Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বজ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যু, সতর্ক করবে প্রযুক্তি

দেরিতে পৌঁছে এখনও স্বমূর্তি ধরেনি বর্ষা। মৌসুমি বাযু দুর্বল বলেই বাতাসে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প নেই। তার ফলে গরম বাতাস আর ঠান্ডা বাতাসের মিশ্রণ হচ্ছে বেশি। সেই জন্যই উল্লম্ব মেঘ তৈরি হচ্ছে ঘনঘন। আর সেই উল্লম্ব মেঘ যেখানে ভেঙে পড়ছে, সেখানেই বাজ পড়ছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।

ঝলসানো: শহরে এমন বজ্রপাতের ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। যা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। ফাইল চিত্র।

ঝলসানো: শহরে এমন বজ্রপাতের ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। যা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০৪:৩৫
Share: Save:

দেরিতে পৌঁছে এখনও স্বমূর্তি ধরেনি বর্ষা। মৌসুমি বাযু দুর্বল বলেই বাতাসে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প নেই। তার ফলে গরম বাতাস আর ঠান্ডা বাতাসের মিশ্রণ হচ্ছে বেশি। সেই জন্যই উল্লম্ব মেঘ তৈরি হচ্ছে ঘনঘন। আর সেই উল্লম্ব মেঘ যেখানে ভেঙে পড়ছে, সেখানেই বাজ পড়ছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।

কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের বিজ্ঞানী গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা, ‘‘মৌসুমি বায়ু জোরদার হলেই বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়বে। তাতে উল্লম্ব মেঘ তৈরির সম্ভাবনা কমবে। কমবে বজ্রপাতও।’’

রাজ্যে বজ্রপাতে প্রাণহানি যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন নবান্ন। রবিবার কলকাতায় বাজ পড়ে এক তরুণ ক্রিকেটারের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন চার জন। নবান্নের হিসেব বলছে, শুধু জুনেই বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৮ জন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নথি বলছে, ২০০৫ সালের পর থেকে প্রতি বছর ভারতে গড়ে দু’হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বজ্রপাতে। এই অবস্থায় বজ্রপাত সংক্রান্ত আগাম সতর্কতার বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে মৃত্যুহারে লাগাম টানতে চাইছে নবান্ন।

কী করবেন, কী করবেন না

• বাড়ির বাইরে থাকবেন না।

• বাড়িতে থাকলেও জানলা-দরজা বন্ধ করে দিন।

• বাইরে থাকলে বজ্রপাতের সময় দোকান বা ঘরে ঢুকে পড়ুন।

• মাঠে থাকলে হাঁটু মুড়ে নিজেকে যথাসম্ভব গুটিয়ে রাখুন। কখনও দাঁড়িয়ে থাকবেন না।

• গাড়িতে যাওয়ার সময় বাজ পড়লে সব কাচ তুলে দিন।

• গাছের তলায় দাঁড়ানো যাবে না।

• বৈদ্যুতিন সামগ্রী ব্যবহার নয়।

• বিদ্যুৎ যন্ত্রাংশের থেকে দূরে থাকুন।

কী ভাবে সেটা সম্ভব?

নবান্ন সূত্রে বলা হয়েছে, বজ্রপাতে প্রাণহানি কমানোর জন্য পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার। সেই প্রযুক্তির ব্যাপারে একটি মার্কিন সংস্থার সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তি হয়েছে আগেই। কোথায় কখন বজ্রপাত হতে পারে, ওই প্রযুক্তির সাহায্যে তা ৪০ মিনিট আগেই বলে দেওয়া যায়। ঠিক কোথায় কখন বাজ পড়বে, তার কোনও পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দেওয়া যাচ্ছে না এখনও। ওই পূর্বাভাস সকলের কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়া গেলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

৪০ মিনিট আগে পাওয়া বজ্রপাতের পূর্বাভাস সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে নবান্নের এক কর্তা মঙ্গলবার জানান। প্রশাসনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘কোন জেলার কোথায় কোথায় কখন বাজ পড়বে, তা জানলেও সেখানকার সব মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় না। বিশেষত মোবাইল প্রযুক্তিতে সকলে স্বচ্ছন্দ না-হওয়ায় প্রতিবন্ধকতা বাড়ে। মাঠে যাঁরা কৃষিকাজ করেন, তাঁদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া খুব মুশকিল।’’ এক অফিসারের বক্তব্য, পূর্বাভাস পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে জেলাশাসকদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তথ্য জেনেও বড় বড় জেলায় সময়ের সঙ্গে লড়াই করে এঁটে ওঠা সম্ভব হয় না।

আরও পড়ুন: মুহুর্মুহু বজ্রপাতের কারণ কি মাত্রাছাড়া দূষণ?

এই পরিস্থিতিতে আজ, বুধবার থেকে বৈদ্যুতিন এবং রেডিয়োর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারে নামছে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। এই কর্মসূচিতে মানুষকে জানানো হবে, বজ্রপাতের সময় কী ভাবে তাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lightning Death Monsoon Rainy Season Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE