প্রণাম: বড়মার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ার কথা পেল্লায় ছবিটার দিকে। তিনি তাকালেন কিনা বোঝা গেল না। তবে কেউ কেউ জানালেন, প্রধানমন্ত্রী বড়মার ঘরে ঢুকবেন জেনে শুক্রবারই নাকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রেখে আসা হয়েছিল বড়মার তক্তপোষের ঠিক পিছনে।
শনিবার বেলা তখন সওয়া ১২টা। হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে প্রণাম সেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢুকলেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি দেবীর (বড়মা) ঘরে। দরজা থেকে তাঁকে ভিতরে নিয়ে গেলেন বড়মার ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। স্মিত হেসে বড়মার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম সারলেন মোদী। জানতে চাইলেন, ‘‘মা, আপনার শরীর কেমন?’’
বড়মার মুখ ভাবলেশহীন। হিন্দি বোঝেন না বৃদ্ধা। ঠাকুরবাড়ির একটি সূত্র জানাচ্ছে, সে সময়ে পাশে ছিলেন বড়মার নাতনি মধুপর্ণা। তিনি বলে উঠলেন, ‘‘তোমার শরীর কেমন আছে জানতে চাইছেন উনি।’’ ইদানীং বিশেষ কথাবার্তা বলেন না বড়মা। তার উপরে শরীরটাও ভাল যাচ্ছে না ক’দিন ধরে। বড়মার পাশে বসে মঞ্জুল বলে উঠলেন, ‘‘তোমার শরীর কেমন আছে মা? ভাল আছো?’’ মাথা নেড়ে বড়মা জানালেন, ভালই আছেন।
আরও পড়ুন: মোদী তো দুর্নীতির ঠাকুরদাদা: পাল্টা আক্রমণ শাণালেন মমতা
বিনা মন্তব্যে: মালায় লেখা ‘হরিবল’। ঠাকুরনগরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
ততক্ষণে বড়মার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ওঁর বয়স কত হল, জানতে চাইলেন মোদী। মঞ্জুল জানালেন, নিরানব্বই চলছে। আর দু’একটা কথাবার্তা হল দু’তরফে। তবে বাকি সময়টা বড়মা নীরবই ছিলেন বলে জানাচ্ছে ঠাকুরবাড়ির একটি সূত্র। মধুপর্ণা পরে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমার নামও জানতে চেয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: মেদিনীপুরের পর ঠাকুরনগরেও চরম বিশৃঙ্খলা, মোদীর সভায় আহত কয়েক জন
মিনিট তিনেকের আলাপচারিতা সেরে ঘর থেকে বেরোলেন মোদী। বিজেপি শিবিরে তখন জয়ের হাসি।
বড়মার শরীর ভাল নয়, কয়েক দিন ধরেই জানিয়ে আসছিলেন তৃণমূল নেতানেত্রীরা। বিএমওএইচের নেতৃত্বে চিকিৎসকেরা দেখে গিয়েছেন তাঁকে। বড়মার বড় বৌমা, তথা বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুর দু’দিন আগেই জানিয়েছিলেন, মায়ের ঠান্ডা লেগে বুকে কফ বসেছে। জ্বর জ্বর ভাব। সে সময়ে বড়মার ছোট নাতি শান্তনু ঠাকুরের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ছিল, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাতে বড়মার দেখা না হয়, এ সব তারই চক্রান্ত।
বড়মাকে নিয়ে এমন কাড়াকাড়ি এর আগেও ঢের দেখেছে ঠাকুরবাড়ি। এ দিন মোদী-বড়মার মুখোমুখি হওয়াকে আমল দিতে চাইছে না তৃণমূল শিবির। দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বড়মার সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। তবে এতে বিজেপির কোনও লাভ হবে না। বড়মার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মা-মেয়ের সম্পর্ক।’’
কিন্তু বড়মার ঘরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি কি গতকালই বসল? ‘‘না তো, ছবি আগে থেকেই ছিল’’— দাবি করছেন আর এক মমতা, বড়মার পুত্রবধূ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy