিরা’ নক্ষত্র সমাবেশের উজ্জ্বলতা ও ‘পালসেশন পিরিয়ড’ (নক্ষত্রের এক বার পূর্ণ ভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হওয়ার সময়) পরিমাপ করা। বৃহদাকার ওই নক্ষত্রগুলির সংকোচন ও প্রসারণ নির্দিষ্ট চক্রের মধ্যে দিয়ে যায়। তাই তাদের উজ্জ্বলতা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে (সাধারণত ১০০ থেকে ১০০০ দিন) একটি নির্দিষ্ট ধাঁচে বাড়তে কমতে থাকে। নক্ষত্রগুলি তুলনায় ঠান্ডা, পৃষ্ঠের উষ্ণতা যেখানে তিন হাজার কেলভিনের কাছাকাছি।

অনুপমের কথায়, “মিরা নক্ষত্রদের বেছে নেওয়ার মূল কারণ, এদের উজ্জ্বলতা ও পালসেশন পিরিয়ডের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হাব্‌ল ধ্রুবকের যে মান পাওয়া গিয়েছে, তার নির্ভুলতা ৩.৭ শতাংশ। যা অবিশ্বাস্য। এই প্রথম ‘মিরা’ নক্ষত্রদের নিয়ে এমন কাজ হয়েছে। অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জ়ার্নালেও আমাদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে।”

গবেষণায় যুক্ত ছিলেন স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউট তথা জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নোবেলজয়ী জ্যোতির্পদার্থবিদ অ্যাডাম রিস-ও।

তাঁর মত, গবেষণার ফল ইঙ্গিত করে যে, আগে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পাওয়া হাব্‌ল ধ্রুবকের মানে যে অসামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছিল, তা সম্ভবত পরিমাপগত ত্রুটির জন্য নয়। তার মূলে মৌলিক কোনও কারণ বা পদার্থবিদ্যার অজানা সূত্র কাজ করছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

universe Space

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy