Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Women T20 Final

তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লেন শেফালিরা, বিশ্বকাপ অধরা ভারতের

ভারত এই প্রথম বার উঠেছে মহিলা বিশ্বকাপের ফাইনালে। ক্যাপ্টেন হরমনপ্রীত কৌরের আবার রবিবারই জন্মদিন। নারী দিবসে ভারতীয় মহিলাদের হাতে কাপ দেখার আশায় ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু তা হল না।

আউট হয়ে ফিরছেন হতাশ শেফালি। রবিবার মেলবোর্নে। ছবি: পিটিআই।

আউট হয়ে ফিরছেন হতাশ শেফালি। রবিবার মেলবোর্নে। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ১২:৪১
Share: Save:

মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে চার উইকেটে ১৮৪ তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফলে, বিশ্বকাপ জিততে ভারতের দরকার ছিল ১৮৫। কিন্তু, হরমনপ্রীত কৌরের দল ১৯.১ ওভারে থেমে গেল মাত্র ৯৯ রানে। কোনও লড়াই করতেই পারল না ভারত। অস্ট্রেলিয়া জিতল ৮৫ রানে। যে ভাবে আত্মসমর্পণ করলেন হরমনপ্রীতরা, তার সঙ্গে ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দলের মিল খুঁজে পাচ্ছে ক্রিকেটদুনিয়া।

রান তাড়ার শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় বলেই ফিরেছিলেন শেফালি ভার্মা। শুরুতে ঝড় তোলার জন্য তাঁর উপরেই নির্ভর করছিল দল। কিন্তু ১৬ বছর বয়সি ফিরলেন মাত্র ২ রানে। মেগান স্কুটের বলে তাঁর খোঁচা জমা হয়েছিল উইকেটকিপার অ্যালিসা হিলির হাতে। প্রথম ওভারে উঠেছিল মাত্র ৩। দ্বিতীয় ওভারে জেস জোনাসেন দিলেন জোড়া ধাক্কা। তৃতীয় বলে সুইপ মারতে গিয়ে বল লাগল তানিয়া ভাটিয়ার হেলমেটে। দৌড়ে এলেন ফিজিয়ো। তানিয়া ঘাড়ে হাত বোলাতে বোলাতে বেরিয়ে গেলেন মাঠ ছেড়ে। সেই ওভারেই ষষ্ঠ বলে জেমাইমা রডরিগেজ ক্যাচ দিলেন মিড অনে। দ্বিতীয় ওভারের শেষে দুই উইকেট হারিয়ে ভারতের রান দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৮।

৩.১ ওভারে পড়ল তৃতীয় উইকেট। আউট হলেন স্মৃতি মন্ধানা (১১)। সোফি মলিনিউক্সের বলে ক্যারিকে ক্যাচ দিলেন তিনি। এর পর চতুর্থ উইকেট পড়ল ৫.৪ ওভারে। মারতে গিয়ে লোপ্পা ক্যাচ তুললেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর (৪)। জোনাসেনের বলে তাঁর ক্যাচ ধরলেন গার্ডনার। প্রথমেই দুই উইকেট হারানোর পর অভিজ্ঞ মন্ধানা ও হরমনপ্রীতের দিকেই তাকিয়েছিল দল। কিন্তু দুই সিনিয়রই আসল দিনে ব্যর্থ হলেন। পাওয়ারপ্লে-র ছয় ওভারের মধ্যেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলল দল। উঠল মাত্র ৩২ রান।

আরও পড়ুন: দর্শক সংখ্যায় রেকর্ড, মেয়েদের ক্রিকেটে চরম উন্মাদনা​

আরও পড়ুন: কেন টিম ইন্ডিয়ার ফিল্ডিং কোচ হতে পারেননি, মুখ খুললেন জন্টি রোডস

ভারতের পঞ্চম উইকেট পড়ল ৫৮ রানে। ১১.৩ ওভারে কিমিন্সের বলে ফিরলেন ভেদা কৃষ্ণমূর্তি (১৯)। তানিয়ার জায়গায় এই সময় ‘কনকাসন সাব’ হিসেবে ব্যাট করতে এলেন রিচা ঘোষ। প্রথম দলে ছিলেন না তিনি। কিন্তু হঠাৎ পাওয়া এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না রিচা। ১৮ বলে ১৮ করে ফিরলেন তিনি। দীপ্তি শর্মা (৩৩) ও শিখা পাণ্ডে (২) অবশ্য তার আগেই ফিরে গিয়েছিলেন। ৮৮ রানে ছয় উইকেট পড়ার পর ইনিংসে দাঁড়ি পড়ল ৯৯ রানে। অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার মেগান স্কুট। তিনি ১৮ রানে নিলেন চার উইকেট। ২০ রানে তিন উইকেট নিলেন জোনাসেন।

বোলিংয়েও শুরুটা ভাল হয়নি ভারতের। প্রথম ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলেছিল ১৪ রান। তার মধ্যে তিনটি চার। দীপ্তি শর্মার সেই ওভারে অবশ্য পড়ল ক্যাচও। সেই দাপটেই পাওয়ারপ্লের ছয় ওভারে হোমটিম বিনা উইকেটে তুলল ৪৯। যা ১০ ওভারে দাঁড়াল বিনা উইকেটে ৯১।

পরের ওভারে উঠল ২৩ রান। এ বার পেসার শিখা পাণ্ডেকে পর পর তিন ছয় মারলেন অ্যালিসা হিলি। যিনি আগেই ৩০ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে ৭৫ করলেন অ্যালিসা। যাতে ছিল সাতটা চার ও পাঁচটি ছয়। রাধা যাদবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন মিচেল স্টার্কের স্ত্রী। এর পর অজি অধিনায়ক মেগ ল্য়ানিং ফিরেছিলেন ১৬ রানে। দীপ্তি শর্মার বলে শিখা পাণ্ডেকে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। তিন বল পরেই ফের উইকেট নিয়েছিলেন দীপ্তি শর্মা। তাঁকে মারতে গিয়ে তানিয়া ভাটিয়ার হাতে স্টাম্পড হয়েছিলেন গার্ডনার (২)। এর পর ফিরলেন হেনেস (৪)। লেগস্পিনার পুনম যাদবের বলে বোল্ড হলেন তিনি। ৫৪ বলে ৭৮ করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন বেথ মুনি। তাঁর ইনিংসে ছিল ১০টি চার। নিকোলা ক্যারি অপরাজিত ছিলেন ৫ রানে।

ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সফলতম ছিলেন দীপ্তি শর্মা। তিনি ৩৮ রানের বিনিময়ে নিলেন দুই উইকেট। পুনম যাদব (১-৩০), রাধা যাদব (১-৩৪) নিলেন বাকি দুই উইকেট। কোনও উইকেট না পেলেও ভাল বল করলেন রাজেশ্বরী গায়কোয়াড় (০-২৯)। তবে হতাশ করলেন শিখা পাণ্ডে (০-৫২)। এক সময় মনে হচ্ছিল দুশোর বেশি তুলে ফেলবে অজিরা। কিন্তু শেষ পাঁচ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৪২ রান। ফলে ওভারপ্রতি নয়ের সামান্য বেশি আস্কিং রেট তাড়া করার চ্যালেঞ্জ ছিল হরমনপ্রীতদের সামনে। যা কখনই নিতে পারেনি ভারত।

মহিলাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে টস জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অজি ক্যাপ্টেন মেগ ল্যানিং। দুই দলই অপরিবর্তিত রয়েছে। গ্যালারিতে ৮৬ হাজার দর্শকের উপস্থিতি অন্য আবহের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে এই চাপ নিয়েও উজাড় করে দিল। আর প্রত্যাশার চাপে গুটিয়ে গেলেন হরমনপ্রীতরা।

ভারত এই প্রথম বার উঠেছিল মহিলা বিশ্বকাপের ফাইনালে। ক্যাপ্টেন হরমনপ্রীত কৌরের আবার রবিবারই জন্মদিন ছিল। নারী দিবসে ভারতীয় মহিলাদের হাতে কাপ দেখার আশায় ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। টস হেরে হরমনপ্রীত বলেছিলেন, “আমরাও প্রথমে ব্যাট করতে চেয়েছিলাম। তবে রান তাড়া করার আত্মবিশ্বাস রয়েছে দলে। তাই বোলাররা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করলেই চলবে।” কিন্তু তা হল কোথায়। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই ভারতকে টেক্কা দিল অস্ট্রেলিয়া।

তিন বছর আগে লর্ডসের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ভারতীয় মেয়েদের।ইংল্যান্ডের কাছে হেরে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল মিতালি রাজ-হরমনপ্রীত কৌরদের। এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও তার পুনরাবৃত্তি হল। শেফালি ভার্মা, পুনম যাদবরা প্রতিযোগিতা জুড়ে ভাল খেলেও আসল দিনে পারলেন না। অন্যদিকে, হরমনপ্রীত, মন্ধানারা পুরো প্রতিযোগিতা জুড়েই হতাশ করলেন ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE