Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাজীব চোর? আমি চোর? পুলিশের উপর রাজনৈতিক আক্রমণ হলে ছাড়ব না: মমতা

রাজীব কুমারের বাড়িতে রবিবার সন্ধ্যায় সিবিআই অফিসাররা আচমকা হাজির হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিকে কেন্দ্রের সঙ্গে তীব্র সংঘাতের স্তরে নিয়ে গিয়েছেন।

অন্যান্য রাজ্যের পুলিশের প্রতিও তাঁর সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন মমতা। ছবি: এপি।

অন্যান্য রাজ্যের পুলিশের প্রতিও তাঁর সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন মমতা। ছবি: এপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪০
Share: Save:

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে রবিবার তিনি ‘বিশ্বের অন্যতম সেরা অফিসার’ বলেছিলেন। সোমবার সমগ্র পুলিশ বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমি আমার পুলিশ নিয়ে গর্বিত। আমার এখানে পুলিশ যে কোনও রাজ্য এবং দেশের প্রেক্ষিতে সম্পদ।’’

রাজীব কুমারের বাড়িতে রবিবার সন্ধ্যায় সিবিআই অফিসাররা আচমকা হাজির হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিকে কেন্দ্রের সঙ্গে তীব্র সংঘাতের স্তরে নিয়ে গিয়েছেন। পথে নেমে শুরু করেছেন ধর্না। আর এ দিন শুধু নির্দিষ্ট কোনও অফিসার নন, রাজ্যের পুলিশ বাহিনী এমনকী অন্যান্য রাজ্যের পুলিশের প্রতিও তাঁর সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন মমতা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, তাঁর এই ধর্নায় দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র ‘রক্ষা’র ডাক দিয়ে তিনি কৌশলে দেশের পুলিশ-প্রশাসন এবং অফিসারদের মধ্যেও একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চান। যার মূল কথা, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের উপর ‘অন্যায় চাপ’ তৈরি করতে চাইছেন।

এ দিন পুলিশের পদক প্রদান অনুষ্ঠান হয় ধর্মতলায় ধর্নামঞ্চের পাশে। আলিপুরের উত্তীর্ণ থেকে এই অনুষ্ঠান রাজপথে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্তও মুখ্যমন্ত্রীরই মস্তিষ্কপ্রসূত। কারণ, তিনি বাহিনীর অফিসার ও কর্মীদের সামনে সরাসরি ‘পাশে থাকা’র বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। মমতা বলেন, ‘‘যারা প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করে একজন অফিসারকে আর এক অফিসারের দিকে লেলিয়ে দেয় রাজনৈতিক কারণে, তাদের উপর আমার রাগ আছে। রাজনৈতিক কারণে এদের উপর আক্রমণ হলে আমি ছেড়ে কথা বলব না।আমার লড়াই সমগ্র বাহিনীর জন্য। আমাদের বাহিনী যেন ভাল থাকে।’’

আরও পড়ুন: মমতাকে রাস্তার লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনা খুব বড় ভুল হল না তো? চিন্তায় বিজেপি

রাজীব কুমারের প্রসঙ্গে ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রী আরও একবার বলেন, ‘‘তাঁরা (পুলিশ অফিসার) যদি অসম্মানিত হন, কোনও দোষ না থাকলেও দোষী সাব্যস্ত হন, কোনও কাগজ-প্রমাণ ছাড়াই তাঁদের বাড়িতে চলে গিয়ে গ্রেফতার করতে চায়, যদি ভাবে আমি দিল্লিতে আছি বড় নেতা, তবে তার প্রতিবাদ করতেই হবে।’’এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজীব কুমার চোর? আমি চোর? কার টাকা নিয়েছি? কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এ সব বললে আমি নিশ্চয়ই আমার অফিসারের পাশে দাঁড়াব।’’

কয়েক দিন আগে তৃণমূলের দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র হিসাব-সংক্রান্ত খোঁজখবর নিতে মমতার বাড়ির অফিস-সচিব মানিক মজুমদারের বাড়িতে গিয়েছিল সিবিআই। রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই যাওয়ার সঙ্গে সেই প্রসঙ্গও যুক্ত করে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার অফিসে যে মানুষটা জীবনে এক কাপ চা খায়নি কারও কাছ থেকে, আমার সব চেয়ে প্রিয় মানুষ। তাঁকেও ডেকেছে।আমার দলের অনেককে গ্রেফতার করেছে। তাতেও কিছু বলিনি। কিন্তু রাজীব, জ্ঞানবন্তের (সিংহ, এখন বিধাননগর পুলিশের কমিশনার)একটা চেয়ার আছে। এটা ছেড়ে দেওয়া যায় না। কাল সুরজিৎ (করপুরকায়স্থ, নিরাপত্তা উপদেষ্টা), রাজীবরা বলেছিল, আপনার আসার দরকার নেই। আমরা আইনে কী আছে দেখে নিচ্ছি। আপনাকে কষ্ট করে আসতে হবে না। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় আমি রাজীবের বাড়িতে গিয়েছি।’’

এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি চিরকাল যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে কাজ করেছি। কী করবে? ৩৫৫, ৩৫৬ দেবে? আমার কাছে ১৪৪ ধারা আছে। নো-এন্ট্রি বোর্ড লাগিয়ে দেব। আর যারা বলে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নেই, তাদের মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দেওয়া দরকার।’’

তাঁর ধর্নামঞ্চে পুলিশ অফিসারদের আসা নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তারও জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা অরাজনৈতিক মঞ্চ। আমরা জনপ্রতিনিধি। জনপ্রতিনিধিরাই সরকার চালাই। ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সরকারের লোকও এই মঞ্চে আসতেই পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI vs Kolkata Police Mamata Banerjee Rajiv Kumar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE