তখনও বেঁচে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে বিজেপি সমর্থক দামোদর মণ্ডল। ছবি: সুজিত মাহাতো।
ইসলামপুরের পরে এ বার গোপালপুর। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে উত্তরবঙ্গে আবার চলল গুলি-বোমা। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের পণ্ডিতপোতায় শনিবার মারা গিয়েছিলেন এক জন। সোমবার মালদহের গোপালপুরে বেঘোরে প্রাণ গেল দু’জনের। তাঁদের নাম সালেম শেখ (৪০) ও আজাহার শেখ (৭০)। সালেমের বাড়ি গোপালপুরেরই উত্তর হুকুমতটোলায়, আজহারের সহবতটোলায়। বছর তিনেকের শিশু জিশান শেখ সহ অন্তত ৫ জন জখমও হয়েছেন। তাঁদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মানিকচক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
নিহত ও আহতদের কেউই কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন বলেই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বোমা-গুলির লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। সালেম ভিন রাজ্যে কাজ করেন। ইদের মুখে বাড়ি ফিরেছিলেন। আজহারও এক সময় ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, রবিবার রাত থেকে গঙ্গার ধারের গোপালপুর পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছররা গুলি আর হাত বোমার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। ভোর থেকে হুকুমতটোলা, কালীটোলা, বালুটোলা প্রভৃতি গ্রামে শুরু হয় বোমাবাজি। সেই শব্দ শুনে গ্রামের অনেকে সেখানে গিয়েছিলেন। আজহার বেরিয়েছিলেন বাজার করতে। সেই সময় বোমা-গুলির লড়াই শুরু হলে পালাতে গিয়ে তাঁদের গায়ে গুলি লাগে। সালেম, আজহারের মাথার পিছনে গুলি লেগেছে। জিশান ঘুম থেকে উঠে বোমার আওয়াজে ঘরের বাইরে দাঁড়ালে বোমার স্প্লিন্টারে আহত হয়। তারও মাথায় লেগেছে। জখম সহবতটোলার প্রবীণ মনিরুদ্দিন শেখ, যুবক ইসব আলি ও উমর ফারুক, হুকুমতটোলার রোজিনা বিবিও।
এই গ্রাম পঞ্চায়েতের উল্টো দিকেই ঝাড়খণ্ড। পঞ্চায়েত ভোট থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। পঞ্চায়েতের মোট আসন ১০। কংগ্রেস ও তৃণমূল দুই পক্ষই পেয়েছে ৫টি করে। তৃণমূল সূত্রেই খবর, জেলা স্তরের দুই নেতার অনুগামী দু’টি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বেই বোর্ড গঠনের মুখে গোপালপুরে উত্তেজনা বাড়ে। যদিও তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই। স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। ভিন্ রাজ্য থেকে দুষ্কৃতীদের এনে গোলমাল পাকানো হচ্ছে।’’ মানিকচকের কংগ্রেসের বিধায়ক মোত্তাকিন আলমের বক্তব্য, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঢাকতে তৃণমূল ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।’’
আরও পড়ুন: বোর্ড গঠন ঘিরে গুলি-বোমা পুরুলিয়ায়, হত বিজেপির দুই সমর্থক
বিরোধীদের দাবি, সোমবার গন্ডগোলের সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। পুলিশ অবশ্য সেই অভিযোগ মানতে নারাজ। পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেছেন, ‘‘পুলিশই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তদন্ত হচ্ছে।’’
গোপালপুরে বোমাবাজিতে জখম খুদে। মায়ের সঙ্গে মালদহ মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র।
বেলা ১১টা থেকে পুলিশি ঘেরাটোপে চলে বোর্ড গঠন। ১০ জন সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলেরই সীমা বিবি ও মমতাজ বিবি যথাক্রমে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তৃণমূলের কার্যকরী জেলা সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এই গোলমালে দলের দ্বন্দ্বের কোনও ভূমিকা নেই। না হলে কি ১০ জনের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠন করা যেত?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy