Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রিভার্স শিল্পেও স্টার্কদের হারিয়ে দিচ্ছেন বুমরারা

মেলবোর্নে ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি এবং যশপ্রীত বুমরা— তিন জনেই পুরনো বলে বেশি ভাল বোলিং করেছেন। বিশেষ করে বুমরা। ভারতীয় পেসারদের রিভার্স সুইংয়ের সামনে কার্যত অস্ট্রেলিয়ার কোনও ব্যাটসম্যানই দাঁড়াতে পারেননি।

নতুন বলে বেশি ভয়ঙ্কর ছিলেন বুমরা।—ছবি এএফপি।

নতুন বলে বেশি ভয়ঙ্কর ছিলেন বুমরা।—ছবি এএফপি।

সুমিত ঘোষ
সিডনি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫০
Share: Save:

মেলবোর্নে হারের নানা কারণ খোঁজার মধ্যে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রহস্যের কিনারা করতে চাইছে। ভারতীয় পেসাররা তাদের দেশে এসে দারুণ রিভার্স সুইং করিয়ে উইকেট তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পেসাররা পারছেন না কেন?

মেলবোর্নে ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি এবং যশপ্রীত বুমরা— তিন জনেই পুরনো বলে বেশি ভাল বোলিং করেছেন। বিশেষ করে বুমরা। ভারতীয় পেসারদের রিভার্স সুইংয়ের সামনে কার্যত অস্ট্রেলিয়ার কোনও ব্যাটসম্যানই দাঁড়াতে পারেননি। এত দিন ভারতীয় পেসারদের মধ্যে সব চেয়ে ভাল রিভার্স করাতে পারতেন উমেশ, ইশান্ত এবং শামি। নতুন বলে বেশি ভয়ঙ্কর ছিলেন বুমরা। এখন দেখা যাচ্ছে তিনিও এই শিল্প আয়ত্তে এনে ফেলেছেন। মেলবোর্নে প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেট নেওয়ার পরে তিনি বলে গিয়েছেন, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে বল করতে গিয়েই রিভার্স সুইং শিখেছেন। ভারতের নিষ্প্রাণ পিচে বোলারদের জন্য প্রায় কিছুই থাকে না। তাঁদের তাই কোনও না কোনও অস্ত্র বের করতেই হয়। বেশির ভাগ ভারতীয় পেসার সেখান থেকেই রিভার্স সুইং শেখেন।

অস্ট্রেলীয় বোলারদের কাছে এই শিল্প যে অধরা, তা নয়। মিচেল স্টার্ক খুব ভাল রিভার্স করাতে পারতেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারি আছড়ে পড়ার সিরিজে স্টার্ক রিভার্স সুইংয়ে একটি টেস্টে ধ্বংস করে দেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এর পরেই বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারি ঘটে। সেই টেস্টে উপস্থিত কেউ কেউ বলেন, স্টার্ক যে রকম রিভার্স সুইং করিয়েছিলেন, তা তাঁরা কখনও দেখেননি।

চলতি সিরিজে যুযুধান দুই দলের দুই অন্যতম সেরা পেসার স্টার্ক এবং শামি— এই দু’জনে রিভার্স সুইংয়ের মাস্টার ওয়াসিম আক্রমের কাছ থেকে এই শিল্প শিখেছেন। কিন্তু এই সিরিজে শামি পুরনো বলে কারিকুরি দেখাতে পারলেও স্টার্কের সেই পুরনো ছন্দ একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অভ্যন্তরে এর জন্য অনেকে দায়ী করছেন, বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারি উত্তর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের কড়া মনোভাবকে। ক্রিকেটারদের না কি বোর্ডের তরফে বলে দেওয়া হয়েছে, রিভার্স সুইং করানোর জন্য কোনও রকম অনৈতিক রাস্তা আর নেওয়া যাবে না। এমনকি, অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারদের উপরেও বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বল-বিকৃতি নিয়ে বেগতিক কিছু দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করার জন্য। মাঠে দাঁড়িয়ে সিরিশ কাগজ দিয়ে বল ঘষার সেই কলঙ্কিত দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি আর চায় না অস্ট্রেলিয়া। কারও কারও মনে হচ্ছে, গোটা দলের উপরে এ সবের একটা আতঙ্কিত প্রভাব পড়েছে। কেউ ট্রাউজার্সে বল ঘষার আগেও তিন বার ভাবছেন, ক্যামেরা দেখাচ্ছে না তো? কে জানে, নখ-টখ লেগে গেল না তো?

আক্রম এক বার বলেছিলেন, ‘‘রিভার্স করাতে গেলে সবার আগে বলটাকে বানাতে হবে। এক দিকে পালিশ রাখতে হবে। অন্য দিকটা ভারী করতে হবে।’’ তাঁদের সময়ে সব চেয়ে ভাল বল বানাতেন না কি দুই স্পিনার মুস্তাক আমেদ আর সাকলিন মুস্তাক। ‘‘পনেরো-কুড়ি ওভারের মধ্যে রিভার্স সুইংয়ের উপযুক্ত বল বানিয়ে ফেলত ওরা,’’ বলেছিলেন আক্রম।

এই বল বানানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে কয়েকটা জিনিস অবশ্যই দরকার। যেমন মাঠে কেউ সোজা উইকেটকিপারের হাতে বল থ্রো করবে না। অন্তত একটা ড্রপে বল পাঠাবে। যাতে আউটফিল্ডে ঘষা খেয়ে বলের পালিশ দ্রুত উঠতে থাকে। সব মাঠেই প্রধান পিচের পাশে আরও কয়েকটা পিচ করা থাকে। সেগুলো ন্যাড়া হলে সেখানেও ইচ্ছা করে বল ফেলে থ্রো করা হয়। ঘাসের আউটফিল্ডের চেয়ে ন্যাড়া পিচে বল পড়লে আরও বেশি এক দিকের পালিশ উঠবে।

শোনা যায়, অস্ট্রেলিয়া দলে বল বানানোর পাণ্ডা ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। কেপ টাউনের অভিশপ্ত টেস্টে তিনিই সিরিশ কাগজ নিয়ে মাঠে ঢোকার নির্দেশ দেন ক্যামেরন ব্যানক্রফ্‌টকে। বরাবর স্টার্কদের হাতে বল বানিয়ে দিয়েছেন ওয়ার্নার। আর তার পর স্টার্করা সেই বল দিয়ে ভেল্কি দেখিয়েছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই ‘বল বানানো’র মধ্যে অনৈতিক পন্থাও ছিল।

ওয়ার্নারের দলে না থাকা এবং বল-বিকৃতি নিয়ে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট চুরমার হয়ে যাওয়া— রিভার্স শিল্পকে আরও দূরে ঠেলে দিয়েছে টিম পেনের বোলারদের থেকে। এমন নয় যে, নখ দিয়ে বল না খুঁটলে রিভার্স করানোই যাবে না। ইংল্যান্ডের অ্যান্ডারসন-ব্রড রিভার্স করাতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাডা পারেন। ভারতীয় পেসাররা প্রায় সকলেই পারেন। তাঁরা বল খোঁটাখুঁটি করেন, কোনও প্রমাণ নেই। আবার কারও কারও মতে, মুখের মধ্যে রাখা জেলিবিন্স বা রসালো লজেন্স একটু-আধটু না মাখালে না কি বল তৈরিই হয় না।

অন্য দল রিভার্স করাবে কি করাবে না, টিমের সেই সব ঘরোয়া ব্যাপারে তাদের বোর্ড কখনও মাথা গলায় না। এখন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড সেটাও করছে। কেউ জেলি বিন্স মুখে নিয়ে নামবেন না, মাটিতে ফেলে থ্রো করারও দরকার নেই। কোনও ভাবেই যাতে দেশের জনতার কাছে ক্রিকেটারেরা প্রতারক বলে আর প্রতিপন্ন না হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE