Advertisement
১০ অক্টোবর ২০২৪
FIFA World Cup 2022

বিতর্কের বিশ্বকাপ, সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন না ইরানের ফুটবলাররা

ইরানে সরকার-বিরোধী আন্দোলন চলছে। বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ালেন ইরানের ফুটবলাররা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলালেন না তাঁরা।

জাতীয় সঙ্গীতের সময় ইরানের ফুটবলারদের মুখ বন্ধ।

জাতীয় সঙ্গীতের সময় ইরানের ফুটবলারদের মুখ বন্ধ। ছবি: ইমাগো

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৫৬
Share: Save:

ইরানে সরকার-বিরোধী আন্দোলন চলছে। কিছু দিন আগেই গোটা দেশ উত্তপ্ত হয়েছে। বিক্ষোভকারী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলালেন না ইরানের ফুটবলাররা। ম্যাচের আগেই ইরানের অধিনায়ক আলিরেজা জাহানবকশ জানিয়েছিলেন, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে কিনা সেটা দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, ইরানের বেশির ভাগ ফুটবলারই জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার পক্ষে মত দেন। ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, স্টেডিয়ামে হাজির অনেক সমর্থকও জাতীয় সঙ্গীতের সময় চুপ ছিলেন।

দু’মাস আগে প্রতিবাদী মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে ফুঁসছে ইরান। রোজই বিক্ষোভ হচ্ছে গোটা দেশে। কিছু দিন আগেই ইরানের খ্যাতনামী শেফ মেহরশাদ শাহিদিকে পিটিয়ে খুন করেছে রেভলিউশনারি গার্ড ফোর্স বলে অভিযোগ ওঠে। হিজাব-বিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন শাহিদি। তখনই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে হেফাজতে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। শাহিদির শেষকৃত্যের সময় প্রতিবাদে পথে নামেন হাজার হাজার মানুষ।

১৯ বছর বয়সেই দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিলেন শাহিদি। তাঁকে ইরানের ‘জেমি অলিভার’ বলা হত। আরক শহরে পথে নেমে প্রতিবাদের সময় তাঁকে তুলে নিয়ে যায় ইরানের নিরাপত্তারক্ষীরা। হেফাজতে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারে বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, খুলিতে আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। শাহিদির পরিবার অভিযোগ করে, তাদের ছেলের হৃদ্‌রোগে মৃত্যু হয়েছে বলার জন্য চাপ দিচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসন। ইরানের প্রশাসন অবশ্য শাহিদির মৃত্যুর দায় এড়িয়ে গিয়েছে। ইরানের প্রধান বিচারপতি আবদোলমেহদি মৌসাভি স্পষ্টই জানিয়েছে, শাহিদির দেহে হাত, পা বা খুলি ভাঙার কোনও চিহ্ন মেলেনি।

যদিও শাহিদির মৃত্যুর নিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলেছেন অনেকে। চিকিৎসক নিনা আনসারি সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘মেহরশাদ শাহিদি বুট রেস্তরাঁর একটি প্রতিভাশালী শেফ ছিলেন। ইরানে ওঁকে ভয়ঙ্কর ভাবে খুন করা হয়েছে। পরের দিন ওঁর ২০ বছরের জন্মদিন ছিল। আমরা কখনও ভুলব না। কখনও ক্ষমা করব না।’’

তার কয়েক দিন আগেই হিজাব ছাড়া ছবি দিয়ে শোরগোল ফেলেন ইরানের প্রথম সারির অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি। দেশব্যাপী সরকার বিরোধী বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানাতেই এই পদক্ষেপ নেন। ইনস্টাগ্রামে ছবিটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে কালো পোশাকে এলোচুলে দাঁড়িয়ে তারানেহ। হাতে সাদা পোস্টার, যাতে নীল কালি দিয়ে কুর্দি ভাষায় লেখা বিক্ষোভের স্লোগান, “নারী, জীবন, স্বাধীনতা”। ছবির ক্যাপশনে কবিতার আকারে অভিনেত্রী লেখেন, “তোমাদের চলে যাওয়া, গান গাওয়া পরিযায়ী পাখির ঢল— এ সবে শেষ হয়ে যাবে না বিপ্লব।”

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২। পুলিশি হেফাজতে কুর্দিশ তরুণী মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর থেকেই বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে ইরানে। দেশের মহিলারা প্রাণ হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। তাঁদের দাবি, নারীকে স্বাধীন ভাবে বাঁচার এবং পোশাক পরার অধিকার দিতে হবে। এ নিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপ চলবে না। মাহশার মৃত্যুতে যে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল, সেই প্রতিবাদই এখন দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের মৃত্যু পর্যন্ত চাইছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এখনও পর্যন্ত শতাধিক বিক্ষোভকারী প্রাণ হারালেও প্রতিবাদের আগুন নেভার নাম নিচ্ছে না। গত কয়েক দিন বিক্ষোভের আঁচ সামান্য কম থাকলেও তার পর থেকে দেশের নানা প্রান্তে ফের প্রতিবাদে নেমেছে তরুণ প্রজন্ম। শুধু দেশ নয়, সমাজমাধ্যমে বাধাহীন ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আঁচ। ইরানের খ্যাতনামী অভিনেত্রী তারানেহও রুখে দাঁড়িয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

FIFA World Cup 2022 Iran
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE