Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Dinesh karthik

Dinesh Karthik: জীবনে কামব্যাক, অফিসেও কামব্যাক, কার্তিকের স্বপ্নপূরণের জেদই দেশের আশা

স্বপ্ন দেখানোর আগে নিজে স্বপ্ন দেখেছিলেন কার্তিক। তাঁর সেই স্বপ্নেরই সওয়ারি এখন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কার্তিক পেরেছেন।

দীনেশ কার্তিক।

দীনেশ কার্তিক। ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২২ ১৪:৪৬
Share: Save:

অবাক করছেন দীনেশ কার্তিক। অবাক করছে তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং। অবাক করছে তাঁর বয়স। কার্তিকের ফিরে আসা নিয়ে আলোচনা করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। কার্তিকে মজে রয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

কার্তিক বদলে গিয়েছেন। নিজেকে বদলাতে পেরেছেন। ২০২২ সালের কার্তিক পিছনে ফেলে এসেছেন বহু ঘাত-প্রতিঘাত। পার করে এসেছেন জীবন, ক্রিকেটের নানা অধ্যায়। সে সবই সুখের নয়। রয়েছে আঘাত, হতাশা, বঞ্চনা, স্বপ্নভঙ্গ। নিজেকে হারিয়ে যেতে দেননি। খাদের কিনারা থেকে কার্তিক ফিরে এসেছেন সাফল্যের আলোয়। ২২ গজের ঝকঝকে দুনিয়ায়। সুনীল গাওস্করও বলেছেন, এই কার্তিককে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে দেখতে চান। তিনি বলেছেন, ‘‘কার্তিকের বয়সের দিকে আমাদের তাকানো উচিত নয়। মাঠে ও যা করছে সেটা দেখা উচিত। মেলবোর্নের বিমানে ওকে না দেখলে খুবই অবাক হব।’’

গত ১ জুন কার্তিক পূর্ণ করেছেন ৩৬ বছর। এই বয়সে এসেও চূর্ণ করেছেন সব বাধা। সম্বল ছিল অধ্যবসায়, সাধনা। পাশে ছিলেন দীপিকা পাল্লিকাল। ভারতের অন্যতম সেরা মহিলা স্কোয়াশ খেলোয়াড় কার্তিকের দ্বিতীয় স্ত্রী। ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা দূর করে কার্তিককে মাঠে ফিরিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব কম নয় তাঁর। প্রথম স্ত্রী তথা ছোটবেলার বান্ধবী নিকিতার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কার্তিক আরও আঁকড়ে ধরেন তাঁর প্রথম ভালবাসা ক্রিকেটকে। ২২ গজে ফেরার লড়াইয়ের পথেই তাঁর জীবনে আসে দ্বিতীয় প্রেম। সেই প্রেমের নামই দীপিকা।

প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্তিক মানসিক ভাবে মানতে পারেননি। নিকিতা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কার্তিককে ছেড়ে যান। চলে যান মুরলি বিজয়ের ঘরনি হতে। ভারতীয় দলের প্রাক্তন ওপেনার বিজয়ের সঙ্গে ছোট থেকে ক্রিকেট খেলেছেন কার্তিক। সেই বন্ধুই তাঁর ঘরে ঢুকে কখন সর্বনাশ করেছেন টের পাননি। যখন বুঝেছেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। কার্তিকের সন্তান বুঝতেই পারেনি ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই বদলে গিয়েছে তার বাবা! এই ধাক্কা সামলে জীবনের যুদ্ধে জিতেছেন কার্তিক।

এ তো গেল জীবনের কামব্যাক। অফিসের কামব্যাকও হয়েছে কার্তিকের। অফিস মানে খেলার মাঠ। কার্তিকের কাজের জায়গা। সেখানে তাঁর অস্ত্র ফিটনেস, রিফ্লেক্স, ব্যাটিং। ফিটনেস বাড়াতে জিমে বেশি সময় দিতে শুরু করেন কার্তিক। সেই জিমেই অনুশীলন করতেন দীপিকা। একই ট্রেনারের কাছে অনুশীলন করতেন তাঁরা। দীপিকার মা সুসান পাল্লিকাল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন সদস্যা। তাই ক্রিকেটে আগ্রহ থাকলেও কার্তিককে নিয়ে আগ্রহ ছিল না তাঁর। আগ্রহ ছিল কার্তিকের। দু’জনের অনুশীলনের সময় আলাদা হলেও দীপিকাকে দেখার জন্যই জিমে বাড়তি সময় দিতে শুরু করেন কার্তিক। তামিলনাড়ুর উইকেটরক্ষক-ব্যাটার সে সময় একটা অবলম্বন খুঁজছিলেন। শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দীপিকাকে পাশে পেয়েছেন কার্তিক।

কার্তিক যখন ভারতীয় দলে ব্রাত্য, তখন ধারাভাষ্য দিতেন। সে সময় এক বার বলেছিলেন, আরও দু’টি বিশ্বকাপ খেলতে চান। অনেকেই মুখ টিপে হেসেছিলেন তাঁর কথা শুনে। প্রায় প্রাক্তন হয়ে যাওয়া কার্তিক ছিলেন লক্ষ্যে অবিচল। সেই একাগ্রতাই তাঁকে ফিরিয়ে এনেছে ভারতীয় দলের সাজঘরে।

দীনেশ কার্তিকের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় দলে ফেরা। সেই লক্ষ্য নিয়েই নিজেকে তৈরি করেছেন। আইপিএলের মঞ্চকে ব্যবহার করেছেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে আইপিএলে ঝড় তুলেছেন। আইপিএলে কার্তিক ১৬টি ম্যাচে করেছেন ৩৩০ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৬। ব্যাটিং গড় ৫৫। স্ট্রাইক রেট ১৮৩.৩৩। চার মেরেছেন ২৭টি, ছক্কা ২২টি। এই আগ্রাসী পারফরম্যন্সের সুবাদেই পূরণ হয়েছে তাঁর স্বপ্ন। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রায় তিন বছর পর ফিরেছেন জাতীয় দলে। তাঁর ব্যাটের দাপটে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে ঋষভ পন্থের দল। ভারতের প্রবীণতম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে অর্ধশতরান করেছেন। সিরিজের ফয়সালা রবিবার বেঙ্গালুরুতে।

বেঙ্গালুরু কার্তিকের আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির ঘরের মাঠ। আইপিএলে খেলার সুযোগ পাননি করোনা সতর্কতার জন্য। দেশের হয়ে খেলবেন। কার্তিককে ঘিরেই বাড়ছে বেঙ্গালুরুর ক্রিকেট উত্তাপ। পন্থের দলে হার্দিক পাণ্ড্য, শ্রেয়স আয়ার, যুজবেন্দ্র চহালের মতো ক্রিকেটাররা আছেন। তাও এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অন্যতম ভরসা হতে পারেন ফিনিশার কার্তিক। ঘরের ছেলের ব্যাটিং তাণ্ডবের সাক্ষী থাকতে চান দর্শকরা।

রাজকোটে ম্যাচের পর কার্তিক সতীর্থ হার্দিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সে সময় হার্দিক তাঁকে বলেন, ‘‘তুমি আগেই আমাকে বলেছিলে ভারতীয় দলে ফিরে আসতে চাও। এ বছরের বিশ্বকাপ খেলতে চাও। সে ভাবেই নিজেকে তৈরি করেছ। সে জন্য তোমাকে নিশ্চয় অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। যখন আমাদের কথা হয়েছিল, তখন সকলেই তোমাকে হিসাবের বাইরে রাখত। অথচ তোমার এই সাফল্য এখন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। তোমার জন্য আমিও গর্বিত।’’ হার্দিককেও এক সময় বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন অনেকে। তাঁর ফিটনেস নিয়ে উঠত নানা প্রশ্ন। এ বারের আইপিএলেই নতুন ভাবে ফিরে এসেছেন হার্দিক। সম্ভবত সে কারণেই কার্তিকের সাফল্যের পিছনের কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ সব থেকে ভাল বুঝতে পারছেন হার্দিক।

কার্তিক পেরেছেন ফিরে আসতে। ক্রিকেট-জীবনের সেরা সময়ে ঢাকা পড়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ছায়ায়। তাই নতুন করে সেরা সময় তৈরি করে নিয়েছেন কার্তিক। গড়ে নিয়েছেন পথ। খুঁজে নিয়েছেন সাফল্যের রাস্তা। ২৪ বছরের পন্থ হয়তো এখনও নির্বাচকদের খাতায় এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু কার্তিক যে গতিতে এগোচ্ছেন তাতে ধোনি হয়ে ওঠা কঠিন পন্থের পক্ষে।

এ বছরেই দীপিকা প্রথম বার স্কোয়াশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছেন সোনা। ডাবলস এবং মিক্সড ডাবলসে। কার্তিকের চোখে বিশ্বকাপের সোনার পদক। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সোনার পদক রয়েছে তাঁর। আরও একটা হলে ক্ষতি কী? ঘরের ম্যাচেও ফল ২-২ হোক না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE