মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে বদলে গেল ছবিটা। ১ জুন মিউনিখের মাঠে ইন্টার মিলানকে ৫ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল প্যারিস সঁ জরমঁ। চওড়া হাসি ছিল কোচ লুই এনরিকের মুখে। ১৪ জুলাই সেই হাসি উধাও। আমেরিকার মেটলাইফ স্টেডিয়ামে চেলসির কাছে ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পর মেজাজ ধরে রাখতে পারলেন না এনরিকে। ফাইনালের আগে পিএসজি-কেই সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ধরেছিল সকলে। সেই কারণেই হয়তো হার হজম করতে পারছিলেন না এনরিকে। খেলা শেষে প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ালেন তিনি। মাঝে বিবাদ হল দু’দলের মধ্যে। এমনকি, চেলসির গোলদাতা জোয়াও পেদ্রোকে চড় মেরেছেন এনরিকে। সমালোচনার মুখে পড়েছেন পিএসজি-র কোচ।
ক্লাব বিশ্বকাপে যে ভাবে একের পর এক ভাল দলকে উড়িয়ে পিএসজি ফাইনালে পৌঁছেছিল, তাতে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল তারা। সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪ গোলে হারিয়েছিল পিএসজি। তার আগে তাদের হাতে বিদায় নিয়েছিল লিয়োনেল মেসির ইন্টার মায়ামি। অন্য দিকে চেলসি নকআউটে বেনফিকা, পামেইরাস ও ফ্লুমিনেন্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল। ধারেভারে তারা কখনওই পিএসজি-র ধারেকাছে নেই। সেই চেলসিই ফাইনালে চমকে দিল প্যারিসের ক্লাবকে।
চলতি মরসুমে প্রিমিয়ার লিগে মোটামুটি খেলেছে চেলসি। পয়েন্ট তালিকায় চার নম্বরে শেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তাদের সাফল্য বলতে ছিল কনফারেন্স লিগ জেতা। সেই চেলসিই পিএসজি-কে ৩-০ গোলে হারিয়ে দিল। কোচ এঞ্জো মারেসকা মগজাস্ত্রের লড়াইয়ে টেক্কা দিলেন এনরিকেকে।
প্রথমার্ধে ২২ মিনিটের মাথায় চেলসিকে এগিয়ে দেন কোল পামার। আট মিনিট পর আবার গোল করেন তিনি। জোড়া ধাক্কা সামলানোর আগেই প্রথমার্ধে তৃতীয় গোল খায় পিএসজি। এ বার পামারের পাস ধরে গোল করেন চেলসির নতুন ব্রাজিলীয় তারকা পেদ্রো। প্রথমার্ধে ৩-০ পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে আর ফিরতে পারেনি পিএসজি। অনেক চেষ্টা করেও চেলসির গোলের মুখ খুলতে পারেনি তারা। অথচ বলের দখল থেকে শুরু করে গোল লক্ষ্য করে শট, সবই বেশি ছিল পিএসজি-র। কিন্তু কাজের কাজটাই করতে পারেননি আশরফ হাকিমি, উসমান দেম্বেলেরা।
খেলার শেষ দিকে চেলসির কুকুরেয়াকে চুল টেনে ফেলা দেওয়ায় লাল কার্ড দেখেন পিএসজি-র জোয়াও নেভেস। তখন থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। খেলা শেষে পেদ্রো গিয়ে এনরিকের সামনে উল্লাস শুরু করলে আর মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। পেদ্রোকে চড় মারেন এনরিকে। চেলসির ফুটবলার মাটিতে পড়ে যান। সতীর্থকে চড় খেতে দেখে চেলসির বাকি ফুটবলারেরা সেখানে চলে আসেন। দু’দলের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। জড়িয়ে পড়েন চেলসির কোচ মারেসকাও। এনরিকেকে সামলানো যাচ্ছিল না। বেশ কিছু ক্ষণ ধরে এই বিবাদ চলে।
আরও পড়ুন:
যে ভাবে এনরিকে ফুটবলারদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সেরার তকমা নিয়ে নামার পর হেরে যাওয়ায় নিজেকে সামলাতে পারেননি এনরিকে। তিনি ভাবতে পারেননি যে চেলসির মতো তারকাহীন দল পিএসজি-কে হারিয়ে দেবে। তবে তাঁর মতো অভিজ্ঞ কোচের উচিত ছিল সংযম ধরে রাখা। এই কাজের জন্য ফিফা-র শাস্তির মুখেও পড়তে পারেন এনরিকে।
এই বিবাদের পরেও অবশ্য উল্লাস থামেনি চেলসির। প্রায় ৮২ হাজার দর্শকের সামনে ট্রফি তোলেন তাঁরা। উপস্থিত ছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বার ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছিল পেপ গুয়ার্জিওলার ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। আরও এক বার বিশ্বের সেরা ক্লাবের তকমা পেল প্রিমিয়ার লিগেরই এক দল।