Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
ICC ODI World Cup 2023

বিশ্বকাপে রেকর্ড গড়ে জয়! শামির ৫ উইকেট, ৩০২ রানে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সাতে সাত রোহিতদের

শ্রীলঙ্কাকে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারালেন রোহিত শর্মারা। ভারতের ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারল না শ্রীলঙ্কা। পয়েন্ট তালিকায় আবার শীর্ষে চলে এল ভারত।

picture of Indian cricket team

শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়ার উচ্ছ্বাস কোহলি, শামিদের। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৩
Share: Save:

ভারত ৩৫৭/৮

শ্রীলঙ্কা ৫৫ (১৯.৪ ওভারে)

বিশ্বকাপের ম্যাচ! খাতায়-কলমে তেমনই। খেলা দেখে অন্তত বিশ্বকাপের আঁচ পাওয়া গেল না। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পথে ভারতের ব্যাটার, বোলারেরা আয়েশ করে অনুশীলন সেরে নিলেন। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কাকে ৩০২ রানের ব্যবধানে হারাল ভারত। বিশ্বকাপে নতুন রেকর্ড গড়ল ভারতীয় দল। রানের ব্যবধানে এটাই বিশ্বকাপে ভারতের সব থেকে বড় জয়। এর আগে বিশ্বকাপে ভারতের সব থেকে বড় ব্যবধানে জয় ছিল বারমুডার বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ২৫৭ রানে জিতেছিল অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত।

ওয়াংখেড়ের ২২ গজে খেলা শুরু হওয়ার আগে বিরাট কোহলির নাচ দেখা গিয়েছিল। তিনি বিরাট জয়ের আগাম পূর্বাভাস পেয়ে গিয়েছিলেন? ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে এই মাঠে এই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। ভুল বলা হল, এই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সেই দলের মিল নেই। মুথাইয়া মুরলিথরন, কুমার সাঙ্গাকারা, লসিথ মালিঙ্গা, তিলকরত্নে দিলশান, অজন্তা মেন্ডিসরা ছিলেন সেই দলে। সেই দলে ছিলেন মাহেলা জয়বর্ধনে এবং অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। এ বারও তাঁরা রয়েছেন। জয়বর্ধনে রয়েছেন দলের ব্যাটিং পরামর্শদাতা হিসাবে। চোট জর্জরিত শ্রীলঙ্কা শিবির প্রতিযোগিতার মাঝপথে উড়িয়ে এনেছে ‘বুড়ো’ ম্যাথিউজকে। তা দিয়ে ফর্মে থাকা ভারতীয় দলকে আটকানো সম্ভব ছিল না। শ্রীলঙ্কা পারলও না। এশিয়া কাপে এই শ্রীলঙ্কাই ভারতের সামনে ৫০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। গত জানুয়ারিতে তিরুঅনন্তপুরমে ভারতের কাছে রেকর্ড ৩১৭ রানে হেরেছিলেন দাসুন শনাকারা। তাই শ্রীলঙ্কা ভারতের সেমিফাইনাল যাত্রায় বিঘ্ন ঘটাবে, এমন হয়তো ভাবেননি অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসও। তাই বলে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ! যে দলের হয়ে এক সময় খেলেছেন অর্জুন রণতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি’সিলভা, সনৎ জয়সূর্যের মতো ক্রিকেটার।

টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মেন্ডিস। ঘরের মাঠে রান পেলেন না রোহিত শর্মা (৪)। অধিনায়ক ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই আউট হওয়ায় ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে গুমোট নেমে এসেছিল। তা দ্রুত কাটিয়ে দিলেন বিরাট কোহলি, শুভমন গিলেরা। শ্রীলঙ্কার ফিল্ডারদের কার্যত দাঁড় করিয়ে রেখে তাঁদের শট ছুটল বাউন্ডারির দিকে। দর্শক হয়ে দেখতে হল প্রতিপক্ষের বোলারদের। ২২ গজের কোথায় বল ফেললে কোহলি, শুভমনের আগ্রাসনে রাশ টানা যাবে, তা ঠাওর করতেই পারলেন না তাঁরা। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে কোহলি-শুভমন তুললেন ১৮৯ রান। কোহলি করলেন ৮৮ রান। ৯৪ বলের ইনিংসে মারলেন ১১টি ছয়। উইকেটের অন্য প্রান্তে শুভমনের ব্যাট থেকে এল ৯২ বলে ৯২ রানের ইনিংস। ১১টি চার এবং ২টি ছয় দিয়ে সাজালেন নিজের ইনিংসটি। দু’জনকেই শতরান পেতে দিলেন না শ্রীলঙ্কার জোরে বোলার দিলশান মদুশঙ্ক। তিনিই আউট করেছিলেন রোহিতকেও। এক দিনের ক্রিকেটে ৪৯তম শতরান পেলেন না কোহলি। প্রিয় ওয়াংখেড়ের ভিআইপি বক্সে বসে থাকা সচিন তেন্ডুলকর কি কিছুটা স্বস্তি পেলেন? এক দিনের ক্রিকেটে তাঁর সব থেকে বেশি শতরানের রেকর্ড আরও কিছু দিন টিকে থাকার জন্য? সচিন কী ভাবলেন জানা যায়নি। তবে শুভমন শতরান হাতছাড়া করায় হতাশ হয়েছেন সচিন-কন্যা সারা। টেলিভিশনের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তাঁর হতাশার ছবি। কোহলি-শুভমনের জোড়া দাপুটে ইনিংসে সচিন স্বস্তি পেলেও সারা হয়তো পেলেন না।

স্বস্তি অবশ্য পেল ভারতীয় শিবির। সেই স্বস্তির নাম শ্রেয়স আয়ার। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র তিনিই রান পাচ্ছিলেন না। ঘরের চেনা মাঠে চেনা মেজাজে দেখা গেল কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ককে। ওয়াংখেড়ের ২২ গজে শ্রেয়সের সামনেও ভোঁতা হয়ে গেল শ্রীলঙ্কা বোলিং আক্রমণ। ৩টি চার এবং ৬টি ছক্কার সাহায্যে তাঁর ৫৬ বলে ৮১ রানের ইনিংস ভারতের রানকে নিয়ে চলে গেল শ্রীলঙ্কার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাঁকেও আউট করলেন মদুশঙ্ক। রোহিতের মতোই ঘরের মাঠে রান পেলেন না সূর্যকুমার যাদবও (১২)। তাঁকেও আউট করলেন মদুশঙ্ক। ভারতীয় ব্যাটারদের দাপটের মধ্যেও ৫ উইকেট শ্রীলঙ্কার জোরে বোলারের। যদিও খরচ করতে হল ৮০ রান। তাতেই নির্বিষ হয়ে গেল তাঁর ৫ উইকেটের কৃতিত্ব। ভারতীয় ইনিংসের শেষ দিকে কেকের উপর চেরি বিছিয়ে দিল রবীন্দ্র জাডেজার ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান তুলে শ্রীলঙ্কাকে দান ছাড়ল রোহিতের ‘নির্দয়’ ভারত।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ব্যাটারেরা তবু উইকেট উপহার দিয়েছেন শ্রীলঙ্কাকে। ভারতের বোলারেরা আরও নির্মম আচরণ করলেন। না হলে ১৪ রানে ৬ উইকেট! ২০ ওভারের মশলা ম্যাচেও এমন স্কোর বোর্ড দেখা যায় না। যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ, মহম্মদ শামি— তিন জনে যেন ইচ্ছামতো আউট করলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের। পাথুম নিশঙ্ক (শূন্য), দিমুথ করুণারত্নে (শূন্য), মেন্ডিস (১), সাদিরা সমরবিক্রম (শূন্য), চরিথ আশালঙ্ক (১), দাসুন হেমন্ত (শূন্য), দুষ্মন্ত চামিরারা (শূন্য) নিয়মরক্ষা করতে ব্যাট হাতে ২২ গজে এলেন। এটুকুই অবদান তাঁদের। ভারতের সেমিফাইনালের রাস্তা মসৃণ করতেই যেন তাঁদের রণসজ্জা (প্যাড, গ্লাভস, হেলমেট)।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট তুললেন বুমরা। দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেট তুললেন সিরাজও। আবার নবম ওভারে বল করতে এসে প্রথম ওভারেই দু’টি উইকেট তুলে নিলেন শামি। ভারতের জোরে বোলারেরা ওয়াংখেড়ের লালচে উইকেটে এমন একটা আবহ তৈরি করে দিলেন, যে বলের কাছে ব্যাট নিয়ে যেতেই ভরসা পাচ্ছিলেন না শ্রীলঙ্কার ব্যাটারেরা। শামিদের বোলিং দেখে মনে হচ্ছিল বার্মিংহ্যাম বা পার্থে খেলা হচ্ছে।

৩৫৭ রানের জবাবে ২২ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়া পর শ্রীলঙ্কার জয়ের আর কোনও আশা ছিল না। তারও আগে ৩ রানে শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট পড়ার পরেই বোঝা গিয়েছিল এ বারের বিশ্বকাপের সব থেকে একপেশে ম্যাচ উপহার দিতে চলেছেন রোহিতেরা। ম্যাচের বাকিটা ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। যে পর্বে ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের ক্রিকেটীয় বিনোদনে ভরিয়ে রাখলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। শেষ পর্যন্ত ১৯.৪ ওভারে ৫৫ রানে শেষ হল শ্রীলঙ্কার ইনিংস।

ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সফলতম সেই বাংলার শামি। বিশ্বকাপের ম্যাচে আবার ৫ উইকেট নিলেন তিনি। ৫ ওভার বল করে ১৮ রানে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। এক দিনের ক্রিকেটে এটাই তাঁর সেরা পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও হলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে তাঁর উইকেট সংখ্যা হল ৪৫। টপকে গেলেন জাভাগল শ্রীনাথ এবং জাহির খানের ৪৪ উইকেট নেওয়ার নজির। সিরাজ ৩ উইকেট নিলেন ১৬ রান দিয়ে। ৮ রানে ১ উইকেট বুমরার। ৪ রানে ১ উইকেট জাডেজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE