নিয়মরক্ষার ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে সুপার ওভারে হারাল ভারত। আগামী রবিবার প্রতিযোগিতায় অপরাজিত তকমা নিয়েই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলতে নামবেন সূর্যকুমার যাদবেরা। শুক্রবার প্রথমে ব্যাট করে ভারত করে ৫ উইকেটে ২০২ রান। জবাবে শ্রীলঙ্কার ইনিংসও শেষ হয় ৫ উইকেটে ২০২ রানে। ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর জয় পেল ভারত।
২০ ওভারের খেলায় অর্শদীপ সিংহ প্রত্যাশা অনুযায়ী বল করতে না পারলেও সুপার ওভারে আক্ষেপ মিটিয়ে দিলেন। খরচ করলেন মাত্র ২ রান। প্রথম বলে আউট করেন কুশল পেরেরাকে। পরে ওভারের পঞ্চম বলে আউট করেন দাসুন শনাকাকে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গার প্রথম বলে ৩ রান তুলে নেন সূর্যকুমার। ম্যাচ জিতে যায় ভারত। জিতলেও ভারতীয় দলের দুর্বলতার জায়গাগুলি ফাইনালের আগে দেখিয়ে দিল শ্রীলঙ্কা।
ফাইনালের আগে আরও এক বার ব্যাটিং ঝালিয়ে নিলেন ভারতীয়েরা। টস জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চরিথ আশালঙ্কা প্রথম ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সুযোগ পেয়ে যায় ভারতীয় দল। নিয়মরক্ষার ম্যাচেও চেনা আগ্রাসী মেজাজে গেল অভিষেক শর্মাকে। ৮টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৩১ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেললেন। তবে আরও একটি শতরানের সুযোগ হাতছাড়া করলেন অভিষেক। ভাল শুরু করেছিলেন শুভমন গিলও (৪)। তবে মাত্র ৩ বলের মাথায় তাঁকে সাজঘরে ফিরিয়ে দিল মাহিশ থিকশানার দুরন্ত ক্যাচ। নিজের বলেই ক্যাচ নিলেন শ্রীলঙ্কার বোলার। ফলো থ্রু শেষ করার আগে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে তালুবন্দি করেন শুভমনের শট। তিন নম্বরে নেমে এ দিনও দলকে ভরসা দিতে পারলেন না অধিনায়ক সূর্যকুমার (১২)। ফাইনালের আগে অধিনায়কের ফর্ম উদ্বেগে রাখবে ভারতীয় শিবিরকে। চার নম্বরে নামা তিলক বর্মা অবশ্য চাপ বুঝতে দিলেন না। ৩৪ বলে ৪৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেন। মারলেন ৪টি চার এবং ১টি ছয়। পাঁচ নম্বরে নেমে ভাল ব্যাট করলেন সঞ্জু স্যামসনও। তাঁর ২৩ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে রয়েছে ১টি চার এবং ৩টি ছক্কা। হার্দিক (২) ব্যর্থ হলেও শেষ দিকে ১৫ বলে ২১ রানের ইনিংস খেললেন অক্ষর পটেলও। শ্রীলঙ্কার কোনও বোলারই ভারতীয়দের চাপে ফেলতে পারেননি। সফলতম আশালঙ্কা ১৮ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন।
জয়ের জন্য ২০৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটারেরা। যদিও ওপেনার কুশল মেন্ডিস (শূন্য) প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে কুশল পেরেরা এবং পাথুম নিশঙ্ক কোণঠাসা করে দেন ভারতীয় দলকে। ভারতের কোনও বোলারকেই রেয়াত করেননি তাঁরা। ১৩তম ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর বলে স্টাম্পড আউট হন পেরেরা। ভাঙে ১২৭ রানের জুটি। তবে ততক্ষণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কা। ২২ গজে অন্য প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন নিশঙ্ক। বজায় রাখেন রান তোলার গতিও। তাঁকে বাগে আনতে পারলেন না ভারতের কোনও বোলারই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের শতরান করলেন তিনি। তিনি শেষ পর্যন্ত খেললেন ৫৮ বলে ১০৭ রানের ইনিংস। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৭টি চার এবং ৬টি ছয়। আশালঙ্কা অবশ্য এ দিনও ব্যাট হাতে ব্যর্থ (৫)। নিশঙ্ককে সঙ্গ দিতে পারলেন না কামিন্দু মেন্ডিসও (৩)। শেষ পর্যন্ত ২২ গজে ছিলেন দাসুন শনাকা (২২) এবং জনিথ লিয়ানাগে (২)।
আরও পড়ুন:
ফাইনালের আগে জসপ্রীত বুমরাহ, শিবম দুবেকে বিশ্রাম দিয়েছিল ভারতীয় শিবির। পরিবর্তে প্রথম একাদশে নেওয়া হয় অর্শদীপ এবং হর্ষিত রানাকে। দু’জনেই হতাশ করলেন। শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের আগ্রাসী মেজাজের সামনে লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে পারলেন না দুই জোরে বোলারই। মার খেয়ে গেলেন অক্ষরও। কুলদীপ যাদব, বরুণ চক্রবর্তীও তেমন সুবিধা করতে পারলেন না। প্রতিযোগিতা থেকে আগেই ছিটকে যাওয়া শ্রীলঙ্কার হারানোর কিছু ছিল না। নিজেদের প্রমাণ করার তাগিদে খেলছিলেন দ্বীপরাষ্ট্রের ক্রিকেটারেরা। সেই তাগিদের সামনেই অসহায় দেখাল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর দলের বোলিং আক্রমণকে। স্বভাবতই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয় এলেও দলের বোলিং নিয়ে ফাইনালের আগে ভাবতে হবে গৌতম গম্ভীরকে।