Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
BJP

বাংলা নিয়ে জরুরি বৈঠক সপ্তাহ জুড়ে, দিল্লি যাচ্ছে গোটা রাজ্য বিজেপি

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাংলা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। ২২ জুলাই থেকে বৈঠক শুরু হচ্ছে।

আলোচ্যসূচিতে সাংগঠনিক অবস্থার পাশাপাশি ‘রাজ্যের পরিস্থিতি’ নিয়েও আলোচনা হতে পারে, মন্তব্য করছেন বিজেপি নেতারা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আলোচ্যসূচিতে সাংগঠনিক অবস্থার পাশাপাশি ‘রাজ্যের পরিস্থিতি’ নিয়েও আলোচনা হতে পারে, মন্তব্য করছেন বিজেপি নেতারা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ২৩:৪০
Share: Save:

বাংলা নিয়ে বিশেষ বৈঠকে বসছেন বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তো বটেই, বৈঠকে ডাকা হয়েছে বিজেপির বিভিন্ন জেলা কমিটির সভাপতিদের। ডাক পাচ্ছেন সাংসদরাও। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বৈঠক চলতে পারে বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। সাংগঠনিক অবস্থা শুধু নয়, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়েও বৈঠকে বিশদে কথা হবে বলে খবর।

এই বৈঠকের আগের দিনই আবার অমিত শাহের জরুরি তলবে দিল্লিতে পৌঁছেছেন মুকুল রায়। সপ্তাহব্যাপী বৈঠক শুরুর আগেই দলে বা সরকারে মুকুলের সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে অমিত শাহ কথা সেরে নিতে পারেন বলে বিজেপির একটি অংশের দাবি।

বুধবার অর্থাৎ ২২ জুলাই থেকেই দিল্লিতে বিজেপির এই বিশেষ বৈঠক শুরু হচ্ছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং বাকি পাঁচ সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে চার জন অর্থাৎ সায়ন্তন বসু, রথীন্দ্রনাথ বসু, সঞ্জয় সিংহ ও জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো যাচ্ছেন সে বৈঠকে যোগ দিতে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বাংলার দায়িত্ব যে তিন নেতার হাতে, সেই শিব প্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেননই মূলত দলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে মন্থনে বসবেন। তবে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ এবং দলের প্রাক্তন সভাপতি তথা দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এই বৈঠকে যোগ দেবেন বলে খবর দিল্লি সূত্রের। আর অমিত শাহ বৈঠকে যোগ দিলে প্রোটোকলের কারণে বর্তমান সভাপতি জে পি নড্ডা নিজেও উপস্থিত থাকবেন।

বৈঠক কিন্তু কয়েক ঘণ্টার বা এক দিনের নয়। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাংলা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। ২২ জুলাই থেকে বৈঠক শুরু হচ্ছে। ২৭ জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ ছ’দিন চলতে পারে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হতে পারে সময়সীমা। এত লম্বা বৈঠক কেন? বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা ধরে ধরে আলোচনা করতে চাইছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে জেলা সভাপতিদেরও ডাকা হচ্ছে। যখন যে জেলাকে নিয়ে আলোচনা হবে, তখন সেই জেলার সভাপতিকে বৈঠকে থাকতে হবে। থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত সাংসদদেরও। আর রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে যাঁর হাতে যে সব জেলার দায়িত্ব, সেই সব জেলাকে নিয়ে আলোচনার সময়ে তাঁকেও বৈঠকে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: বহিরাগতরা বাংলা চালাবে না, আগামী বার বৃহত্তম সভা: হুঙ্কার মমতার

বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে কিন্তু রাজ্য বিজেপির নেতারা বিশদে মুখ খোলেননি। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেছেন, ‘‘রুটিন বৈঠক। দলের কর্মপন্থা নিয়ে বিশদে আলোচনা হবে।’’ কিন্তু নয়াদিল্লি সূত্রের খবর, প্রায় সপ্তাহব্যাপী এই বৈঠক মোটেই ‘রুটিন’ নয়। বাংলায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে এখন থেকেই কোমর কষে নিতে চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই কারণেই জেলা ধরে ধরে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে লোকসভা আসনভিত্তিক ভাবে আলোচনা করা হবে। কোথায় দলের শক্তি কতটা, দুর্বলতাই বা কী কী, সব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা হবে এই বৈঠকে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।

আলোচ্যসূচিতে সাংগঠনিক অবস্থার পাশাপাশি ‘রাজ্যের পরিস্থিতি’ নিয়েও আলোচনা হতে পারে, মন্তব্য করছেন বিজেপি নেতারা। এই মন্তব্য আপাতদৃষ্টিতে যতটা নিরীহ, আসলে ততটা নয়, বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। মুরলীধর সেন লেন সূত্রেও জানা যাচ্ছে, ‘রাজ্যের পরিস্থিতি’ বলতে রাজ্যের রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথাই বোঝানো হচ্ছে। আর বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব সম্প্রতি যে রকম উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছে, তাতে এই বৈঠকে রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা হতে পারে।

আরও পড়ুন: রাজ্যে এক দিনে মৃত ৩৫, কলকাতায় আক্রান্ত ৬৫১, সংক্রমণের হার কমে ১৭.৩১%

