Advertisement
E-Paper

ইংল্যান্ড হুঁশিয়ার

প্রথম দিনের সেরা মুহূর্ত যদি কোহালির থ্রো-টা হয়ে থাকে, তবে খুব কাছে থাকবে অশ্বিনের ডেলিভারিটা। বাঁ-হাতি কুকের লেগ-মিডে পরে বল অফস্টাম্প নিয়ে চলে যায়। ওই বল দেখার পরে কুলদীপ যাদবের অভাবটা বেশি করে টের পাচ্ছি।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৯
মরিয়া ঝাঁপ দিয়েও রুট উইকেট বাঁচাতে পারলেন না।রয়টার্স

মরিয়া ঝাঁপ দিয়েও রুট উইকেট বাঁচাতে পারলেন না।রয়টার্স

ক্রিকেটে একটা চালু কথা হল, ‘ক্যাচেস উইন ম্যাচেস’। কিন্তু বুধবার এজবাস্টনে বিরাট কোহালি দেখিয়ে দিলেন, একটা থ্রোও কী ভাবে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। ভারত এই টেস্ট যদি শেষ পর্যন্ত জেতে, তা হলে প্রথম দিন কোহালির থ্রোয়ে জো রুটের রান আউটটা গেম চেঞ্জার হয়ে থাকবে।

ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান, বোলাররা ম্যাচ জিতিয়ে থাকেন। ফিল্ডারদের দুরন্ত ক্যাচও ম্যাচ ঘুরিয়ে থাকে। কিন্তু এই ভাবে একটা থ্রো যে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে, সেটা খুব কমই দেখা যায়। যে ‘ইউসেইন বোল্ট’-এর ক্ষিপ্রতায় কোহালি স্প্রিন্ট টেনে বলটা ধরলেন আর তার পরে শরীরের ভারসাম্য হারাতে হারাতে লক্ষ্যভেদ করলেন, তাতে বোঝা যায় ফিটনেসের মাত্রা এখন কোথায় পৌঁছেছে। আধুনিক ক্রিকেটে এটাই কোহালিদের অবদান। ফিটনেসের সাহায্যে ম্যাচ বার করে দেওয়া।

প্রথম দিন চা বিরতির কিছু পরের ঘটনা। ইংল্যান্ডের রান তখন তিন উইকেটে ২১৫। আর. অশ্বিনের বলটা জনি বেয়ারস্টো মিডউইকেটের দিকে ঠেলেছিলেন। কোহালি যখন বলটা ধরলেন, তখন শরীরের ভারসাম্য ঠিক ছিল না। ওই অবস্থায় এক হাতে ছোঁ মেরে বল তুলে নন স্ট্রাইকার এন্ডে ছুড়ে দেন কোহালি। অধিনায়কের শরীর তখন শূন্যে ভাসছে। অশ্বিনও বুদ্ধি করে বলটা ছেড়ে দেন। রুট একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন ঝাঁপ দিয়ে ক্রিজে পৌঁছনোর। কিন্তু পারেননি। দ্বিতীয় রান নেওয়াটা যে কত বড় বোকামি হয়ে গিয়েছে, তত ক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক।

অসাধারণ খেলছিলেন রুট (৮০)। বেয়ারস্টোর (৭০) সঙ্গে মিলে একশো রানের ওপর যোগ করেন। কিন্তু রুট আউট হওয়ার পরেই ছবিটা পুরোপুরি বদলে গেল। তিন উইকেটে ২১৫ থেকে প্রথম দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান নয় উইকেটে ২৮৫। ভারত দারুণ ভাবেই ম্যাচে ফিরে এসেছে। শুধু ফেরা নয়, প্রথম দিনের শেষে অবশ্যই এগিয়ে ভারত। আমি তো বলব ম্যাচ এখন ভারতের দিকে ৬০ শতাংশ ঝুঁকে। সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই যে ভারতের হাতে ম্যাচের রাশ থাকবে, তা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেননি। কিন্তু তাই হল।

বিদেশের মাঠে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনই এ রকম একটা শুরু ভারত কবে পেয়েছে, মনে করা কঠিন। যাকে বলে প্রায় নিখুঁত শুরু। আর অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে তাঁর যে দুই সৈন্য ভারতকে এই জায়গায় নিয়ে এলেন, তাঁদের নাম অশ্বিন এবং মহম্মদ শামি।

এই টেস্ট শুরুর আগে অশ্বিনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু দিনের নবম ওভারে অশ্বিনের যে ডেলিভারি অ্যালেস্টেয়ার কুকের স্টাম্প ছিটকে দিল, সেটা নিশ্চয়ই সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবে। এর পরে অশ্বিন আরও তিনটে উইকেট নিয়ে গেলেন। প্রথম দিনেই চার উইকেট। অশ্বিন আজ বড় অফস্পিন করেছেন। ক্যারম বল করেছেন। ছোট (শর্ট) বল দেননি। ফলে ব্যাটসম্যানরা কাট বা পুল মারার কোনও সুযোগই পাননি।

অশ্বিনের পাশাপাশি আরও একজন বোলার এ দিন ছাপ রেখে গেলেন। তিনি বাংলার মহম্মদ শামি। বিশেষ করে লাঞ্চের পরে আগুনে বোলিং করলেন শামি। দারুণ ভাবে সিমটা কাজে লাগালেন। তুলে নিলেন দু’উইকেট। আমার মনে হয়েছিল, চা বিরতির পরে এই দুই বোলারকে দিয়েই বোলিং শুরু করালে ভাল হত। সেটা হয়নি। কিন্তু কোহালির অবিশ্বাস্য ফিল্ডিং কোনও ক্ষতি হতে দেয়নি।

রুট আর বেয়ারস্টো যখন খেলছিলেন, মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড সাড়ে চারশো রান তুলে দিতে পারে। তা হলে কিন্তু ভারত চাপে পড়ে যেত। এজবাস্টনের ন্যাড়া পিচে তৃতীয় দিন থেকে ভাল বল ঘুরবে। এখানে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা সব সময় কঠিন হবে। রুট ওই ভাবে রান আউট হওয়ায় বেয়ারস্টোর মনঃসংযোগ মনে হয় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। না হলে ইনসাইড এজে বল লাগিয়ে কেউ ওই সময় বোল্ড হয়। যত দূর মনে হল, দ্বিতীয় রানের পিছনে বেয়ারস্টোর ‘কল’ই ছিল।

প্রথম দিনের সেরা মুহূর্ত যদি কোহালির থ্রো-টা হয়ে থাকে, তবে খুব কাছে থাকবে অশ্বিনের ডেলিভারিটা। বাঁ-হাতি কুকের লেগ-মিডে পরে বল অফস্টাম্প নিয়ে চলে যায়। ওই বল দেখার পরে কুলদীপ যাদবের অভাবটা বেশি করে টের পাচ্ছি।

প্রথম দিনের শেষটার মতো শুরুতেও চমক ছিল। টস হারার পরে যখন কোহালি প্রথম এগারো জানালেন। চেতেশ্বর পূজারা এবং কুলদীপ যাদব দলের বাইরে। এই দু’টো সিদ্ধান্তই আমাকে অবাক করেছে। শিখর ধওয়ন খেলছেন, অথচ পূজারা বাইরে! কুলদীপকেও এই পিচে দরকার ছিল। প্রথম দিনই যা দেখলাম, এখানে যদি ভারত জোড়া স্পিনার নিয়ে নামত, ইংল্যান্ড আরও চাপে পড়ে যেত।

চা বিরতির আগে পর্যন্ত ভারতকে চাপে রেখে দিয়েছিলেন রুট। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রথম তিন টেস্ট ব্যাটসম্যানের তালিকায় কোহালি এবং স্টিভ স্মিথের সঙ্গে থাকবেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। এত ভাল ব্যাকফুট প্লেয়ার আমি খুব কমই দেখেছি। সাধারণত ব্যাকফুটে খুব শক্তিশালী হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কী অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু রুট ব্যতিক্রম। আর ব্যাকফুটে শক্তিশালী হওয়ায় বোলারদের খেলতেও সময় পেয়ে যান। বুধবারও সে ভাবেই খেলছিলেন। রুটকে থামানোর জন্য দরকার ছিল অতিমানবীয় একটা কিছু। যা পাওয়া গেল কোহালির কাছ থেকে। যা দেখার পরে আবারও বলছি, প্রথম দিনের শেষে অ্যাডভান্টেজ ভারত।

Cricket Test England India Joe Root সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy