Advertisement
E-Paper

প্রাণের উপযোগী পরিবেশের সন্ধান মিলতে পারে সপ্তগ্রহের একটিতে! নতুন আশায় বুক বাঁধছেন বিজ্ঞানীরা

আমাদের সৌরজগতের বাইরেও কি প্রাণ আছে? যদি থেকে থাকে, তা হলে তা পৃথিবী থেকে কত দূরে? এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই ২০১৭ সালে আমাদের মতো একটি সৌরমণ্ডলের হদিস পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৫৬

ছবি: নাসা।

মিলল ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টস’! প্রাণের উপযোগী পরিবেশের সন্ধান মিলতে পারে সপ্তগ্রহের একটিতে। হয়তো তা তরল জলে টইটুম্বুর হয়ে রয়েছে। একেবারে অতলান্ত, আদিগন্ত তরল জলের সাগর, মহাসাগরে। কিংবা সেই জল ঢাকা রয়েছে পুরু বরফের চাদরের তলায়! মহাকাশে থাকা অতি শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’-এর পাঠানো তথ্য পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিক ভাবে এমনটাই অনুমান বিজ্ঞানীদের।

আমাদের সৌরজগতের বাইরেও কি প্রাণ আছে? যদি থেকে থাকে, তা হলে তা পৃথিবী থেকে কত দূরে? এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই ২০১৭ সালে আমাদের মতো একটি সৌরমণ্ডলের হদিস পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানতে পেরেছেন, পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০ আলোকবর্ষ (আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, সেই দূরত্ব) দূরে একটি বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে সাতটি পাথুরে গ্রহ।

প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, জীবনের সন্ধান পাওয়ার জন্য এর থেকে ভাল সম্ভাবনা অতীতে পাওয়া যায়নি। তাঁরা নক্ষত্রটির নাম রেখেছিলেন ‘ট্র্যাপিস্ট-১’। তাকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরতে থাকা সাতটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে পৃথিবী এবং মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের মিল আছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দাবি করেছিলেন, নক্ষত্রটির একেবারে কাছে থাকা গ্রহ দু’টি পৃথিবীর সময়ানুযায়ী ১.৫ থেকে ২.৪ দিনের মধ্যে এক বার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে। সূর্য থেকে পৃথিবী যে পরিমাণ বিকিরণ পায়, বামন নক্ষত্রটি থেকে তার দুই থেকে চার গুণ বিকিরণ পায় গ্রহগুলি। বিজ্ঞানীদের অনুমান, তৃতীয় গ্রহটি নক্ষত্রটিকে চার থেকে ৭৩ দিনে প্রদক্ষিণ করে। অর্থাৎ, গ্রহটির তাপমাত্রা হতে পারে ৪০০ কেলভিনের কাছাকাছি, যে তাপমাত্রায় জল এবং জীবন থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তৃতীয় গ্রহটির নাম ‘ট্র্যাপিস্ট-১ই’ বা ‘প্ল্যানেট ই’ রেখেছেন বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রথম দু’টি গ্রহে তো প্রাণের অস্তিত্ব নেই-ই, তৃতীয় গ্রহতেও প্রাথমিক ভাবে কার্বণ-ডাই-অক্সাইডের অস্তিত্ব মেলেনি! কিন্তু বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, জন্মের সময় গ্রহের বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন গ্যাসের পুরু স্তর থাকে। হয়তো ‘প্ল্যানেট ই’-তেও সে রকম বায়ুমণ্ডল ছিল জন্মলগ্নে। কিন্তু নক্ষত্রটি এতটাই সক্রিয় এবং তা থেকে এত বেশি পরিমাণে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ ঘটে যে, সেই বায়ুমণ্ডলও উধাও হয়ে গিয়েছে! কিন্তু এতেই আশাহত হওয়ার কারণ নেই বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের অনুমান, পৃথিবীর মতো এই গ্রহেও গৌণ বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতো গ্যাস থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ‘ট্রান্সমিশন স্পেকট্রোস্কপি’ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ‘প্ল্যানেট ই’-তে তেমনই এক বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতির ইঙ্গিত মিলেছে।ন এই পদ্ধতিতে গ্রহগুলি নক্ষত্র থেকে যে আলো পায়, তা-ই পরীক্ষা করা হয়। যদি বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন বা কার্বণ-ডাই-অক্সাইডের মতো কোনও গ্যাস থেকে থাকে, তা হলে তার কোনও না কোনও ছাপ নক্ষত্র থেকে গ্রহে এসে পড়া আলোয় পাওয়া যাবে। বিজ্ঞানীদের যুক্তি, যদি সত্যিই কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা অন্য কোনও গ্রিনহাউস গ্যাস থেকে থাকে, তা হলে উত্তাপ ধরে রাখতে সক্ষম। যে উত্তাপে তরলই থাকবে গ্রহের জল।

বিজ্ঞানীদের মতে, ‘ট্রাপিস্ট-১’ নক্ষত্র থেকে অনেক অনেক দূরেই (সূর্য থেকে যতটা দূরত্বে রয়েছে বৃহস্পতি, শনি, নেপচুনের মতো গ্রহগুলি) সপ্তগ্রহের জন্ম হয়েছিল। নক্ষত্রমণ্ডলের যে এলাকাকে বলে ‘প্রাইমোর্ডিয়াল প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক’, যা ভরা ছিল ঘন গ্যাস আর জমাট বাঁধা বরফে। ‘প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক’ আসলে ঘন গ্যাসের এমন একটা খুব পুরু চাকতি, যেখান থেকে গ্রহ, উপগ্রহের জন্ম হয়। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই বহু দূরের প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক থেকে বেরিয়ে এসে পৃথিবীর আকারের সাতটি গ্রহ তাদের নক্ষত্রের (ট্র্যাপিস্ট-১) খুব কাছে এসে গিয়েছিল। সেই দূরত্ব, যাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘গোল্ডিলক্‌স জোন’ বা ‘হ্যাবিটেবল জোন’। অর্থাৎ, নক্ষত্র থেকে কোনও গ্রহ যে দূরত্বে থাকলে সেখানে প্রাণের জন্ম হতে পারে বা সেই প্রাণ সহায়ক পরিবেশ পেতে পারে বিকাশের জন্য। আমাদের সৌরমণ্ডলে যেমন মঙ্গল, শুক্র আর পৃথিবী রয়েছে ‘গোল্ডিলক্‌স জোন’-এ।’’

‘ট্র্যাপিস্ট-১’-এর মতো ‘হাতের নাগালের’ একটি নক্ষত্রমণ্ডল নিয়েও আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। নাম ‘আলফা সেনটওরি’, যা আমাদের নক্ষত্রমণ্ডল থেকে ৪.৩৭ আলোকবর্ষ দূরে। এতে তিন নক্ষত্র রয়েছে— আলফা সেনটওরি এ, আলফা সেনটওরি বি এবং প্রক্সিমা সেনটওরি। এর মধ্যে ‘আলফা সেনটওরি এ’ নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করে চলা একটি গ্রহে প্রাণের অঙ্কুর থাকতে পারে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ওই গ্রহটির নাম— ‘আলফা সেনটওরি এবি’। বিজ্ঞানীদের অনুমান, সেখানে জল থাকলেও থাকতে পারে। তবে সবটা এখনও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে।

telescope James Webb Telescope James Webb NASA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy