সিডনিতে এক দিনের সিরিজ়ের শেষ ম্যাচ জিতে মুখরক্ষা করেছে ভারত। সেই জয়ে যে দু’জন সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন, তাঁরা হলেন রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। প্রথম জন শতরান করেছেন, দ্বিতীয় জন অর্ধশতরান করেছেন। তবে দু’বছর পর বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হলেন না কেউই।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন রোহিত এবং কোহলি। সেখানে গিলক্রিস্টের বিশ্বকাপ-প্রশ্নে রোহিত সরাসরি কোনও কথা বলেননি। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় এসে খেলার অভিজ্ঞতা এবং অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকদের ধন্যবাদ দিতে থাকেন। কোহলিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্রেফ ‘ধন্যবাদ’ বলেন। পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আবার রোহিতকে একই প্রশ্ন করেন গিলক্রিস্ট। তখনও রোহিত এড়িয়ে যান। অর্থাৎ সরাসরি দুই ক্রিকেটারই এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি।
তবে রোহিত এবং কোহলি দু’জনেই নিজেদের কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, এটাই তাঁদের শেষ অস্ট্রেলিয়া সফর। অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকদের নিয়ে কথা বলেছেন দুই ক্রিকেটার। কোহলির কথায়, “আমি এই দেশটায় আসতে ভালবাসি। অনেক ভাল ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছি এখানে। প্রচুর লোক আমাদের সমর্থন করতে আসেন।” রোহিত বলেন, “আমারও খুব ভাল লাগে এ দেশে আসতে। বিশেষ করে সিডনিতে খেলতে নামলে। প্রথম সফরের কথা (২০০৮) মনে প়ড়ে যাচ্ছে। খুব মজা করেছিলাম সে বার। জানি ও গুলো আর কখনও ফিরবে না। তবে এ বারও খুব মজা করেছি। গত ১৫ বছরে যা করেছি তা ভুলে যান। অস্ট্রেলিয়ায় খেলার মধ্যে আলাদা একটা মজা আছে। আমার ধারণা বিরাটও একই কথা বলবে। ধন্যবাদ অস্ট্রেলিয়া।” পাশে থাকা কোহলিও শুনে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানান।
প্রথম দু’টি ম্যাচে আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে। সিডনিতে এক দিনের সিরিজ়ের শেষ ম্যাচে কোহলির ব্যাট থেকে এসেছে অর্ধশতরান। রান তাড়া করে আবার দলকে জিতিয়েছেন তিনি। কেরিয়ারে প্রথম বার টানা দু’টি ম্যাচে শূন্য করার পর কোহলি বুঝতে পেরেছেন, এই বয়সেও ক্রিকেট থেকে অনেক কিছু শেখা বাকি। তিনি কথা বলেছেন রোহিতের সঙ্গে জুটি এবং বিশ্বকাপ নিয়েও।
ম্যাচের পর শুরুতেই জোড়া শূন্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। কোহলি বলেন, “হয়তো আমি অনেক দিন ধরে ক্রিকেট খেলছি। কিন্তু ক্রিকেট বার বার বোঝায় যে, এই বয়সে এসেও অনেক কিছু শেখা বাকি।”
রান তাড়া করে জেতার ক্ষেত্রে কোহলির পরিসংখ্যান এমনিতেই আকর্ষণীয়। সেটাই আবার শোনা গেল তাঁর মুখে। বলেন, “আর কয়েক দিন পরেই ৩৭ বছর হয়ে যাবে আমার। এখনও রান তাড়া করতে নামলে আমার সেরাটা বেরিয়ে আসে। রোহিতের সঙ্গে আর একটা ম্যাচ জেতানো জুটি খেলতে পেরে ভাল লাগছে।”
কেন রো-কো জুটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতটা সফল সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন কোহলি। বলেছেন, “শুরু থেকেই আমরা পরিস্থিতি বুঝে খেলার চেষ্টা করি। তাই জন্যই এত সফল। হয়তো বিশ্ব ক্রিকেটে এখন আমরাই সবচেয়ে অভিজ্ঞ জুটি। যখন তরুণ ছিলাম, তখনও জানতাম যে আমরা জুটি গড়লে প্রতিপক্ষের থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিতে পারব।”
কোহলির সংযোজন, “২০১৩ থেকে (অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সিরিজ়) থেকে এটা শুরু হয়েছে। আমরা যদি বড় জুটি গড়ি, তা হলে দলকে জেতানোর ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতে পারব, সেটা জানতাম।”
আরও পড়ুন:
রোহিত জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ায় খেলা মোটেও সহজ ছিল না। তবে দিনের শেষে তিনি খুশি। রোহিতের ব্যাখ্যা, “অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে এলে এ রকম কঠিন ক্রিকেটই আমরা আশা করি। কখনওই কোনও ম্যাচ এখানে সোজা হবে না। পরিস্থিতি বুঝে খেলতে হবে। দীর্ঘ দিন খেলিনি। এখানে খেলতে নেমে খুব ভাল লেগেছে। সিরিজ় জিততে না পারলেও অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছি।”
দলের বাকিদের জন্য রোহিত এখন বড় দাদা এবং উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করতে চান। রোহিতের কথায়, “এই সিরিজ় থেকে তরুণ ক্রিকেটারেরা অনেক কিছু শিখবে। আমি এখানে প্রথম বার আসার পর সিনিয়রেরা অনেক সাহায্য করেছে। এখন আমরা তরুণদের বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে সাহায্য করতে চাই। কারণ বিদেশে ক্রিকেট খেলা মোটেই সোজা কাজ নয়। দলে যারা আছে তারা নিঃসন্দেহে অনেক প্রতিভাবান। তবে একটা পরিকল্পনা থাকা খুব দরকার। এই বয়সে এসে আমিও ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই। সেগুলোই দলের তরুণদের বলব।”