হেমতাবাদের বিধায়কের রহস্যমৃত্যুর পরে বিজেপির প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি পেশ করে এসেছে। কেন্দ্র যদি সেই পদক্ষেপের দিকেই হাঁটে, তা হলে রাজ্যের রাজনৈতিক জল কোন খাতে গড়াতে পারে, তা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা এই বৈঠকে হবে বলে খবর। রাষ্ট্রপতি শাসনের সম্ভাবনার কথা বাংলার হাওয়ায় ভাসতে শুরু করার পরে সাধারণ জনতার মধ্যে থেকে কী রকম প্রতিক্রিয়া আসছে, সে খবরও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে নিতে পারেন দিল্লির নেতারা।

মঙ্গলবার তড়িঘড়ি মুকুল রায়ের দিল্লি যাত্রার সঙ্গে বিজেপির এই বৈঠকের কোনও সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে বলে অবশ্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না। তবে মুকুল রায়ের দায়দায়িত্ব বাড়তে চলেছে বলে বিজেপির অন্দরমহল থেকেই ইঙ্গিত মিলছে। হয় দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদে অথবা মোদী ক্যাবিনেটে মুকুলের অভিষেক হতে পারে শীঘ্রই। সে বিষয়ে কথা বলার জন্যই মুকুলকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন শাহ, বলছে বিজেপির একাংশ।

মুকুল রায়কে নিয়ে সম্প্রতি নানা জল্পনা ছড়াতে শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক শিবিরে। দলে কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাননি, মোদীর ক্যাবিনেটেও ঠাঁই মেলেনি, তাই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে যেতে চান ক্ষুব্ধ মুকুল রায়— এই ছিল জল্পনার বিষয়বস্তু। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চেই মুকুল ফিরতে পারেন তৃণমূলে, তিনি না ফিরলেও তাঁর ছেলে তথা বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু অবশ্যই ফিরছেন— এমনও রটতে শুরু করেছিল। মুকুল নিজে বার বারই বলছিলেন, ‘‘সব অপপ্রচার, আমার চরিত্র হননের চেষ্টা হচ্ছে।’’ কিন্তু তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের সঙ্গে সম্প্রতি মুকুলের দু’বার বৈঠক হওয়ায় গুঞ্জন থামানো যাচ্ছিল না। কেন হঠাৎ কুণালের সঙ্গে বৈঠক? কুণাল এখনও নিজেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ‘দুর্দিনের সৈনিক’ হিসেবেই দাবি করেন। যখন মুকুল-কুণাল দু’জনে একই দলে ছিলেন, তখনও তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’ ছিল, তা কারও অজানা নয়। এ হেন কুণালের সঙ্গে কেন দু’-দু’বার বৈঠক করলেন মুকুল? প্রশ্ন উঠছিল স্বাভাবিক কারণেই।

আরও পড়ুন: সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লকডাউন, কী কী বন্ধ কোথায় ছাড় দেখে নিন

কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘আমি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাইনি। আমার কোনও মামলার বিষয়েও কথা বলতে যাইনি। তবে আর কিছু বলব না।’’ অর্থাৎ মুকুল রায়কে তৃণমূলে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে তিনি যাননি, এমন কোনও নিশ্চয়তা কুণাল ঘোষের বয়ান থেকে মেলেনি। মুকুল রায় অবশ্য পাল্টা বলেছিলেন, ‘‘আমি কুণাল ঘোষকে ডাকিনি।’’ সব মিলিয়ে ধোঁয়াশা কাটছিল না কিছুতেই। কেটে গেল ২১ জুলাইয়ের সকালে। কালীঘাটের দিকে মুকুল তো গেলেনই না, উল্টে কলকাতা ছেড়ে দুপুরের উড়ানে পাড়ি দিলেন দিল্লি।

এ দিন সকালেই জানা যায় যে, মুকুল রায় দিল্লি থেকে ‘জরুরি তলব’ পেয়েছেন। তলব করেছেন বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মুকুল যে সে ডাকে সাড়া দিয়ে দিল্লিই যাচ্ছেন এবং দিল্লি না গেলেও যে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে হাজির হয়ে তৃণমূলে ফেরার কোনও ভাবনা তাঁর বিন্দুমাত্র ছিল না, সে কথা জোর দিয়ে জানাতে থাকে প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল। তবে অমিত শাহ ঠিক কী কারণে মুকুলকে ডাকলেন, কী নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা হবে, সে বিষয়ে মুকুল ঘনিষ্ঠরা কিছু জানাতে পারেননি। নয়াদিল্লি সূত্রের দাবি, বাংলায় নিজের ঘর আর একটুও অগোছালো রাখতে চায় না বিজেপি। প্রায় সপ্তাহব্যাপী বৈঠক করার অন্যতম মূল লক্ষ্যও সেটাই। তাই মুকুলে যদি কোনও ক্ষোভ বাড়তেই থাকে, তা হলে জরুরি বৈঠকটা শুরু আগেই সে ক্ষোভকে প্রশমিত করার ব্যবস্থা অমিত শাহ করে ফেললেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE