Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Sports

গোল খেলেই লাখের অফার! কলকাতা ময়দানে বেটিং চক্রে জড়িত নামী-দামিরাও?

বুকি টেলিফোনে যে দুই ফুটবলারের নাম বলেছে, সেই দুই ফুটবলার রাকেশ মাসি ও দীপক মণ্ডল, দু’জনেই তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আনন্দবাজার ডিজিটালকেরাকেশ বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে বলে কানে এসেছে। এই ধরনের কোনও ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। ক্লাব থেকে আমাকে আপাতত বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

শুভম রায়। এই গোলকিপারকেই বুকিরা ফোন করে ঘুষের প্রস্তাব দেয়।- নিজস্ব চিত্র।

শুভম রায়। এই গোলকিপারকেই বুকিরা ফোন করে ঘুষের প্রস্তাব দেয়।- নিজস্ব চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ১৭:২৭
Share: Save:

মোবাইলের অন্য প্রান্তের প্রস্তাবটা শুনে চমকে উঠেছিলেন শুভম। বলছে কী! গোল খেলেই এক লাখ টাকা! নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না শুভমের। শুভম রায়। টালিগঞ্জ অগ্রগামী এফ সি-র গোলকিপার।

মোবাইলের ও পার থেকে ভেসে এল বুকির গলা, ‘‘৭৫ মিনিট পর গোল খাবি। তা হলেই তুই এক লাখ টাকা পাবি। কেউ জানবে না।’’ ক্যালকাটা প্রিমিয়ার লিগ (সিএফএল) শুরুর সময়েই এই উদীয়মান গোলরক্ষককে টাকার টোপ দেয় বুকিরা।

তাঁকে জানানো হয়, আরও অনেক ফুটবলারই নাকি এ ভাবে ‘সেটিং’ করে থাকেন। এর পরেই সেই বুকি যে দুই ফুটবলারের নাম নিল, সেই নাম শুনে চমকে গিয়েছিলেন শুভম রায়। তাঁদের মধ্যে এক জন দীপক মণ্ডল, অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ফুটবলার ভারতীয় দলেও খেলেছেন। কলকাতার ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ক্লাবে দাপটের সঙ্গে মিডফিল্ড এবং স্টপার পজিশন সামলে ছিলেন। এখন অবশ্য তিনি এফসিআই ক্লাবে।

আর এক জন রাকেশ মাসি। তিনিও ভারতীয় দলে ছিলেন। এখন তিনিও টালিগঞ্জ অগ্রগামী এফসি-র খেলোয়াড়। যদিও এই অডিয়ো রেকর্ডিং বা এই সব অভিযোগ সত্য কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু বুকিদের এ হেন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ময়দানের সংশ্লিষ্ট মহলে।

বেটিং-এর অভিযোগ উঠেছে ফুটবলার দীপক মণ্ডল (বাঁ দিকে) ও রাকেশ মাসির বিরুদ্ধেও

এখনও সিএফএল শেষ হয়নি। এর মধ্যেই এই চাঞ্চল্যকর অডিয়ো রেকর্ডিং সামনে আসতেই এই ধরনের লিগ কতটা ‘স্বচ্ছতা’র সঙ্গে চলছে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বুকির সঙ্গে তাঁর কথোপকথন রেকর্ড করেছেন শুভম নিজেই। এত দিন বিভিন্ন মহলে খেলোয়াড়দের ঘুষ দেওয়ার মৌখিক অভিযোগ উঠছিল। এ বার তার অডিয়ো রেকর্ডিংয়ের কথা প্রকাশ্যে এসেছে। শুভম রায়ের অভিযোগ, “এর নেপথ্যে নামী কোনও খেলোয়াড় জড়িত থাকতেই পারেন। আমি যে হেতু এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছি, তাই নিজের কেরিয়ার এবং প্রাণহানির আশঙ্কাও করছি।”

আরও পড়ুন- লজ্জার হারে মেজাজ হারালেন মোরিনহো​

শুভম কী বলছেন? দেখুন ভিডিয়ো

আরও পড়ুন- ময়দানে খেলা দেখতে এসে সমস্যায় মেয়েরা​

তিনি ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ)-এ অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে।

শুভমকে কী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল?

বুকি: তোদের চিফ কোচ তো আলি রেজা না।...আমার দাদার মতো। নিজের দাদা। ওঁকে বলতে পারি না। তাই তোকে বলছি।

শুভম: ... কি এ সবে যুক্ত?

বুকি: আরে না না, এতে ... নেই। সে জন্যই তো তোকে বলছি। একটা ম্যাচ ছাড়বি, তার জন্য এক লাখ টাকা দেব। সব ম্যাচ ছাড়তে হবে না। তুই যদি বলিস, তা হলে ওদের সঙ্গে দেখা করাব। এমন কিছু ব্যাপার নয়।৭৫ মিনিটের পর একটা গোল খাবি, সেটাই কাউন্ট হবে। ওরা সে রকম বুঝেই বেটিং করে। তোর ব্যাপারে কেউ জানবে না। রাকেশ মাসি তো পাঁচ বছর ধরে করছে। দীপক মণ্ডলও তো করেছে। তোরা জানতে পেরেছিস? ওদের সেটিং আছে।

শুভম: কালকে ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমি এ সব করব না।

বুকি: ঠিক আছে। আমাকে বলতে বলেছিল বলে তোকে বলেছি। অনেক টাকা আছে। ভেবে দেখিস।

শুভমকে বুকিরা কী বলেছিল? শুনুন অডিয়ো

শুভমের বাড়ি উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে। সল্টলেকের ‘সাই’ কমপ্লেক্সে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি মহামেডানে খেলেছেন। সম্প্রতি তিনি টালিগঞ্জ অগ্রগামী এফসি ক্লাবে প্রতিশ্রুতিমান গোলরক্ষক হিসেবে সবার নজরও কেড়েছেন। শুভম বলেন, “ফুটবল তো ভালবেসেই খেলি। এ সব কাজ আমি কেন করব? কিন্তু আমি যখনই মাঠে নেমেছে, প্রাণ দিয়ে খেলেছি। খেটেযে টাকা পাচ্ছি, সেটাই ভাল। সিএফএল চলাকালীন আমাকে ফোন করা হয়েছিল।”

তাঁর কথায়: “আমি চাই, সত্যিটা সামনে আসুক। ক্লাবকেও জানিয়েছি। একটা নাম আমি জানি।ফোন করে বলা হয়েছিল, সুরজ মণ্ডল বলছি। এর থেকে বেশি কিছু জানি না। অনেক ভাবার পর আইএফএ-কে জানিয়েছি।”

টালিগঞ্জ অগ্রগামীর সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষদস্তিদার বলেন, “আমরা আইনি পথে এগোচ্ছি। এটা একটা বড় চক্র থাকতে পারে। যা কলকাতা ফুটবলের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।শুভম এবং রাকেশ, দু’জনকেই বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

বুকি টেলিফোনে যে দুই ফুটবলারের নাম বলেছে, সেই দুই ফুটবলার রাকেশ মাসি ও দীপক মণ্ডল, দু’জনেই তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আনন্দবাজার ডিজিটালকে রাকেশ বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে বলে কানে এসেছে। এই ধরনের কোনও ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। ক্লাব থেকে আমাকে আপাতত বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ রাকেশের দাবি, ‘‘সুরজকে চিনি। একসঙ্গে খেলেওছি। ওকেই এখন খুঁজছি।প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেব।’’

আর এক অভিযুক্ত ফুটবলার দীপক মণ্ডলও সুরজকে চেনেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি সম্মানের সঙ্গে ভারতীয় দলে খেলেছি। ভাবতেই পারছি না, আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠবে।সুরজকে ফোনেও পাচ্ছি না। হোয়াটসঅ্যাপেও যোগাযোগ করতে পারছি না।’’ তিনিও আইনি পদক্ষেপ করবেন বলে দীপক জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE