Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Mohammad Siraj

বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় হোটেলের ঘরে নিজেকে বন্দি করে ফেলেছিলেন মহম্মদ সিরাজ

বিরাট কোহালি ও রবি শাস্ত্রী তাঁকে খারাপ খবরটা দিয়েছিলেন। স্তম্ভিত সিরাজ হোটেলের ঘরে নিজেকে বন্দি করে ফেলেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয় প্রয়াত বাবাকে উৎসর্গ করলেন সিরাজ। ফাইল চিত্র।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয় প্রয়াত বাবাকে উৎসর্গ করলেন সিরাজ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:০২
Share: Save:

ভারতীয় দল তখন অস্ট্রেলিয়ায়। তার মধ্যেই মহম্মদ সিরাজ বাবার মৃত্যুসংবাদ পান। বিরাট কোহালিরবি শাস্ত্রী তাঁকে খারাপ খবরটা দিয়েছিলেন। স্তম্ভিত সিরাজ হোটেলের ঘরে নিজেকে বন্দি করে ফেলেন।

গত ২০ নভেম্বরের পর থেকে ওঁর জীবন অনেকটা বদলে গিয়েছে। বাবার মৃত্যু ওঁকে করে তুলেছে আরও ইস্পাত কঠিন। সেই দিনটার কথা মনে পড়লে সিরাজ এখনও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বলছিলেন, “বিরাট ভাই ও রবি স্যার খবরটা দিয়েছিল। শুনেই স্তম্ভিত হয়ে যাই। কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হোটেলের ঘরে বন্ধ করে রেখেছিলাম। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি তো পাগলের মতো কান্নাকাটি করছিলাম। ঠিক তখন বিরাট ভাই, রাহানে ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে। ওরাই আমাকে আগলে রাখে। রবি স্যার বলেছিলেন, ‘বাবার জন্য তোমাকে খেলতে হবে।’ এরপরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশে ফিরব না। বরং দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে সর্বস্ব উজাড় করে দেব।”

গত অগস্টে আইপিএল খেলার জন্য মহম্মদ সিরাজ যখন ঘর ছাড়েন, তখনও মহম্মদ ঘাউস বেঁচে। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যখন পা রাখেন, তখনও জীবিত রয়েছেন ওঁর বাবা। কিন্তু গত ২০ নভেম্বর সব হিসেবনিকেশ হঠাৎ বদলে যায়। ছেলে টেস্ট ক্রিকেটার হবে, এই স্বপ্নটাই তো দেখেছিলেন সিরাজের বাবা। তবে ছোট ছেলের স্বপ্ন পূরণ হওয়াটা দেখে যেতে পারলেন না। তাই তো অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ফলে টেস্ট সিরিজ হারিয়ে হায়দরাবাদে পা রেখেই সিরাজের গন্তব্য হয়েছিল কবরস্থান, যেখানে শান্তিতে চিরঘুমে আচ্ছন্ন ওঁর ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’।

বাবার প্রসঙ্গে উঠতেই বলছিলেন, “আব্বু বরাবর বলতেন, ‘বাবু তোকে একদিন অনেক বড় হতে হবে। দেশের জন্য খেলতেই হবে।’ আমি আইপিএল, ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা ভারত এ দলের হয়ে খেলতে গেলেই আব্বু খবরের কাগজ আনতেন। তারপর ঘরে ফিরলেই জড়িয়ে ধরে আমাকে আদরে ভরিয়ে দিতেন। বাবার ওই ভালবাসা, স্নেহ খুব মিস করছি।”

২০০৬ সালে একটা রঞ্জি ট্রফি ম্যাচ খেলার সময় বিরাট ওঁর বাবাকে হারিয়েছিলেন। তাই সিরাজের মনের কষ্ট অনেকটাই বোঝেন। অধিনায়কের সেই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়েছেন এই তরুণ পেসার। দলের প্রথম সারির জোরে বোলাররা চোটের তালিকায় নাম লেখালেও সিরাজ ঘাবড়ে যাননি। তাই তো ৩ টেস্টে ইতিমধ্যেই ১৩টা উইকেট দখল করেছেন। এরমধ্যে আবার ব্রিসবেন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৩ রানে ৫ উইকেট। দেশের হয়ে টেস্ট খেলার প্রসঙ্গ উঠতেই ওঁর প্রতিক্রিয়া, “অনেক বছর ধরে এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। বিরাট, অজিঙ্ক, বুমরা, জাডেজাদের মতো তারকাদের সঙ্গে খেলা সৌভাগ্যের ব্যাপার।”

ব্রিসবেন টেস্টের শেষ বেলায় ঋষভ পন্থের সেই উইনিং কভার ড্রাইভটা বাউন্ডারি পেরোতেই মাঠে ঢুকে পড়েন সিরাজ। পন্থকে জড়িয়ে সেলিব্রেশন করার পরেই হাতে তুলে নেন একটি উইকেট। জয়ের স্মারক হিসেবে। কারণটাও স্বাভাবিক। অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অল আউটের পর এভাবে কামব্যাক। শুধু ৩২ বছর পর ব্রিসবেন টেস্ট জয় নয়, একইসঙ্গে সিরিজ জয়।

একেবারে শেষে যোগ করলেন, “পন্থ চার মারার পর আনন্দ অবশ্যই হচ্ছিল। ওকে জড়িয়েও ধরলাম। কিছুক্ষণ চিৎকার করা ও লাফানোর পর আমার মাথা পুরো শুন্য হয়ে যায়। কীভাবে যে সেলিব্রেশন করব, বুঝতেই পারছিলাম না। ওই সময়ের কথা ভাবলেই এখনও মনে হয় আকাশে ভাসছি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE