Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Antarctica

গবেষণার জন্য আন্টার্কটিকায় যাদবপুরের প্রাক্তনী

১৯৮৩ সালে প্রথম বার আন্টার্কটিকা অভিযানে যান সুদীপ্তা। জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার চাকরি ছেড়ে তার কিছু দিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন তিনি।

অভিযাত্রী: গবেষণা করতে আন্টার্কটিকায় সুদীপ্তা সেনগুপ্ত (বাঁ দিকে) এবং নীলাঞ্জনা সরকার।

অভিযাত্রী: গবেষণা করতে আন্টার্কটিকায় সুদীপ্তা সেনগুপ্ত (বাঁ দিকে) এবং নীলাঞ্জনা সরকার।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:০৭
Share: Save:

‘‘ম্যামের জন্যই আমার জিয়োলজি পড়া। ওঁর অনুপ্রেরণাতেই পৌঁছতে পেরেছি আন্টার্কটিকায়।’’ —বলছিলেন নীলাঞ্জনা সরকার। তিরুঅনন্তপুরমের ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্স স্টাডিজ-এর গবেষক নীলাঞ্জনা মাসখানেক আগেই ফিরেছেন আন্টার্কটিকা থেকে। যাঁর সম্পর্কে নীলাঞ্জনা এমন কথা বলছিলেন, তিনি সুদীপ্তা সেনগুপ্ত। ভারতের আন্টার্কটিকা অভিযানের দলে অন্যতম মহিলা সদস্য ছিলেন তিনি। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্রী ছিলেন নীলাঞ্জনা। ছাত্রীর আন্টার্কটিকা অভিজ্ঞতার কথা শুনে উচ্ছ্বসিত সুদীপ্তাও। বলছেন, ‘‘আমার আবার যেতে ইচ্ছে করছে!’’

১৯৮৩ সালে প্রথম বার আন্টার্কটিকা অভিযানে যান সুদীপ্তা। জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার চাকরি ছেড়ে তার কিছু দিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন তিনি। সেটা ছিল ভারতের তৃতীয় আন্টার্কটিকা অভিযান। ১৯৮৯ সালের নবম আন্টার্কটিকা অভিযানেও গিয়েছিলেন সুদীপ্তা। গত ডিসেম্বরে ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্স স্টাডিজের একটি গবেষক দল আন্টার্কটিকায় ভারতের ৩৯তম অভিযানে অংশ নেয়। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন নীলাঞ্জনা। ফিরেছেন জানুয়ারির শেষে।

নীলাঞ্জনা জানালেন, গোয়া থেকে বিমানে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে বিমানে আন্টার্কটিকায় ভারতের মৈত্রী স্টেশনে। মৈত্রী স্টেশনের কাছে নোভো এয়ারবেস থেকে ফের বিমানে পৌঁছন ভারতী স্টেশনে। ওই স্টেশনেই রয়েছে প্রোগ্রেস এয়ারবেস। নীলাঞ্জনা জানান, আন্টার্কটিকার পাহাড়ি অঞ্চলের শিলা নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁরা। ভারতের পূর্বঘাট পর্বতমালার সঙ্গে আন্টার্কটিকার এলিজ়াবেথ ল্যান্ডের মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা জানাই এই গবেষণার উদ্দেশ্য। নীলাঞ্জনা বলেন, ‘‘৯০ কোটি বছর আগে আন্টার্কটিকা আর ভারত একসঙ্গেই ছিল বলা হয়। গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণ করা যায় কি না, সেটাই আমরা দেখছি।’’

এই গবেষণার জন্য সেখানকার শিলার নমুনা সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। চারদিকে বরফ, সঙ্গে তীব্র হাওয়া— তার মধ্যেই দেড় মাস ধরে পাথর সংগ্রহ করেছেন। নীলাঞ্জনা জানাচ্ছেন, গবেষণার জন্য আন্টার্কটিকার বিভিন্ন ছোট ছোট দ্বীপগুলিতে যেতে ভরসা ছিল হেলিকপ্টার। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকার পূর্বাভাস থাকলে সে দিন হেলিকপ্টার উড়ত না। কাজের জন্য চড়তে হয়েছে স্নো-স্কুটারে। এমনকি, ফেরার সময়ে আবহাওয়া ভাল না থাকায় বিমানের জন্য ভারতী স্টেশনে চার দিন অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। তবে দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল হওয়ায় কাজে কিছুটা সুবিধা হয়েছে বলে জানান নীলাঞ্জনা। তাঁদের সংগ্রহ করা পাথর জাহাজে করে আনা হচ্ছে ভারতে।

সুদীপ্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের সময়ে আন্টার্কটিকা পর্যন্ত বিমান পরিষেবা ব্যয়বহুল হওয়ায় তাতে ভারতীয় অভিযাত্রীরা যেতেন না। গোয়া থেকে পুরো রাস্তাই তাঁরা গিয়েছিলেন জাহাজে। দলে ছিলেন গবেষক, পাইলট এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারেরা। কুইন মড ল্যান্ড অঞ্চলে তাঁরা তৈরি করেন দক্ষিণ গঙ্গোত্রী স্টেশন। পরের বার গিয়ে সুদীপ্তারা দেখেন, দক্ষিণ গঙ্গোত্রী স্টেশনের অধিকাংশই বরফের নীচে। তখন দক্ষিণ গঙ্গোত্রী বন্ধ করে তাঁরা চলে যান মৈত্রী স্টেশনে। প্রথম বার শারমাখার পাহাড়ের মানচিত্র তৈরির কাজ করেন সুদীপ্তা। পরের অভিযানে কাজ করেন ওই পাহাড়েরই ভূতত্ত্ব নিয়ে। সুদীপ্তা বলেন, ‘‘এর পরে আমার কয়েক জন ছাত্র আন্টার্কটিকায় কাজে গিয়েছেন।এ বার নীলাঞ্জনা গিয়েছিল। খুবই ভাল লাগছে।’’

নীলাঞ্জনা জানালেন, প্রথমে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে চাইলেও পরে যে মত বদলে যাদবপুরে ভূতত্ত্ব পড়েন। তিনি বলেন, ‘‘ম্যামকে দেখেই আন্টার্কটিকা যাওয়ার ইচ্ছেটা মনে পুষে রেখেছিলাম।’’ তবে নীলাঞ্জনার বক্তব্য, ‘‘ম্যাম প্রথম আন্টার্কটিকায় যাওয়ার সময়ে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। আমার যাওয়াতেও অবাক মানুষের সংখ্যা কম নয়। আসলে মেয়ে তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Antarctica Jadavpur University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE