নজিরবিহীন: মুণ্ডিতমস্তকে বাংলার জুনিয়র হকি দলের খেলোয়াড়রা। যে শাস্তিতে বিতর্ক ক্রীড়ামহলে। নিজস্ব চিত্র
বাংলার জুনিয়র হকি খেলোয়াড়দের মস্তক মুণ্ডন কেলেঙ্কারি নিয়ে সারা বাংলা জুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘটনা নিয়ে যেমন খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে, তেমনই সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযুক্তকে শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন অনেকেই।
মস্তক মুণ্ডন করতে ‘বাধ্য হওয়া’ খেলোয়াড়দের অধিকাংশই তাদের প্রতিষ্ঠানের ছাত্র বলে তদন্তে নেমেছে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সাই) পূর্বাঞ্চলীয় শাখা। অন্য দিকে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করেছে রাজ্য হকি সংস্থাও। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে, পুরো ঘটনা নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হতে চলেছে হকির সঙ্গে যুক্ত একটি পুরনো ক্লাব। যাদের এক খেলোয়াড় ছিলেন ওই দলে।
ন্যাড়া মাথা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কোচ পঙ্কজ আনন্দ দোষী প্রমাণিত হলে তাঁরা কড়া অবস্থান নেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন ডিরেক্টর মনমিত সিংহ গোয়েন্ডি। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বললেন, ‘‘তদন্তে কোচ দোষী প্রমাণিত হলে আমরা ওঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইব। রাজ্য সংস্থা, বিওএ এবং হকি ইন্ডিয়ার কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে চিঠি দেব। সেটা না হলে এর পর বাংলা দলের জন্য খেলোয়াড় না-ও ছাড়তে পারে সাই। ওই কোচকে সাইতেও ঢুকতে দেব না। এটা একটা লজ্জাজনক ঘটনা।’’ এখানেই থেমে থাকেননি সাই ডিরেক্টর মনমিত। বলেছেন, ‘‘ওঁর অফিস ইস্টার্ন রেলকেও চিঠি দিয়ে সরকারি পর্যায়ে ওঁকে বরখাস্ত করার জন্য বলব। যা শুনছি, তা তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার। প্রত্যেক মানুষের মস্তক মুণ্ডনের নানা ধর্মীয় রীতি আছে। কোন অধিকারে উনি ওটা করলেন? এর পর কেউ হকি খেলতে সাই সেন্টারে আসবে!’’
জবলপুরে জুনিয়র জাতীয় হকির কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে বাংলার যে ১৭ খেলোয়াড় খেলেছিল তাদের মধ্যে ১৩ জনই সাইয়ের। তাঁদের কয়েক জনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথাবার্তা বলেছেন সাই কর্তারা। কী ঘটনা ঘটেছিল, প্রত্যেকের কাছ থেকে লিখিত ভাবে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সাই সূত্রের খবর, খেলোয়াড়েরা সাই কর্তাদের বলেছেন, কোচ তাঁদের জবলপুরেই বলেছিলেন মাথা ন্যাড়া করতে। কিন্তু সেলুনে প্রত্যেকের জন্য দেড়শো টাকা করে চেয়েছিল। সেই টাকা অনেকের কাছে ছিল না। এক খেলোয়াড় নাকি বলেছেন, ‘‘হেরে ফেরার পর কোচ লাঠি হাতে বলেছিলেন, ন্যাড়া না হলে কোনওদিন আর বাংলা দলে সুযোগ পাবে না। বাড়ি ফিরে ন্যাড়া হয়ে আমাকে ছবি পাঠাবে।’’ অভিযুক্ত ওই কোচ পঙ্কজ আনন্দ অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। এ দিন সকালে মেয়েদের অনুশীলনেও তাঁকে দেখা গিয়েছে।
সারা দিন চুপচাপ থাকার রাতে অবশ্য রাজ্য হকি সংস্থা তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। যাতে সচিব নিজে ছাড়াও রয়েছেন প্রাক্তন অলিম্পিয়ান গুরবক্স সিংহ এবং এক কর্তা গোপীনাথ ঘোষ। আজ মঙ্গলবার তাঁদের আলোচনায় বসার কথা। কিন্তু এই কমিটি ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কমিটির অন্যতম সদস্য গুরবক্স সিংহ ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমকে বলে দিয়েছেন, ‘‘ওরা জবলপুরে ন্যাড়া না হয়ে এখানে এসে সেটা হল কেন? ওদের হয়তো অন্য কেউ প্রভাবিত করে থাকতে পারে।’’
তাঁর এই ধরনের মন্তব্য তদন্তকে ইতিমধ্যেই প্রভাবিত করছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমনিতে রাজ্য হকি সংস্থা থেকেও না থাকার সমান। চূড়ান্ত ডামাডোল সেখানে। ডেকার্স লেনে প্রায় অন্ধকার অবস্থায় পড়ে থাকে সংস্থার ঘর। মাঝে সেখানে তালাও ঝুলেছে। প্রেসিডেন্ট-সহ অর্ধেক নির্বাচিত সদস্য পদত্যাগ করে বসে আছেন। বয়স বেশি হওয়ার জন্য গুরবক্স ও গোপীনাথও পদত্যাগ করেছেন। তাঁরাই রয়েছেন কমিটিতে। তবে কারও কারও অনুমান, মানবাধিকার কমিশন হস্তক্ষেপ করলে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy